চলতি মরসুমে চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। বহু ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটাতে হয়েছে। অনেক ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে নেমেছেন। গোলের সুযোগও পেয়েছেন। কিন্তু গোল করতে পারেননি। চলতি মরসুমে ওড়িশা ম্যাচের আগে মাত্র দু’টি গোল করেছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। দু’টিই পেনাল্টি থেকে। ওড়িশার বিরুদ্ধে দলের জয়সূচক গোল করেছেন সেই পেত্রাতোসই। তাঁর পা মোহনবাগানকে দ্বিতীয় বারের জন্য লিগ-শিল্ড এনে দিয়েছে। মাঠে নেমে অবশ্য গোল করার কথা ভাবেননি পেত্রাতোস। শুধু দলকে জেতানোর কথা ভাবছিলেন তিনি।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটের মাথায় পেত্রাতোসকে নামান মোলিনা। মাঠে নেমে শুধুই দলকে জেতানোর কথা ভাবছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে আইএসএল ওয়েবসাইটে পেত্রাতোস বলেন, “যখনই মাঠে নামি, তখনই সমর্থকেরা আমাকে অনুপ্রেরণা দেন। ওড়িশার বিরুদ্ধেও সেটাই হয়েছে। আমি মাঠে নেমে গোল করার কথা ভাবিনি। দলকে কী ভাবে জেতাব, সেই কথাই ভাবছিলাম। শুধুই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কখন মাঠে নেমেছি, খেয়াল ছিল না। তবে এটা মাথায় ছিল যে, এক মিনিট পেলেও তাকে কাজে লাগাতে হবে।”
এই জয়ের কৃতিত্ব একা নিতে চান না পেত্রাতোস। দলের সকলকে সমান কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি। মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় বিদেশি বলেন, “ফুটবলে ওঠা পড়া থাকেই। যেমন জীবনে থাকে। আমি প্রতি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এই গোলটার জন্য দলের সবাইকে কৃতিত্ব দিতে চাই। পুরো ৯০ মিনিট ধরে ওরা লড়াই করেছে। সারা মরসুমেই আমরা একসঙ্গে পরিশ্রম করেছি।”
গত দু’মাস গোল পাননি পেত্রাতোস। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি তিনি। তারই ফল পেয়েছেন রবিবার। সেই লড়াইয়ের কথা শোনা গিয়েছে পেত্রাতোসের মুখে। তিনি বলেন, “গত দু’মাস আমি কতক্ষণই বা মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছি? হালকা চোটও ছিল। কিন্তু এ তো আমাদের জীবনের অঙ্গ। তবে গত দু’মাসে আমি ব্যর্থ হইনি। কারণ, থেমে যাইনি। থেমে গেলে ব্যর্থ হতাম। কখনও হাল ছাড়িনি। তারই ফল পেলাম এই ম্যাচে।”
আরও পড়ুন:
এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন পেত্রাতোস। গত বার লিগ-শিল্ড জিতলেও আইএসএল কাপ হাতছাড়া হয়েছিল। এ বার সেই কাপও জিততে চান বাগানের ফুটবলার। সেই লক্ষ্যেই আগামী দিনে মাঠে নামবেন তাঁরা। পেত্রাতোস বলেন, “অবশ্যই আমরা কাপের জন্যও লড়ব। প্রতি ম্যাচেই জেতা আমাদের লক্ষ্য থাকে। তবে সে লড়াইয়ের এখনও অনেক দেরি আছে। লিগের আরও দুটো ম্যাচ বাকি। নক আউট বাকি আছে। কাপ জেতার জন্যও নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেব।”
কোচ হিসাবে প্রথম মরসুমেই মোহনবাগানকে লিগ-শিল্ড জিতিয়েছেন হোসে মোলিনা। পেত্রাতোসের গোলের পর তাঁকেও দেখা গিয়েছে বাঁধনছাড়া উল্লাস করতে। সেই মোলিনা জানিয়েছেন, পেত্রাতোসকে নামানোর সময়ই তাঁর মনে হয়েছিল, অস্ট্রেলীয় ফুটবলারই দলের নায়ক হবেন। মোলিনা বলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের গোল করতেই হত। তাই জেমির পাশে দিমিকেও নামাই। জানি না কেন আমার মনে হয়েছিল দিমি এই ম্যাচে গোল করলেও করতে পারে। এই ম্যাচটা হয়তো ওরই হতে চলেছে। আমি ঠিকই ছিলাম।”
ওড়িশার বিরুদ্ধে নামার আগে কি বাড়তি চাপ ছিল মোলিনার উপর? বাগান কোচ জানিয়েছেন, একেবারেই নয়। কারণ, এর পরে আরও দু’টি ম্যাচ রয়েছে বাগানের। তাই এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছিলেন মোলিনা। বাগান কোচ বলেন, “আমাদের কোনও বাড়তি চাপ ছিল না। বরং সেরা মুহূর্ত তৈরি করার সুযোগ ছিল। নিজেদের মাঠে সমর্থকদের সামনে জেতা। এর চেয়ে ভাল মুহূর্ত আর কী হতে পারে? বরং গোয়া খুব চাপে ছিল। ওদের ম্যাচটা জিততেই হত। টেনিসের ভাষায় আমাদের হাতে তিনটে ম্যাচ পয়েন্ট ছিল। ওড়িশার বিরুদ্ধে জিততে না পারলে আরও দুটো ম্যাচে সুযোগ ছিল। সে জন্যই কোনও চাপ ছিল না আমাদের।”
পেত্রাতোসের মতোই মোলিনাও লিগ-শিল্ড জিতে সন্তুষ্ট থাকতে চান না। পরের দু’টি ম্যাচ, সেমিফাইনাল ও সব শেষে ফাইনাল জিতে আইএসএল কাপও ঘরে আনতে চান। তার একমাত্র কারণ মোহনবাগানের সমর্থকেরা। মোলিনা জানিয়েছেন, সমর্থকদের কাছ থেকেই ভাল খেলার প্রেরণা পান তাঁরা। তাই জোড়া ট্রফি জিতে সমর্থকদেরই উপহার দিতে চায় দল।