দুর্ভেদ্য: বুধবার অনুশীলনে গোলরক্ষক বিশাল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আইএসএলের ফাইনাল খেলতে গোয়া রওনা হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্বস্তি এটিকে-মোহনবাগান শিবিরে। সুস্থ হয়ে অনুশীলনে নেমে পড়লেন আশিক কুরুনিয়ন। সব ঠিক থাকলে শনিবার গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে খেলবেন সবুজ-মেরুন মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা।
যুবভারতীতে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে নক-আউট ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে ১১ মিনিটে মাঠ ছেড়েছিলেন আশিক। আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, হাঁটার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেই রাতে সতীর্থ কিয়ান নাসিরির কাঁধে চড়ে স্টেডিয়াম ছেড়েছিলেন। বার্তোলোমেউ ওগবেচেদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচ খেলতে দল যখন হায়দরাবাদ রওনা হচ্ছে, চিকিৎসার জন্য আশিক উড়ে গিয়েছিলেন মুম্বই। শেষ দু’টি ম্যাচের একটিতেও দলে ছিলেন না তিনি। বুধবার বিকেলে যুবভারতীতে পুরোদমেই অনুশীলন করলেন। বুঝিয়ে দিলেন যে কোনও মূল্যে মাঠে নামতে চান তিনি।
ফাইনালে প্রতিপক্ষ পুরনো দল বেঙ্গালুরু বলেই কি এই মরিয়া ভাব? অনুশীলন শেষ করে ফেরার সময় হাসতে হাসতে আশিক বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরু দলের সকলেই আমার বন্ধু। আমি এখন সুস্থ। আইএসএলের ফাইনালে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’’ আশিকের প্রত্যাবর্তনে আরও এক জন উচ্ছ্বসিত। তিনি, হুগো বুমোস। মাঝমাঠে আশিক থাকলে তিনি যে অনেক খোলা মনে খেলতে পারেন, গোপন করেননি। তবে তাঁর আশঙ্কা, বেঙ্গালুরুও রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়ে খেলতে পারে। বলছিলেন, ‘‘ওদের রক্ষণ খুবই শক্তিশালী। বেঙ্গালুরুর প্রধান লক্ষ্যই থাকবে আমাদের গোল করতে না দেওয়া। ফলে কাজটা অনেক কঠিন হবে ফাইনালে।’’
এর পরেই আত্মবিশ্বাসী বুমোসের হুঙ্কার, ‘‘ওদের রক্ষণে ভাঙন ধরানোর পথ আমাদের খুঁজে বার করতেই হবে।’’ কোচ জুয়ান ফেরান্দোর মতো বুমোসও খুশি নন হায়দরাবাদকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন বলে। বলছিলেন, ‘‘দু’টি সেমিফাইনালের একটিতেও গোল করতে পারিনি আমরা। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ফাইনালে গোল করতেই হবে আমাদের।’’
সুনীলদের কোচ সাইমন গ্রেসন যে রক্ষণাত্মক রণনীতি নিতে পারেন, সেই আশঙ্কা রয়েছে জুয়ানের। বুধবার বিকেলে মোহনবাগানের অনুশীলনে অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ওয়ার্ম আপের পরে ফুটবলারদের নিয়ে মাঠের এক দিকে চলে গেলেন স্পেনীয় কোচ। তাঁর ছক অনুযায়ী ফুটবলারদের দাঁড় করালেন। কিন্তু প্রত্যেকের সামনে মুখোমুখি দাঁড় করালেন আরও এক জন করে ফুটবলার। অর্থাৎ, রক্ষণের অন্যতম ভরসা স্লাভকো দামইয়ানোভিচের সামনে রাখলেন দিমিত্রি পেত্রাতোসকে। আশিস রাইয়ের সামনে বুমোস। এর পরে শুরু হল অভিনব অনুশীলন। বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে ওঠার চেষ্টা করা দিমিত্রি, বুমোস, মনবীররা যে দিকে দৌড়চ্ছেন, স্লাভকোরাও সে দিকে যাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপার পুরোটাই হল বল ছাড়া! এ যেন ‘ছায়া যুদ্ধ’! দিমিত্রি, বুমোসরা এ দিন সুনীল, রয় কৃষ্ণদের ভূমিকা পালন করলেন। বিশেষ এই অনুশীলন থেকেই স্পষ্ট ফাইনালে জুয়ানের রণকৌশল হল মোহবাগানের অর্ধে সুনীল, কৃষ্ণদের সর্বক্ষণ কড়া পাহাড়ায় রাখা। কোনও মতেই যেন তাঁরা গোল করার সুযোগ না পান। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে এই মহড়া চলল।
বল ছাড়া প্রস্তুতির কারণ কী? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বল নিয়ে অনুশীলন করলে ডিফেন্ডাররা স্ট্রাইকারদের গোল করা আটকাতে ট্যাকল করবেনই। সে ক্ষেত্রে চোট লাগার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফাইনালের আগে ন্যূনতম ঝুঁকিও নিতে চান না জুয়ান। এই কারণেই বল ছাড়া অনুশীলন করিয়েছেন।
বিশেষ এই অনুশীলনের পরে জুয়ান ব্যস্ত হয়ে পড়লেন লিস্টন কোলাসোকে নিয়ে। গত মরসুমে আইএসএলে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক গোল করা তারকা এ বার একেবারেই ছন্দে নেই। এখনও পর্যন্ত করেছেন মাত্র একটি গোল। লিস্টনের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে গোলরক্ষকহীন গোলের ভিতরে বল মারার অনুশীলন করালেন জুয়ান। ঘরের মাঠে লিস্টন নিজেও মরিয়া ছন্দে ফিরতে। বলছিলেন, ‘‘ফাইনালে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। চেনা মাঠে আশা করছি, সফল হব।’’ মনের উপরে থেকে চাপ কমাতে বৃহস্পতিবার গোয়া পৌঁছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।
গোয়ায় আইএসএলের ফাইনালে থাকবেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। বুধবার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা জানান মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তকে। খোঁজ নেন, দিমিত্রিরা কবে গোয়া যাচ্ছেন। ক্রীড়ামন্ত্রীকেও তিনি যেতে বলেন। তাঁকে বলেছেন, চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতিয়ে ফিরতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy