সেমিফাইনালে হেরে হতাশ অস্ট্রেলিয়া। ছবি: এএফপি।
ক্রিকেটের মাঠে লড়াইটা ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ড্র হওয়ার জো ছিল না। সমানে সমানে লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি ইংল্যান্ডের মেয়েদের মুখেই। মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপে বুধবার অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড। প্রথম বার ফাইনালে পৌঁছে গেল তারা।
ছেলেদের ক্রিকেটে এই দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়কে অ্যাশেজ় বলা হয়। মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে এর আগে কখনও অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড খেলেনি। সেমিফাইনালে তাই দুই দলের কাছেই জয়ের তাগিদটা কয়েক বেড়ে গিয়েছিল। বুধবারের ম্যাচে যদিও শুরু থেকেই দাপট দেখান ইংল্যান্ডের মেয়েরা। ‘মাটিলদা’দের (অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ফুটবল দলকে এই নামে ডাকা হয়।) বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। খেলার শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার পরেই ইংল্যান্ড খেলার রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। ৩৬ মিনিটে গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন দলের ১০ নম্বর এলা টুনে। বাঁদিক থেকে বলটি টুনের কাছে পাঠান লরেন হেম্প। গোলের ১০ গজের মধ্যে থাকা টুনে দেরি করেননি। বলটি ধরেই দ্বিতীয় পোস্টে জোরালো শট নেন। গোলরক্ষকের পক্ষে সেই বল আটকানো সম্ভব হয়নি।
এক গোলে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। অধিনায়ক স্যাম কের নিজের কাঁধে সেই দায়িত্ব তুলে নেন। তিনি খেলবেন কি না তা ম্যাচের আগে পরিষ্কার করে বলেননি অস্ট্রেলিয়ার কোচ টনি গুস্তাভসন। যিনি আমেরিকার মেয়েদের দলের সহকারী কোচ হিসাবে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসাবে যদিও সেটা পাওয়া হল না। ম্যাচের আগের দিন গুস্তাভসন বলেছিলেন, “পায়ের পেশিতে চোট রয়েছে কেরের। সেই কারণেই বুঝতে পারছি না ও কত ক্ষণ খেলতে পারবে।” কের যদিও প্রথম একাদশেই ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পুরো ম্যাচটাই খেললেন সে দেশের সব থেকে বেশি গোল করা স্ট্রাইকার। গোলও করলেন। ৬৩ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে বল তুলে এনে দুই ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের উপর নিয়ে পরাস্ত করলেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ম্যারি আর্পসকে। ইংরেজ গোলরক্ষকের বিরুদ্ধে ১০টি গোল করে ফেললেন কের।
কের ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার গোল করার লোক ছিল না। সেই অভাবেই ভুগল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের শেষ সময় কেরের সামনে আবার গোল করার সুযোগ এসে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি বলটি গোলের মধ্যে রাখতেই পারলেন না।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এ বারের বিশ্বকাপ প্রথম দিন থেকেই নজর কেড়ে নিয়েছিল সমর্থকদের জন্য। মাঠে যে পরিমাণ ফুটবলপ্রেমী দর্শক খেলা দেখতে আসছিলেন তা অবাক করে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। সেমিফাইনালেও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখার জন্য মাঠ ভরিয়ে এসেছিলেন সমর্থকেরা। হলুদ গ্যালারির চিৎকারে স্টেডিয়ামে কান পাতা দায়। সেই সমস্ত চিৎকার মুহূর্তে চুপ হয়ে যায় ৭১ মিনিটে। ইংল্যান্ডের লরেন হেম্প দলের দ্বিতীয় গোলটি করার সঙ্গে সঙ্গে গোটা স্টেডিয়ামে নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
হেম্পের গোল ফাইনালে যাওয়ার পথ কিছুটা সহজ করে দেয় ইংল্যান্ডের জন্য। ৮৬ মিনিটে অ্যালেসিয়া রুসো ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশায় জল ঢেলে দেন। যে লড়াইটা কেররা গত এক মাস ধরে করছিলেন, তা এই একটি ম্যাচে হারের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল। কের বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে আরও এক বার ক্যাথি ফ্রিম্যানের মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে দিতে চান। অলিম্পিক্সের সোনাজয়ী দৌড়বিদ অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রীড়াজগতের অন্যতম বড় নাম। বুধবার অস্ট্রেলিয়াকে জেতাতে না পারলেও কেরের দৌড় ফ্রিম্যানকে মনে করিয়ে দিতেই পারে। মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে শুরু করেন তিনি। ৩০ মিটার দূর থেকে শট নিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন কের।
কিন্তু সেই গোল অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিতে পারেনি। ইংল্যান্ড দলগত ভাবে বিপক্ষের থেকে এগিয়ে ছিল। একা কেরের পক্ষে সম্ভব ছিল না অস্ট্রেলিয়াকে জেতানো। তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ফাইনালে পৌঁছে গেল ইংল্যান্ড। এ বার সামনে স্পেন। রবিবার সেই ম্যাচ খেলবে দুই দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy