গোলের পর ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের উল্লাস। ছবি: এক্স।
ইস্টবেঙ্গল ৩ (ক্লেটন ২, নন্দকুমার)
মোহনবাগান ১ (ইয়ুস্তে)
আবার কলকাতা ডার্বির রং লাল-হলুদ। শুক্রবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সুপার কাপের সেমিফাইনালে চলে গেল ইস্টবেঙ্গল। প্রথম ১৫ মিনিট ছাড়া নিখুঁত ফুটবল উপহার দিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেরা। অন্য দিকে, প্রথম সারির সাত ফুটবলার না থাকার ফল টের পেল সবুজ-মেরুন। সব বিদেশি থাকা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলকে টেক্কা দিতে পারল না তারা। অগস্টে ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বের পর সেই প্রতিযোগিতারই ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। আবার ডার্বিতে জিতল তারা। ইস্টবেঙ্গলের জয়ের নায়ক ক্লেটন সিলভা। জোড়া গোল করলেন তিনি। অপর গোলটি করেন নন্দকুমার। মোহনবাগানের গোলদাতা হেক্টর ইয়ুস্তে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকে মোহনবাগান। দেখে মনেই হয়নি যে তাদের প্রথম দলের সাত ফুটবলার নেই। তিন মিনিটেই ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দেন আর্মান্দো সাদিকু। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়। সাদিকু তীব্র প্রতিবাদ জানালেও লাভ হয়নি। তবে হঠাৎই কিছুটা কুঁকড়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদের ফুটবলারদের দেখে বেশ ভীত-সন্ত্রস্ত মনে হতে থাকে। সেই সুযোগের পূর্ণ ফায়দা তুলতে শুরু করে মোহনবাগান।
একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল ইস্টবেঙ্গলের বক্সে। লাল-হলুদ ফুটবলারেরা তখন রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। সুযোগ সদ্ব্যবহার করে গোল করে দেয় মোহনবাগান। কর্নার তুলেছিলেন পেত্রাতোস। বাকি ফুটবলারদের থেকে কিছুটা এগিয়ে ডান পায়ের ফ্লিকে বল জালে জড়ান হেক্টর ইয়ুস্তে। সামনে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা থাকলেও তারা বুঝতেই পারেননি।
গোল খেয়েই বদলে যায় ইস্টবেঙ্গল। পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে তারা। গোল শোধ করতে মাত্র পাঁচ মিনিট নেয় তারা। বাঁ দিক থেকে থ্রো করেছিলেন নিশু কুমার। ইস্টবেঙ্গলের তিন ফুটবলারের সামনে তা পড়ে। জটলার মধ্যে থেকে বল কিছুটা টেনে নিয়ে গিয়ে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন ক্লেটন। আগের দিনই তিনি বলেছিলেন ডার্বিতে গোল করতে মরিয়া। কথা রাখেন ক্লেটন।
গোল পেয়ে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গলের খেলা। মোহনবাগানের মাঝমাঠ ক্রমশ ছন্নছাড়া। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না হুগো বুমোসকে। খারাপ খেলছিলেন গ্লেন মার্টিন্সও। না পারছিলেন বল ধরতে, না পারছিলেন পাস বাড়াতে। রক্ষণ না আক্রমণ কোনটা করবেন, সেটাও বুঝতে পারছিলেন না। তত ক্ষণে ম্যাচ অনেকটাই ইস্টবেঙ্গলের নিয়ন্ত্রণে।
প্রথমার্ধের কিছু ক্ষণ আগে একটা ভাল সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। হেড করার সুযোগ এসেছিল বুমোসের কাছে। তিনি পারেননি। তার পরেই পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। ইস্টবেঙ্গল বক্সের দিকে বল নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কিয়ান নাসিরি। তাঁকে আটকাতে গিয়ে পড়ে যান হিজাজি মাহের। কিয়ানের শট হিজাজির হাতে লাগে। ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হলুদ কার্ড দেখান হিজাজি এবং প্রতিবাদ করতে থাকা হাভিয়ের সিভেরিয়োকে।
পেনাল্টি থেকে পেত্রাতোসের শট জালে জড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শটের আগেই বক্সের মধ্যে বুমোস ঢুকে পড়ায় রেফারি আবার পেনাল্টি মারার নির্দেশ দেন। হয়তো মনঃসংযোগ নড়ে যাওয়ার কারণেই দ্বিতীয় শট নষ্ট করেন পেত্রাতোস। জোরালো শট মেরেছিলেন প্রভসুখনের ডান দিকে। বল পোস্টে লেগে ফেরত আসে। সেই বল হ্যামিলের পায়ে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেও ইস্টবেঙ্গলের খেলার মধ্যে গোছানো ব্যাপারটা ছিল। মোহনবাগান চেষ্টা করছিল ম্যাচে ফেরার। কিন্তু খেলার মধ্যে অতটাও জমাট ভাব ছিল না। মোহনবাগানের মাঝমাঠ কিছুতেই খেলার দখল নিতে পারছিল না। ইস্টবেঙ্গলের বোরহা হেরেরা, সাউল ক্রেসপোরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছিলেন শৌভিক চক্রবর্তীও।
৬০ মিনিটের মাথায় রাজ বাসফোরকে তুলে নিয়ে রবি রানাকে নামান মোহনবাগানের কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। সেটাই বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে ভুল করেন তিনি। ইস্টবেঙ্গল গোলকিক থেকে প্রভসুখন বল ভাসিয়েছিলেন। সতীর্থের মাথা ঘুরে সেই বল আসে রবির কাছে। তিনি দেখতেই পাননি অত কাছে ক্লেটন দাঁড়িয়ে।
রবির পা থেকে অনায়াসে বল কেড়ে নিয়ে অর্শের পাস দিয়ে নিচু শটে গোলের চেষ্টা করে ক্লেটন। কিন্তু সেই বল পোস্টে লাগে। ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন নন্দকুমার। ডুরান্ড কাপে তাঁর গোলেই জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। আবার কলকাতা ডার্বিতে গোল করলেন তিনি।
এর পর কিছুটা সময়ের জন্য মোহনবাগানের দাপট দেখা যায় খেলায়। মরিয়া হয়ে জেসন কামিংসকে নামিয়ে দিয়েছিলেন মিরান্ডা। তিনি সামনে আসায় আত্মবিশ্বাস বাড়ে বাকি ফুটবলারদের। সেই দাপট অবশ্য গোলে পরিণত করতে পারেনি মোহনবাগান। উল্টে গোলকিপারের ভুলে গোল খেয়ে যায় তারা। ডান দিক থেকে মোহনবাগানের বক্সে বল ভেসে এসেছিল। হেড করেন হিজাজি। সেই হেডে জোর ছিল না। নিরীহ বল ধরতে গিয়ে ফস্কান অর্শ আনোয়ার। বল বুকে লেগে ফিরে আসে। সেই বল অনায়াসে জালে জড়িয়ে দেন ক্লেটন।
৮৫ মিনিটে আবার গোলের ভাল সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। ডান দিক থেকে মোহনবাগানের এক ফুটবলারকে কাটিয়ে অনায়াসে বক্সে ঢুকে পড়েন পি ভি বিষ্ণু। কঠিন কোণ থেকে বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন। তবে তা বাঁচিয়ে দেন অর্শ। সংযুক্তি সময়ের খেলা চলাকালীন আরও একটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। অজয় ছেত্রী বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। তাঁর শট অর্শের গায়ে লেগে বারে লাগে। ফিরতি বলে গোল হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy