প্রতীকী ছবি।
বান্ধবীর কাছে দ্রুত যাওয়ার জন্য মাথা খাটিয়ে উপায় বের করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার স্টিফেন আয়ারল্যান্ড। বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারলেও জড়িয়ে পড়েছিলেন বড় বিতর্কে। সেই ঘটনার পর আর জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি আয়ারল্যান্ড।
বিতর্কিত ঘটনাটি অবশ্য এখনকার নয়। তখন ২০০৮ সালের ইউরোর যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলছিল আয়ারল্যান্ড। যোগ্যতা অর্জন করার জন্য একটি ম্যাচে জিততেই হত আইরিশদের। সেই ম্যাচের দেড় ঘণ্টা আগে কোচ স্টিভ স্টনটনকে ফোন করে আয়ারল্যান্ড বলেছিলেন, তাঁর দিদিমা মারা গিয়েছেন। তিনি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তাই ম্যাচটি খেলতে পারবেন না। তাঁর কথা শুনে মানবিক কারণে কোচ ছুটি দেন আয়ারল্যান্ডকে। যদিও স্টনটন সেই ম্যাচে ভাল ফলের জন্য অনেকটাই নির্ভর করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের উপর। কিন্তু দেশের হয়ে মাঠে নামার থেকেও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটানো। তাই বান্ধবীর ফোন পেয়ে কোচকে অসত্য কথা বলে শিবির ছেড়েছিলেন তিনি। তাঁর জন্য বিশেষ বিমানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আয়ারল্যান্ড যখন শিবির ছাড়েন, তখন ম্যাচ শুরু হতে এক ঘণ্টাও বাকি ছিল না।
কিন্তু কেন এ রকম করেছিলেন তখন? আয়ারল্যান্ড জানিয়েছেন, ‘‘আমার স্ত্রী (তখন বান্ধবী) জেসিকা ললোর গর্ভপাত হয়েছিল সেই ম্যাচের কিছু দিন আগে। আমি সঙ্গে না থাকায় ভীষণ একাকিত্বে ভুগছিল। সঙ্গ দেওয়ার জন্য দ্রুত ওর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ তা হলে দিদিমার মৃত্যুর কথা কেন বলেছিলেন? আয়ারল্যান্ড বলেছেন, ‘‘মনে হয়েছিল আসল বিষয়টা বললে দ্রুত বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পাব না। আমি ফোন করতেই কোচ সাজঘরে এসেছিলেন। তখন আমি জেসিকার সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। জেসিকার বুদ্ধিতেই দিদিমার মারা যাওয়ার কথা বলেছিলাম।’’
আয়ারল্যান্ডের মিথ্যা অবশ্য চাপা থাকেনি। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে জরুরি ভিত্তিতে তাঁর জাতীয় শিবির ছাড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের প্রায় সব সংবাদপত্রে। সেই খবর পড়েন তাঁর দিদা প্যাট্রিসিয়া ট্যালন। বেঁচে থাকা সত্ত্বেও নাতি তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করায় ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেন, বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন। বিকর্ত ধামা চাপা দিতে আয়ারল্যান্ড তখন বলেছিলেন, ভুল করে দিদিমার মৃত্যুর কথা বলে ফেলেছেন। আসলে মারা গিয়েছেন তাঁর ঠাকুমা ব্রেন্ডা কিচেনার। পরের দিন এই খবর প্রকাশিত হওয়ায় রেগে লাল হয়ে যান ব্রেন্ডাও। তিনি নাতির বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দেন। তাতে আরও বিপাকে পড়েন আয়ারল্যান্ড।
পর পর দু’টি মিথ্যা ঢাকতে আয়ারল্যান্ড আশ্রয় নেন তৃতীয় মিথ্যার। এর পর তিনি বলেন, ঠাকুরদার প্রাক্তন সঙ্গীনির (বিবাহ বিচ্ছিন্না) মৃত্যু হয়েছে। সঠিক তথ্য না পাওয়াতেই ভুল বলেছিলেন। তাঁর এই মিথ্যাও দু’দিন পরেই জানাজানি হয়ে যায়। কারণ সেয়ি মহিলাও নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দিতে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন। একের পর এক মিথ্যা বলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন আয়ারল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত সত্যিটা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন তিনি।
আয়ারল্যান্ড বলেছেন, ‘‘আমি বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। যাঁরা আমার জন্য সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁদের কাছে আমি আজও ক্ষমাপ্রার্থী। দুই ঠাকুমা, দিদিমা এবং পরিবারের সকলের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ওই ঘটনা আমার জীবনের বড় শিক্ষা। যেটা আমি ভুলতে চাইলেও পারি না।’’
২০১৮ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া আয়ারল্যান্ড ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ৩০৫টি ম্যাচ খেলেছেন। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, অ্যাস্টন ভিলা, স্টোক সিটি, বোল্টন ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে খেলেছেন আয়ারল্যান্ড। শেষ খেলেছেন বোল্টন ওয়ান্ডার্সের হয়ে। জাতীয় দলের পর অবশ্য ওই বিতর্কের পর আর খেলার সুযোগ পাননি। দেশের হয়ে মাত্র ৭টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান ৩৬ বছরের প্রাক্তন মিডফিল্ডার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy