উন্মাদনা: ডার্বি কলকাতায় নয়, গোয়ায়। তবু দর্শকদের এই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় খামতি হবে না। ফাইল চিত্র।
শনিবার মরসুমের প্রথম ডার্বি। এ বছর আবার এই মহারণের শতবর্ষও। তাই শুটিং, ডাবিংয়ের ব্যস্ততার মধ্যেও মন পড়ে থাকছে আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম এটিকে-মোহনবাগানের দ্বৈরথে।
আমার পুরো পরিবারই লাল-হলুদের সমর্থক। কাকা ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য। বলা যেতে পারে আমার রক্তে লাল-হলুদ! আমার শৈশব কেটেছে সল্টলেকে। ডার্বির দিন আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েই দুই প্রধানের সমর্থকদের দেখতাম পতাকা নিয়ে প্রিয় তারকাদের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে ম্যাটাডোতে করে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের দিকে যাচ্ছেন। লাল-হলুদ রংটা দেখলেই রক্ত যেন গরম হয়ে যেত।
এখনও সেই অনুভূতি হয়। কাকা বলতেন, লাল-হলুদ জার্সিতে নাকি জাদু রয়েছে। গায়ে পরলেই মানুষ বদলে যায়। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, আমার নিজেরও একটা লাল-হলুদ জার্সি থাকবে। সেই সময় বড়দের কাছে রীতিমতো বায়নাও করতাম একটা জার্সি কিনে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীকালে প্রিয় ক্লাবের জার্সি উপহার হিসাবে পেয়েছি। আমার বাড়িতে এখন তা যত্নের সঙ্গে রাখা আছে। লাল-হলুদ জার্সি যে অনেক পরিশ্রম করে অর্জন করতে হয়, ছোটবেলায় বুঝতাম না।
কাকার সঙ্গেই প্রথম বার ডার্বি দেখতে গিয়েছিলাম যুবভারতীতে। ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম দুই প্রিয় ফুটবলার কৃশানু দে ও বিকাশ পাঁজির। খবরের কাগজ কেটে আমার পড়ার ঘরের দেওয়ালে ওঁদের ছবি লাগিয়ে রেখেছিলাম।
ডার্বির দিন যত এগিয়ে আসত, তত আমার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ত। পত্রপত্রিকায় দুই প্রধানকে নিয়ে লেখাগুলি মন দিয়ে পড়তাম। অবশ্য এর আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল। ডার্বির সময় স্কুলে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে পরিষ্কার দু’টো ভাগ হয়ে যেত। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলি থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতাম তর্ক করার জন্য। মাঠের ভিতরে হোক বা বাইরে, ইস্টবেঙ্গল হারতে পারে না। যে ভাবেই হোক মোহনবাগানকে হারাতে হবে। এটাই ছিল আমাদের মানসিকতা।
অভিনয় জগতে এসেও উপলব্ধি করলাম, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানকে নিয়ে বাঙালির আবেগর স্রোত কতটা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সর্বস্তরের মানুষকে। আমাদের অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মধ্যে দুই প্রধানের প্রচুর সমর্থক রয়েছেন। ডার্বি মানে জমজমাট লড়াই আমাদের জগতেও। ম্যাচের কয়েক দিন আগে থেকেই টিপ্পনি কাটা শুরু হয়ে যায়। ফিল্মের সংলাপ ছাপিয়ে ধ্বনিত হয় জয়ী দলের সমর্থকদের উল্লাস। তবে আবহ বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করলে আমরা নিজেরাই পরিস্থিতি সামলে নিই।
গত মরসুমে আমাকেও নানা ধরনের বিদ্রুপ শুনতে হয়েছিল। অভিষেকের আইএসএলে আমাদের প্রথম ম্যাচটাই ছিল এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ০-২ হেরেছিলাম আমরা। ওদের গোল করেছিল রয় কৃষ্ণ আর মনবীর সিংহ। মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম এই বলে যে, প্রস্তুতি নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পায়নি বলেই এই ফল হয়েছে। পরের ডার্বিতেই জবাব দেব। দ্বিতীয় পর্বের ফল আরও মারাত্মক হল। ১-৩ হেরে গেলাম আমরা। আবারও গোল করল কৃষ্ণ। এ বার কিন্তু কোনও মতেই ওকে গোল করতে দেওয়া চলবে না। কৃষ্ণের রথ থামাতেই হবে। শতবর্ষের আবহে গত বার এগারো দলের আইএসএলে আমরা শেষ করেছিলাম নবম স্থানে।কষ্ট হয়েছিল। রাগ হয়েছিল। কিন্তু লাল-হলুদ সমর্থক হিসাবে মনে করি, দলটাকে একটু সময় দেওয়া উচিত। প্রকৃত সমর্থকরা সব সময় দলের পাশেই থাকেন। এর পাশাপাশি আরও অনেক সমর্থকের মতো আমিও চাইব, এ বারে ভাল ফল নিয়ে শেষ করুক আমাদের প্রিয় ক্লাব। আর সব চেয়ে বড় কথা, শনিবারে জিতুক।
শুনছিলাম, এ বার নতুন ভাবে দল সাজিয়েছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ছয় বিদেশির সকলেই নতুন। এঁদের মধ্যে আমার সব চেয়ে বেশি আগ্রহ ড্যানিয়েল চিমাকে নিয়ে। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চিমা ওকোরির বিধ্বংসী ফুটবল দেখে বড় হয়েছি। নতুন চিমাকে নিয়ে তাই সব লাল-হলুদ সমর্থকেরই প্রত্যাশা থাকবে। প্রথম ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী ছিলাম। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ১৭ মিনিটে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারিনি আমরা। শুনলাম, আমাদের নতুন চিমা নাকি নজর কাড়তে পারেনি। অবশ্য প্রথম ম্যাচে এ রকম হতেই পারে। নতুন দলে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই। আমি কিন্তু ফের ‘চিমা-চিমা’ জয়ধ্বনি তোলার অপেক্ষায় রয়েছি।
চিমা না পারলেও অভিষেকেই লাল-হলুদ সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছে আর এক স্ট্রাইকার আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ। মস্তিষ্ক দিয়ে ফুটবলটা খেলে। অনায়াসে বিপক্ষের দু’-তিন জনকে কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। পেরোসেভিচ-চিমাদের আগ্রাসনে শনিবারের মহারণে নৌকাডুবি ঘটাতেই হবে। আবার জ্বালিয়ে তুলতে হবে মশাল।
ডার্বির আগে এখনও কয়েক দিন সময় রয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ যুব দলের প্রাক্তন কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস এ বার লাল-হলুদের দায়িত্বে। স্পেন মানেই তো আকর্ষণীয় ফুটবল, ছন্দবদ্ধ ফুটবল, জ়াভি-ইনিয়েস্তাদের তিকি-তাকার দর্শনীয় ফুটবল। আর বরাবর যে বলা হয়েছে, ইস্টবেঙ্গলের প্রধান ‘ফুটবলার’ তার সমর্থকেরা। যারা বাইরে থেকে এমন চেঁচাবে যে, ফুটবলারেরা উদ্বুদ্ধ হতে বাধ্য।
কেন, ফেডারেশন কাপের সেই বিখ্যাত ম্যাচ মনে নেই। যখন অমল ‘ডায়মন্ড’ দত্তের মোহনবাগানকে পিকে-র ইস্টবেঙ্গল চূর্ণ করল। সেই ম্যাচের আগেও ‘চুংচুং-ওমলেট’ অনেক কথাই তো বলা হয়েছিল। এ বারও বলা হচ্ছে, মোহনবাগান এগিয়ে, ইস্টবেঙ্গল সে ভাবে দল সাজাতেই পারেনি।
মাঠেই দেখা যাবে, কারা পারল, কারা পারল না। হোক না গোয়ায় ম্যাচ, হৃদয়ের লাল-হলুদ, আমাদের গর্জন তোমাদের সঙ্গে থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy