Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
East Bengal

১২ বছরের ‘বনবাস’ শেষ! ইস্টবেঙ্গলের কলিঙ্গ জয়, নন্দ, ক্লেটনদের পায়ে সুপার কাপ লাল-হলুদের

জাতীয় পর্যায়ে আবার ট্রফি এল ইস্টবেঙ্গলের ঘরে। ২০১২ সালের ফেডারেশন কাপের পর ২০২৪-এর সুপার কাপ। রবিবার ভুবনেশ্বরে সেখানকারই দল ওড়িশা এফসি-কে হারিয়ে জিতল ইস্টবেঙ্গল।

football

গোলের পর নন্দকুমার। ছবি: এক্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১০
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ৩ (নন্দকুমার, ক্রেসপো-পেনাল্টি, ক্লেটন)
ওড়িশা এফসি ২ (মৌরিসিয়ো, জাহু-পেনাল্টি)

অবশেষে মিটল ১২ বছরের খরা!

আবার জাতীয় পর্যায়ের ট্রফি জিতল ইস্টবেঙ্গল। ২০১২ সালের ফেডারেশন কাপের পর ২০২৪-এর সুপার কাপ। স্পেনের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের হাত ধরে স্বপ্ন পূরণ লাল-হলুদে। রবিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে সেখানকারই ক্লাব ওড়িশা এফসি-কে অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচে ৩-২ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতল ইস্টবেঙ্গল। প্রথমে পিছিয়ে পড়ে এবং নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষের কয়েক মুহূর্ত আগে গোল খেয়েও ঘুরে দাঁড়াল তারা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করল গোটা দল। নন্দকুমার, সাউল ক্রেসপো এবং ক্লেটন সিলভা গোল করলেন। ওড়িশার গোলদাতা দিয়েগো মৌরিসিয়ো এবং আহমেদ জাহু।

মহাভারতে পাণ্ডবদের ১২ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের এই ট্রফি খরাও যেন পাণ্ডবদের বনবাসের মতোই। ১২ বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ের কোনও ট্রফি পায়নি তারা। অপেক্ষা করতে করতে সমর্থকেরাও এক সময় ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। নামীদামি কোচেরা আসা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য বদলাচ্ছিল না। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সমস্যা থাকায় পাওয়া যাচ্ছিল না ভাল মানের বিদেশিও। এ বার সবই যেন হয়েছে নিখুঁত পরিকল্পনা মেনে। মরসুমের শুরুতে কুয়াদ্রাতকে আনা। তাঁর পরামর্শ নিয়ে ভাল মানের বিদেশি আনা, দেশীয় ফুটবলারদের ট্রান্সফার ফি দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া— এ সব কিছুরই ফলস্রুতি ছিল ডুরান্ড কাপের ফাইনাল। সেই লক্ষ্য পূরণ না হলেও সুপার কাপ জিতে ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্ন পূরণ হল।

এ দিন খেলার শুরুতেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। মাঝমাঠে ফাউল হয়েছিল। হোসে পারদোর ফ্রিকিক থেকে বল পেয়েছিলেন নন্দকুমার। তবে তাঁর শট বাঁচিয়ে দেন বিপক্ষ গোলকিপার মাউইয়া। এর পরে দু’দলের খেলাতেই আক্রমণ লক্ষ করা যেতে থাকে। ১২ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে বল নিয়ে উঠেছিলেন রয় কৃষ্ণ। বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন। তা গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। তিন মিনিট পরে আবার সুযোগ পেয়েছিল ওড়িশা। কৃষ্ণ আবার বল নিয়ে উঠে পাস দিয়েছিলেন সাই গর্ডার্ড। তাঁর থেকে বল যায় মৌরিসিয়োর কাছে। ব্রাজিলের ফুটবলারের শট অল্পের জন্য বাইরে যায়।

দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ইস্টবেঙ্গল সুযোগ তৈরি করলেও ফাইনাল থার্ডে গিয়ে সুযোগ নষ্ট করছিল। সেই সুযোগ চলে আসে দ্রুতই। পর পর দু’মিনিটে গোলের দু’টি সুযোগ চলে এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে। দু’বারই ওড়িশার পতন রুখে দেন গোলকিপার মাউইয়া। প্রথম বার বক্সের বেশ কিছুটা দূরে ফ্রিকিক পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সতীর্থের পাস থেকে তাঁর জোরালো শট কোনও মতে রুখে দেন মাউইয়া। কর্নায় পায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেটন সিলভার কর্নার থেকে জেভিয়ার সিভেরিয়োর হেড আবার বাঁচিয়ে দেন ওড়িশার গোলকিপার।

এর পরে হয়তো কিছু ক্ষণের জন্য ইস্টবেঙ্গলের মনঃসংযোগ নড়ে গিয়েছিল। তার ফায়দা তোলে ওড়িশা। মাঝমাঠ থেকে কৃষ্ণের উদ্দেশে বল ভাসিয়েছিলেন আহমেদ জাহু। সেই বল কৃষ্ণের কাছে এলেও তিনি দখলে রাখতে পারেননি। বোরহা হেরেরা বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে একটু বেশিই দূরে ঠেলে দেন। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা সুযোগসন্ধানী মৌরিসিয়ো নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়ান। ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিলের কিছু করার ছিল না। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা ওড়িশা আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখে ইস্টবেঙ্গল।

ফাইনাল থার্ডে দলের ব্যর্থতা নজর এড়ায়নি কুয়াদ্রাতের। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন দলে কার অভাব রয়েছে। দেরি না করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নামিয়ে দেন নাওরেম মহেশকে। সঙ্গে জাতীয় দলে যাওয়া আর এক ফুটবলার লালচুংনুঙ্গা। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তার ফল পায় ইস্টবেঙ্গল। ওড়িশার ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে মাঝমাঠ থেকে তাঁর ডিফেন্সচেরা পাস যায় নন্দকুমারের উদ্দেশে। ঘাড়ের কাছে থাকা ওড়িশা ডিফেন্ডার এবং সামনে থাকা গোলকিপারকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দেন ডার্বিতে গোল করা নন্দকুমার।

কিছু ক্ষণ পরেই একটি ন্যায্য পেনালটি থেকে বঞ্চিত হয় ইস্টবেঙ্গল। বক্সের মধ্যে নন্দকুমারকে ফেলে দেন ওড়িশার এক ফুটবলার। কিন্তু লাল-হলুদ ফুটবলারদের কাতর আবেদনে কর্ণপাত করেননি রেফারি। তবে পরের মিনিটেই ইস্টবেঙ্গলকে একটি পেনাল্টি দেন, যা নিয়ে হতেই পারে। হিজাজি মাহেরের থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন বোরহা। তাঁকে ফেলে দেন মুর্তাদা ফল। তবে রিপ্লে-তে দেখা যায় ফলের সঙ্গে বোরহার কোনও স্পর্শ হয়নি। এ বার ওড়িশার ফুটবলারদের আবেদন কানে তোলেননি রেফারি। পেনাল্টি থেকে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন সাউল ক্রেসপো। রেফারির সঙ্গে তর্ক করে হলুদ কার্ড দেখেন ফল।

সাত মিনিট পরে দশ জন হয়ে যায় ওড়িশা। এ বার একটি হেড করতে গিয়ে বোরহার ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন ফল। রেফারি তাঁকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড এবং লাল কার্ড দেখান। ৮০ মিনিটের মাথায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় ইস্টবেঙ্গল। একটি বল ক্লিয়ার করতে দেরি করেন হিজাজি। অমেয় রানাওয়াড়ের শট বারে লাগে। নন্দকুমারের জায়গা পিভি বিষ্ণুকে নামান কুয়াদ্রাত। কিন্তু বিষ্ণু এমন দু’টি সুযোগ মিস্ করেন যে ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁকে তুলে নিতে হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তাঁকে গোল করার বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন বোরহা। কিন্তু আশেপাশে সতীর্থদের খুঁজতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন বিষ্ণু। তাঁর মারা শট বাঁচিয়ে দেন মাউইয়া।

ঠিক যে মুহূর্তে মনে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের হাতে সুপার কাপ উঠতে চলেছে, তখনই নেমে আসে বিপদ। ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে বক্সের মধ্যে মৌরিসিয়োকে ফাউল করেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন। শেষ মুহূর্তে কৃষ্ণ একটি ব্যাক হিলে বল বাড়িয়েছিলেন মৌরিসিয়োর উদ্দেশে। সামনে শুধু একা ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার। প্রভসুখনের বেরিয়ে না ফাউল না করে উপায় ছিল না। হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাঁকে। পেনাল্টি থেকে ‘পানেনকা’ কিকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে সমতা ফেরান জাহু।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে পাঁচ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। শৌভিকের শট বারে লাগে। তার পরেই মেজাজ হারিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। ওড়িশার মতো ইস্টবেঙ্গলও দশ জন হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সুযোগ করে দেয় ওড়িশাই। বলা ভাল, ওড়িশার গোলকিপার মাউইয়া। গোটা ম্যাচে একাধিক বার দলের পতন রুখলেও আসল সময়ে ভুল করে বসেন। ইস্টবেঙ্গলের একটি আক্রমণের পর বল পাস করতে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র গেহলৌতকে। কিন্তু নরেন্দ্রের কাছেই ছিলেন ক্লেটন। তিনি ওড়িশার ডিফেন্ডারের থেকে বল ছিনিয়ে নেন। তত ক্ষণে গোলমুখ থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন মাউইয়া। তার মধ্যেই নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন ক্লেটন।

জার্সি খুলে সাইডলাইনে গিয়ে শুয়ে পড়েন ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার। তাঁর উপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাকি ফুটবলার এবং সাপোর্ট স্টাফেরা। তবে কোচ কুয়াদ্রাত তখনও জানতেন খেলা বাকি। তাই সবাইকে শান্ত হতে বলেন। একই জিনিস অবশ্য দ্বিতীয় বার হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে এ বার আর সমতা ফেরাতে পারেনি ওড়িশা। রেফারি সম্মুগম শেষ বাঁশি বাজাতেই গ্যালারিতে লাল-হলুদ জনতার উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Kalinga Super Cup Odisha FC Nandhakumar Sekar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy