সতীর্থের গোলের পরে উল্লাস ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। ছবি: রয়টার্স।
গত বিশ্বকাপে খারাপ পারফরম্যান্সের পরে পর্তুগালের জার্সিতে ফিরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন খেলেন সে দিকেই নজর ছিল সবার। প্রথমার্ধেই অন্তত জোড়া গোল করতে পারতেন রোনাল্ডো। এক বার গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারলেন না তিনি। এক বার তাঁর বাঁ পায়ের শট ভাল বাঁচালেন চেকিয়ার (চেক প্রজাতন্ত্র) গোলরক্ষক স্টানেক। খেলার গতির বিপরীতে এগিয়ে যায় চেকিয়া। পরে চেকিয়ার আত্মঘাতী গোলে সমতা ফেরায় পর্তুগাল। একেবারে শেষ মুহূর্তে পরিবর্ত হিসাবে নামা কনসেসাও গোল করে জিতিয়ে দেন পর্তুগালকে।
খেলার শুরু থেকেই পর্তুগালের দাপট। ডালট, ভিটিনহা, ব্রুনো ফের্নান্দেস, কানসেলো, বের্নার্দো সিলভাকে নিয়ে মাঝমাঠ সাজিয়েছিলেন পর্তুগালের কোচ রবার্তো মার্তিনেজ। সামনে রেখেছিলেন রোনাল্ডো ও লিয়াওকে। তার ফলে পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে মাঝমাঠের দখল ছিল পর্তুগালের। একের পর এক আক্রমণ এসে পড়ছিল চেকিয়ার বক্সে।
৮ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগ পান রোনাল্ডো। বক্সে ভেসে আসা বসে হেড করেন তিনি। কিন্তু গোলে রাখতে পারেননি সিআর৭। ছটফট করছিলেন ৩৯ বছরের রোনাল্ডো। বোঝা যাচ্ছিল, দেশের জার্সিতে গোল করতে কতটা মুখিয়ে তিনি। মাঝেমধ্যে দূর থেকেও শট মারছিলেন পর্তুগালের ফুটবলারেরা। ২৫ মিনিটে ফের্নান্দেসের শট একটুর জন্য বার উঁচিয়ে বেরিয়ে যায়।
৩২ মিনিটে ম্যাচের সহজতম সুযোগ পেয়েছিলেন রোনাল্ডো। রক্ষণের পায়ের মাঝখান থেকে বক্সে অরক্ষিত রোনাল্ডোকে বল বাড়ান ফের্নান্দেস। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রোনাল্ডো। তাঁর বাঁ পায়ের শট বাঁচিয়ে দেন স্টানেক। বিরতির ঠিক আগেই আরও এক বার গোল লক্ষ্য করে শট মারেন রোনাল্ডো। এ বারও দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টানেক। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও একই ছবি। চেকিয়ার বক্সে আছড়ে পড়ে একের পর এক আক্রমণ। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারছিল না পর্তুগাল। তার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী লিয়াও। বেশি ক্ষণ পায়ে বল রাখছিলেন তিনি। একা খেলার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সময়ে রোনাল্ডোকে বল দিলে হয়তো ভাল করতেন পর্তুগালের স্ট্রাইকার। ৫৮ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। রোনাল্ডোর শট সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে যায়।
সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয় পর্তুগালকে। ৬২ মিনিটের মাথায় খেলার গতির বিপরীতে এগিয়ে যায় চেকিয়া। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটে দিয়েগো কোস্তাকে পরাস্ত করে গোল করেন লুকাস প্রোভোদ। এগিয়ে যায় চেকিয়া। হতবাক হয়ে যান গ্যালারিতে বসে থাকা পর্তুগিজ সমর্থকেরা। রোনাল্ডোকেও হতাশ দেখায়।
বাধ্য হয়ে লিয়াওকে তুলে নুনো মেনডেসকে নামান পর্তুগালের কোচ। ফলও মেলে। ৬৯ মিনিটের মাথায় বক্সে ভেসে আসা বলে হেড করেন মেনডেস। সেই বল বাঁচিয়ে দেন স্টানেক। কিন্তু ফিরতি বল চেকিয়ার ডিফেন্ডার রানাচের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। রানাচ আত্মঘাতী গোলে সমতা ফেরায় পর্তুগাল।
সমতা ফেরানোর পরে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ায় পর্তুগাল। ৭১ মিনিটে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারেন সিলভা। ভাল বাঁচান স্টানেক। চেকিয়ার পুরো দল রক্ষণে নেমে এসেছিল। ডিফেন্স করছিলেন পাঁচ জন। তাঁদের সামনে আরও চার জন ছিলেন। প্রতি আক্রমণের জন্য এক জনকে উপরে রেখেছিল তারা। ফলে খেলা বেশির ভাগটাই হচ্ছিল চেকিয়ার বক্সের কাছে।
পর্তুগালের কাছে বলের দখল ছিল ৭৬ শতাংশ। ৮০ মিনিটের মধ্যে চেকিয়ার গোল লক্ষ্য করে ১৭টি শট মেরেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা নিষ্প্রভ দেখায় রোনাল্ডোকে। তার কারণ, কড়া মার্কিংয়ে ছিলেন তিনি। তাঁকে জায়গা দিচ্ছিলেন না চেকিয়ার ডিফেন্ডারেরা। এক বারও ফাঁকা হেড পাননি। সারা ক্ষণ তাঁর গায়ে লেগে ছিল ডিফেন্ডার।
পর্তুগালের চাপ বেশি থাকলেও তার মাঝে দু’এক বার প্রতি আক্রমণে সুযোগ তৈরি করছিল চেকিয়া। কিন্তু আক্রমণে বেশি লোক না থাকায় তা কাজে আসছিল না। রোনাল্ডো গোল করতে না পারলেও সেই রোনাল্ডোর হেড থেকেই পর্তুগালের দ্বিতীয় গোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ৮৮ মিনিটের মাথায় ফাঁকায় হেড করেন রোনাল্ডো। বল পোস্টে লাগে। ফিরতি বলে গোল করেন দিয়েদো জটা। কিন্তু ভার-এ দেখা যায় রোনাল্ডো অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে গোল বাতিল হয়।
দেখে মনে হচ্ছিল পর্তুগালকে আটকে দেবে চেকিয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভুল করল তাদের রক্ষণ। নেটোর ক্রস আটকাতে ভুল করেন ডিফেন্ডার। সেই বল ধরে গোল করেন পরিবর্ত হিসাবে নামা ফ্রান্সিসকো কনসেসাও। বাকি সময়ে আর ফিরতে পারেনি চেকিয়া। হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। তবে যে ভাবে চেকিয়া পর্তুগালকে চাপে রাখল তা চিন্তায় রাখবে রোনাল্ডোদের।
জর্জিয়াকে হারাল তুরস্ক— মঙ্গলবার অন্য খেলায় জর্জিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে তুরস্ক। গোটা ম্যাচে টান টান খেলা হয়েছে। ২৫ মিনিটে তুরস্ককে এগিয়ে দেন মার্ট মুলডুর। পরের মিনিটেই তুরস্কের একটি গোল অফসাইডে বাতিল হয়। যদিও সেই লিড বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৩২ মিনিটে সমতা ফেরান জর্জেস মিকাউচাজ়ে। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৫ মিনিটের মাথায় বাঁ পায়ের দুরন্ত গোলে তুরস্ককে আবার এগিয়ে দেন আর্দা গুলের। কোনও ভাবেই সমতা ফেরাতে পারছিল না জর্জিয়া। তাই শেষ মুহূর্তে তাদের গোলরক্ষক প্রতিপক্ষ বক্সে উঠে যান। তারই সুযোগ নিয়ে সংযুক্তি সময়ের শেষ মিনিটে তুরস্কের হয়ে তৃতীয় গোল করেন করিম আকতুরকোগলু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy