নায়কেরা জ্বলে ওঠেন বড় মঞ্চেই। তিনি, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট মাঝমাঠের প্রধান ভরসা আপুইয়া। আইএসএলে এই মরসুমে ২০টি ম্যাচে গোল পাননি। যুবভারতীতে সোমবার রাতে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে সংযুক্ত সময়ে (৯০+৪ মিনিট) জ্বলে উঠলেন আপুইয়া। তাঁর জাদু গোলেই টানা তৃতীয়বার আইএসএলের ফাইনালে উঠে দ্বিমুকুট জয়ের স্বপ্নপূরণের সামনে মোহনবাগান।
গোলের মতোই রোমাঞ্চকর আপুইয়ার উত্থানের কাহিনি। মিজ়োরামের আইজ়লে ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের পাশাপাশি মাংস বিক্রেতা বাবাকে সাহায্য করতেন। একই সঙ্গে চালিয়ে যেতেন লেখাপড়াও। বাবার কড়া নির্দেশ ছিল কোনও মতেই পড়াশোনায় অবহেলা করা চলবে না। আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তিন সন্তানকে তিনি ভর্তি করেছিলেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। বাবার স্বপ্নপূরণ করতেই ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলের ট্রায়ালে নামেননি আপুইয়া। তখন তিনি দশম শ্রেণিতে। সামনেই ছিল বোর্ডের পরীক্ষা।
ভারতীয় ফুটবলে তারকা হয়ে ওঠার পরেও বদলাননি আপুইয়া। গত বছর বিশ্বকাপ ও এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে কুয়েতের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য ৪১ জনের দল ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন কোচ ইগর স্তিমাচ। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আপুইয়া আবেদন করলেন জাতীয় দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। কেন? ভারতীয় দলে যোগ দিলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে পারবেন না। আপুইয়ার ঘনিষ্ঠেরা বলেন, ‘‘আপুইয়ার দ্বৈত সত্তা রয়েছে। মাঠে ও ভয়ঙ্কর। মাঠের বাইরে আপুইয়া সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া এক চরিত্র। শান্ত, লেখাপড়ায় প্রচণ্ড মনোযোগী। বলে, সারা জীবন তো ফুটবল খেলব না। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে রাখতে চাই।’’
গোড়ালিতে চোট থাকায় জামশেদপুরের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে খেলতে পারেনি আপুইয়া। ১-২ গোলে হেরেছিল মোহনবাগান। যুবভারতীতে দ্বিতীয় পর্বের দ্বৈরথে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু দলের কঠিন সময়ে চোট উপেক্ষা করে আপুইয়া শুধু মাঠেই নামেননি, মোহনবাগানকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে।
গত মরসুমেও শিল্ড জয়ের পরে আইএসএলে কাপ হাতছাড়া করেছিল মোহনবাগান। নেপথ্যে অবশ্য অন্যতম কারিগর ছিলেন আপুইয়াই! তিনি তখন ছিলেন মুম্বই সিটি এফসি-তে। ফাইনালে যুবভারতীতে অসাধারণ খেলেছিলেন তিনি। আগামী শনিবার সুনীল ছেত্রীদের হারিয়ে সবুজ-মেরুন জনতার যন্ত্রণা দূর করতে পারবেন? আপুইয়ার হুঙ্কার, ‘‘বেঙ্গালুরু দলটা এক জনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। ফাইনাল দু’দলের কাছেই কঠিন হবেই। আমাদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)