যুবভারতীতে বিশ্বকাপজয়ের সেই রাতে ফোডেন। — ফাইল চিত্র।
রবিবার ইউরো কাপের ফাইনাল। মুখোমুখি স্পেন এবং ইংল্যান্ড। তবে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ফাইনালের এই লড়াই অন্য কারণে বিশেষ অর্থবহ। সাত বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালেও খেলেছিল এই দুই দল। সেই দু’দলের মোট চার জন ফুটবলার রয়েছেন রবিবারের ম্যাচে। যুবভারতীতে স্পেনকে ছিন্নভিন্ন করে ৫-২ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। অক্টোবরের কলকাতার সেই রাত রবিবার কি বার্লিনে ফেরাতে পারবেন ফিল ফোডেনরা?
যুবভারতী স্টেডিয়ামে স্পেন ট্রফি জয়ের দাবিদার হিসাবেই নেমেছিল। কিন্তু সব পরিকল্পনা ঘেঁটে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। সের্জিয়ো গোমেজের জোড়া গোলে স্পেন এগিয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইংরেজ আক্রমণের সামনে নাস্তানাবুদ হয়ে যায় স্পেন। কোনও পরিকল্পনাই খাটেনি।
ফুটবলবিশ্বে যে দু’টি দল তরুণ ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে বাকিদের থেকে এগিয়ে, তাদের মধ্যে থাকবে স্পেন এবং ইংল্যান্ড। দুই দেশের অনেক অ্যাকাডেমি রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি বছর প্রচুর ফুটবলার উঠে আসেন। যুব স্তর, ক্লাব স্তরে ভাল খেলে অনেকে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। তাই জন্যেই কি বেশি সাফল্য পাচ্ছে এই দু’টি দল? প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “মানছি এখনকার ফুটবল তরুণদের হাতে চলে গিয়েছে। ৩০ পেরিয়ে গেলেন মানে আপনি শেষ। তার মানেই যে শুধু তরুণদের নিয়ে বড় মঞ্চে বাজিমাত করা যাবে এমনটা নয়। সেখানে একটা লেমিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়ামসদের যেমন দরকার, তেমনই একজন রদ্রি বা জেসুস নাভাসকেও লাগবে।”
শহরের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে এখনও ভাসেন ফোডেন। সেই ফাইনালে ফোডেনের জোড়া গোল অনেকেই ভুলতে পারেননি। ইংরেজ ফুটবলার নিজের প্রতিভা চিনিয়েই ক্রমশ উঠে এসেছেন। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভাল খেলার পরে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে সুযোগ পান। সেখানে পেপ গুয়ার্দিওলার প্রশিক্ষণে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ম্যান সিটি তো বটেই, জাতীয় দলেও ফোডেন এখন অন্যতম সেরা অস্ত্র। তাঁকে বাদ দেওয়ার সাহস পান না কোচেরা। ইউরো কাপের প্রথম দিকে তাঁর খেলা সমালোচিত হলেও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নজরকাড়া ফুটবল খেলেছেন।
শুধু ফোডেনই নন, সেই দলের আরও দু’জন খেলোয়াড় এখনকার ইংল্যান্ড দলে রয়েছেন। তাঁরা হলে ডিফেন্ডার মার্ক গেহি এবং মিডফিল্ডার কোনর গ্যালাঘার। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের মতোই ইউরো কাপে প্রায় নিয়মিত খেলেছেন এই দু’জন। গেহি প্রথমে দলে না থাকলেও হ্যারি ম্যাগুয়েরের চোট তাঁর সামনে দলে ঢোকার দরজা খুলে দেয়। তিনিও সেটা সাদরে গ্রহণ করেছেন। স্পেন দলে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারের সংখ্যা তুলনায় কম। একমাত্র ফেরান তোরেস ছাড়া কেউ নেই।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নজর কেড়েছিলেন ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টার। দু’টি হ্যাটট্রিক-সহ আটটি গোল করেছিলেন। বিশ্বকাপের পরে তাঁকে দলে নিয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু বিশ্বকাপের ফর্ম পরে আর দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে হারিয়ে যান। এখন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে জোড়া গোল করা সের্জিয়ো গোমেজও দ্রুত উঠে এসেছিলেন। তিনিও নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, ম্যাঞ্চেস্টার সিটির জার্সি গায়ে চাপালেও কোথাও দলে স্থায়ী জায়গা তৈরি করতে পারেননি। এখন খেলেন স্পেনের প্রথম ডিভিশনের দল রিয়াল সোসিয়েদাদে।
হারিয়ে যাওয়া আর এক ফুটবলারের মধ্যে রয়েছেন জেডন স্যাঞ্চো। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ, বিশ্বকাপে আসার আগেই ক্লাব ফুটবলে নজর কেড়েছিলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে নকআউটে খেলা হয়নি তাঁর। কারণ তৎকালীন ক্লাব ডর্টমুন্ড তাঁকে বেশি দিনের জন্য ছাড়তে চায়নি। সেই স্যাঞ্চো পরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলেছেন। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলেও খেলেছেন। কিন্তু প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ম্যান ইউ এখন তাঁকে লোনে ডর্টমুন্ডেই পাঠিয়ে দিয়েছে।
মেহতাবের মতে, হঠাৎ পাওয়া নাম বা খ্যাতি সামলাতে পারেন না বেশির ভাগই। সে কারণেই খ্যাতির জোয়ারে ভেসে গিয়ে এক সময় হারিয়ে যান। মেহতাব বলেছেন, “যাদের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদী, সাফল্য পায় তারাই। ফুটবলে সংযম গুরুত্বপূর্ণ। ভাল খেললে খ্যাতি, অর্থ পাবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে টিকে গিয়েছে ফোডেন, হারিয়ে গিয়েছে ব্রিউস্টার। আমার মতে ফোডেন অসাধারণ খেলোয়াড়। নিজেকে কী ভাবে উন্নত করে তুলতে হয়, সেটা ভাল জানে না।”
ইয়ামালকে নিয়ে একটু হলেও আশঙ্কা রয়েছে মেহতাবের। বলেছেন, “ইউরো কাপে সবে ভাল খেলল, এখন থেকেই ওর ট্রান্সফার নিয়ে প্রচুর চর্চা হচ্ছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে ইয়ামাল আরও অন্তত ১৫-২০ বছর খেলতে পারবে। কিন্তু এখনই অন্য ক্লাবে যাওয়া, টাকা নিয়ে ভাবতে শুরু করলে ও-ও যে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে না, তা কে বলতে পারে।”
ফোডেন বা ইয়ামাল, রবিবার ইউরো কাপ যাঁর হাতেই উঠুক, আগামী দিনে ফুটবলের তারকা কে হবেন, তা বোঝা যেতে পারে ফাইনালের পরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy