Advertisement
E-Paper

Real Madrid: অপয়া ১৩-র গেরো কাটিয়ে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দিল ‘ঈশ্বরের হাত’

এই ঈশ্বরের হাত গোল করে না, গোল বাঁচায়। এই ঈশ্বরের হাত দেশকে বিশ্বকাপ জেতায় না ঠিকই, কিন্তু ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে দেয়।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ১৭:৩২
Share
Save

এ-ও যেন এক ‘ঈশ্বরের হাত’।

এই ঈশ্বরের হাত গোল করে না, গোল বাঁচায়। এই ঈশ্বরের হাত দেশকে বিশ্বকাপ জেতায় না ঠিকই, কিন্তু ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে দেয়। এই ঈশ্বরের হাতের মালিক বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার নন, কিন্তু এই মুহূর্তের অন্যতম সেরা গোলকিপার।

না, ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামের সেই দৃশ্য শনিবার রাতে ফিরে আসেনি প্যারিসের স্তাদ দ্য ফ্রাঁসে। ছিলেন না কোনও দিয়েগো মারাদোনাও। কিন্তু থিবো কুর্তোয়া ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের নিঃশব্দ প্রহরী। ম্যাচের আগে মহম্মদ সালাহ, সাদিয়ো মানে, করিম বেঞ্জেমা, লুকা মদ্রিচদের নিয়ে পাতার পর পাতা লিখেছে বিশ্বের তামাম সংবাদমাধ্যম। তাঁকে নিয়ে সেই ‘অভিযোগ’ নেই। কেউ তাঁর দিকে ফিরে তাকাননি। পিছনে ঘোরেনি সইশিকারীর দল। অনুশীলনে সংবাদমাধ্যম তাঁর ছবি তুলতে বেশি আগ্রহ দেখায়নি। তিনি ছিলেন নিজের মতো, যেমন তিনি থেকেছেন এতদিন। শনিবারের রাতের পর থেকে তাঁর জীবন, তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি হয়তো বদলে যাবে। কিন্তু কুর্তোয়া একই থেকে যাবেন।

যেমন ছিলেন ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে প্রায় ছিটকে দেওয়ার পর। যেমন ছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্বপ্ন ধ্বংস করে দেওয়ার পর। রিয়ালের সমর্থকরা এখন হইচই করছেন কুর্তোয়াকে নিয়ে। কিন্তু তাঁরা কী করে ভুলবেন আট বছর আগে আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলা কুর্তোয়ার সেই পারফরম্যান্স! ইকের কাসিয়াসের ভুলে গোল খেয়েও বহু বার আতলেতিকো মাদ্রিদকে গোল দেওয়ার জায়গায় চলে গিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু প্রতি বার কুর্তোয়া নামক অদৃশ্য দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিহত হয়ে ফেরেন তাঁরা। ম্যাচটা তারা ১-৪ হেরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু দু’দলের পার্থক্য করে দিয়েছিল মানসিকতা। কুর্তোয়া নিজের কাজটা করেছিলেন।

ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কুর্তোয়ার সেই ম্যাচ।

ব্রাজিল সমর্থকরা কি আজও ক্ষমা করতে পেরেছেন কুর্তোয়াকে? ২০১৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে সেলেকাওদের মুখোমুখি হয়েছিল কুর্তোয়ার দেশ বেলজিয়াম। নেমার-সমৃদ্ধ ব্রাজিল সে সময় দুরন্ত ছন্দে। কাপ জেতার অন্যতম দাবিদার। যতই উল্টো দিকে থাকা বেলজিয়াম দল সোনালি প্রজন্মের মধ্যে দিয়ে যাক। ধারে-ভারে প্রত্যেকেই এগিয়ে রেখেছিলেন ব্রাজিলকে। কিন্তু সেই ব্রাজিলও থেমে গেল কুর্তোয়া নামক দেওয়ালের কাছেই। শনিবার লিভারপুলের বিরুদ্ধে ৯টি সেভ করেছেন কুর্তোয়া। সেই ম্যাচেও তিনি ৯টি সেভ করেছিলেন। তার মধ্যে শেষ মুহূর্তে নেমারের যে শটটি বাঁচান, সেটিকে ‘দশকের সেরা সেভ’ বললে এতটুকু অত্যুক্তি করা হবে না। বেলজিয়াম হেরে যায় সেমিফাইনালেই। কিন্তু কুর্তোয়ার হাতেই উঠেছিল সোনার গ্লাভস।

বিশ্ব ফুটবলে একটা ধারণা প্রচলিত আছে। ইংল্যান্ডে না খেললে কেউ ‘ভাল’ গোলকিপার হন না। সেই কারণে রিয়াল মাদ্রিদে কুর্তোয়া বা প্যারিস সঁ জঁ-য় জিয়ানলুইগি দোনারুম্মারা যতই ভাল খেলুন, চর্চা হয় সেই অ্যালিসন বেকার, এডারসন, এডুয়ার্ড মেন্দিদের নিয়েই। কুর্তোয়া নিজেও সেটা জানেন। চারটি বছর কাটিয়েছেন চেলসিতে। সেই সময় তাঁকে নিয়ে যে চর্চা হয়েছে, রিয়ালে আসার পর থেকে ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। তিনি নিজে অবশ্য সেটা নিয়ে বিশেষ ভাবিত ছিলেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্বপ্নের ক্লাবে খেলা। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা।

দুর্ভাগ্যবশত, রিয়াল মাদ্রিদ কোনও দিন তাঁকে কেনার আগ্রহই দেখায়নি। তাঁদের নজরে ছিল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ডেভিড দ্য হিয়া। চুক্তি প্রায় সারা হয়েই গিয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তের আইনি জটিলতায় রিয়ালে যোগ দিতে পারেননি দ্য হিয়া। রিয়ালে তখন রমরমিয়ে চলছে কেলর নাভাসের জমানা। কিন্তু বিকল্প গোলকিপার তখন থেকেই নেওয়ার তাগিদ দেখাচ্ছিল রিয়াল। সেই সময়েই তারা কম দামে পেয়ে যায় কুর্তোয়াকে। ২০১৮-র বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলার পর চেলসি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন কুর্তোয়া। চেলসি রাজি হয়নি। জবাবে তিনি অনুশীলনেই আসা বন্ধ করে দেন। বাধ্য হয়ে তাঁকে বিক্রি করে চেলসি।

কুর্তোয়ার সেই নামের ফলক। পড়ে রয়েছে ইঁদুর।

কুর্তোয়ার সেই নামের ফলক। পড়ে রয়েছে ইঁদুর। ছবি টুইটার

কিন্তু নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে প্রথম মুহূর্ত থেকে ঠোক্কর খাওয়া শুরু। তাঁর আগমন মেনে নেননি রিয়ালের ফুটবলারদের একাংশ। অধিনায়ক সের্খিও রামোস সরাসরি নাভাসের পাশে দাঁড়িয়ে আগেই বিভাজনের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন। দোসর হয় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম। প্রতি মুহূর্তে চলছিল কাটাছেঁড়া, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ। মাঠেও কুর্তোয়া সে ভাবে জবাব দিতে পারছিলেন না। ভয়ঙ্কর কিছু পারফরম্যান্স আরও কঠিন করে দিচ্ছিল রিয়ালে তাঁর থাকা। নাভাসের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন।

তার সঙ্গে যোগ হয় প্রাক্তন ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদের আক্রমণ। চেলসি থেকে লোনে আতলেতিকোতে চার বছর কাটিয়েছিলেন কুর্তোয়া। নতুন স্টেডিয়াম ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো তৈরি হওয়ার পর ক্লাবের বিখ্যাত ফুটবলারদের নামের ফলক বাইরের রাস্তায় লাগিয়েছিল আতলেতিকো। রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর আতলেতিকোর সমর্থকরা সেই ফলক জুতো দিয়ে পিষে দেন। ফলকের উপর প্রস্রাব করেন। তার উপর পচা ইঁদুর রেখে দেন। ওয়ান্ডায় একটি মাদ্রিদ ডার্বি হওয়ার সময় কুর্তোয়ার দিকে ছুড়ে মারা হয় মরা ইঁদুর।

বিশ্বকাপে সোনার গ্লাভসজয়ী গোলকিপার কুর্তোয়া সব কিছু মেনে নিয়েছিলেন। স-অ-অব। এক বারের জন্যেও মুখ ফুটে কিছু বলেননি। দিনের পর দিন কাটিয়েছেন রিজার্ভ বেঞ্চে। এক বারও কোচের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেননি তাঁকে খেলানোর। রিয়ালে তখন কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস চলছে জিনেদিন জিদানের। কুর্তোয়ার সঙ্গে বনিবনা নেই বললেই চলে। লা লিগায় খেলাচ্ছেন নাভাসকে। কুর্তোয়া সুযোগ পাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো হাতেগোনা ম্যাচে। তবু কুর্তোয়ার মনের মধ্যে এই বিশ্বাসটুকু ছিল, সুযোগ আসবে।

সেই সুযোগটা এল ২০১৯-এর অক্টোবরে। গ্রুপ পর্বে প্যারিস সঁ জঁ-র কাছে হার এবং ক্লাব ব্রুজের বিরুদ্ধে ড্র করার পর জিদানের চাকরি প্রায় যায় যায়। গালাতাসারের বিরুদ্ধে কুর্তোয়ার অবিশ্বাস্য গোলকিপিং দলকে জয় এনে দিল। ওই ম্যাচের পর থেকেই জিদানের মনে ভরসার জায়গাটা তৈরি করে নিলেন বেলজিয়ামের গোলকিপার। নাভাস দল ছাড়ার পর এখন গোলের নীচে তাঁকে ছাড়া কাউকে ভাবাই যায় না। এমন একটাও ম্যাচ নেই যেখানে কুর্তোয়ার দুর্দান্ত সেভ থাকবে না।

সেই হাত, সেই ‘ঈশ্বরের হাত’ই রিয়ালকে দিল ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অপয়ার ১৩-র গেরোয় চার বছর আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

UEFA Champions League real madrid Thibaut Courtois Belgium Football Brazil Football fifa world cup Atletico de Madrid

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।