Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
santosh trophy

Santosh trophy 2022: সন্তোষ ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলার তিন রত্ন

 বাংলার তিন তারকারই অবশ্য এই মুহূর্তে পাখির চোখ সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বলে দিলেন, ‘‘গ্রুপ পর্বে কেরলের কাছেই হেরে গিয়েছিলাম।  ফাইনালে ওদের হারিয়ে সেই যন্ত্রণা ভুলতে চাই। আশা করছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েই কলকাতায় ফিরব।’’

ত্রয়ী: বাংলার ফুটবলের তিন নতুন তারা। সুজিত সিংহ, ফারদিন আলি মোল্লা ও দিলীপ ওরাঁও (বাঁ দিক থেকে)।

ত্রয়ী: বাংলার ফুটবলের তিন নতুন তারা। সুজিত সিংহ, ফারদিন আলি মোল্লা ও দিলীপ ওরাঁও (বাঁ দিক থেকে)।

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২২ ০৬:৩৪
Share: Save:

বাংলাকে ৩৩তম সন্তোষ ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখানো তিন তরুণ তারকার উত্থানের চমকপ্রদ কাহিনি!

কেরলের মঞ্জেরিতে চব্বিশ ঘণ্টা আগে সেমিফাইনালে মণিপুরের বিরুদ্ধে দু’মিনিটেই গোল করে বাংলাকে এগিয়ে দেওয়া সুজিত সিংহের বাড়ি উত্তরবঙ্গের মালবাজারে। পরিবারের রোজগার ছোট্ট চা, ঘুগনির দোকান থেকে। সকাল ছ’টা থেকে ন’টা পর্যন্ত দোকান সামলে অনুশীলনে যেতেন সুজিত। মণিপুরের বিরুদ্ধে অসাধারণ শটে গোল করার পর রাতারাতি বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন।

সুজিত যদিও আশ্চর্যরকম নির্লিপ্ত। তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশবের লড়াইয়ের সেই দিনগুলি। শনিবার মালাপ্পুরম থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে সুজিত বললেন, ‘‘চা ও ঘুগনির দোকান থেকে যে সামান্য রোজগার হয়, তাতেই কোনও মতে সংসার চলে আমাদের। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়ার। কিন্তু কোথায় খেলা শিখব তা জানতাম না।’’

যোগ করলেন, ‘‘আমার আগ্রহ দেখে এক বন্ধু বলল, মালবাজারে পাগলা স্যরের (বিশ্বনাথ বিশ্বাস) কোচিং ক্যাম্পে চল প্র্যাক্টিস করতে। ওকে বললাম, আমার তো জুতোই নেই। খেলব কী করে? শেষ পর্যন্ত ওর জুতো পরেই গেলাম ফুটবল শিখতে। কিন্তু প্রথম দিনই মন ভেঙে গিয়েছিল।’’ কেন? হাসতে হাসতে সুজিত বলল, ‘‘পাগলা স্যর সে দিন ছিলেন না। আর এক জন কোচ যিনি ছিলেন, তিনি আমাকে ছোটদের দলে খেলান। খুব হতাশ হয়েছিলাম। রেগে গিয়ে বন্ধুকে বলেছিলাম, এখানে আর আসব না। সত্যিই দুই-তিন দিন যাইনি ওখানে। অথচ বাড়িতেও মন টিকত না। কয়েক দিন পরে ফের গেলাম। সে দিন স্যর ছিলেন। আমার খেলা খুব পছন্দও হয় ওঁর। উনিই আমার প্রথম কোচ। বছরখানেক পরে ইস্টবেঙ্গলের যুব দলের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেললাম। তার পরে সুযোগ
পাই লাল-হলুদে।’’

সুজিত কৃতজ্ঞ টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি ও ইস্টবেঙ্গলের যুব দলের প্রাক্তন কোচ রঞ্জন চৌধুরীর কাছেও। বাংলার মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা বলছিলেন, ‘‘রঞ্জন স্যর না থাকলে হয়তো আমি কোনও দিন এই জায়গায় পৌছতে পারতাম না। ওঁর অবদান কখনও ভুলতে পারব না আমি।’’

সুজিতের বাংলা দলে নির্বাচিত হওয়ার কাহিনিও কম রোমাঞ্চকর নয়। বলছিলেন, ‘‘মালবাজার থেকে সকালে কলকাতায় পৌঁছেই সন্তোষ ট্রফির জন্য ট্রায়ালে নেমে পড়েছিলাম খালি পেটে।’’

মণিপুরের বিরুদ্ধে বাংলাকে ২-০ এগিয়ে দেওয়া ফারদিন আলি মোল্লাকে যদিও দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়নি। কিন্তু তাঁর সমস্যা ছিল শরীরের বাড়তি ওজন। ফারদিনের বাবা ফরিদ আলি মোল্লা কলকাতা ময়দানের পরিচিত নাম। তিন প্রধানে খেলার আশা তাঁর কখনও পূরণ হয়নি। তবে রেলের হয়ে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডানের বিরুদ্ধে অনেক গোল করেছেন তিনি। ফরিদ স্বপ্ন দেখতেন ছেলে ফারদিন এক দিন বড় ক্লাবে খেলবেন। তাই চার বছর বয়সেই ছেলেকে প্রথম মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ফারদিন বলছিলেন, ‘‘শুরুর দিকে বাবার প্রচণ্ড বকতেন। আসলে আমি খুব মোটা ছিলাম। তাই জোরে দৌড়তে পারতাম না। বাবা প্রচণ্ড রেগে যেতেন।’’ যোগ করলেন, ‘‘বাবার পরামর্শেই ধীরে ধীরে নিজেকে বদলাই। এটিকে-র রিজ়ার্ভ দলে সুযোগ পাই। তার পরে এটিকে-মোহনবাগানে সই করি।’’

সুজিতের মতোই বাংলার আর এক গোলদাতা দিলীপ ওরাঁওকে লড়াই করতে হচ্ছে প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে। বাবা দক্ষিণ দমদম পুরসভার সাফাই সাফাইকর্মী। মা রান্নার কাজ করেন। দিলীপ বলছিলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন মা, বাবা। শৈশবে খেলার জন্য বুট, জার্সি কিনে দেওয়ার সামর্থও ছিল না ওঁদের। আমার এক মামা সাহায্য না করলে ফুটবলার হয়ে ওঠা হত না।’’ ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে খেলা দিলীপের স্বপ্ন এখন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের জার্সি পরে মাঠে নামা।

বাংলার তিন তারকারই অবশ্য এই মুহূর্তে পাখির চোখ সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বলে দিলেন, ‘‘গ্রুপ পর্বে কেরলের কাছেই হেরে গিয়েছিলাম। ফাইনালে ওদের হারিয়ে সেই যন্ত্রণা ভুলতে চাই। আশা করছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েই কলকাতায় ফিরব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

santosh trophy Bengal Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy