স্নেহের ছাত্রের সঙ্গে কৃষ্ণা মণ্ডল।
প্রাথমিকে পড়ার সময় এক শিক্ষিকা কিনে দিয়েছিলেন যোগব্যায়ামের একটি বই। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ফিটনেস প্রশিক্ষক দয়ানন্দ গরানির কাছে সেই বইটাই ছিল প্রাথমিক দিশা। দয়ানন্দের কথায়, শরীচর্চায় ওই শিক্ষিকাই তাঁর অনুপ্রেরণা। যার পথ ধরে আজ সাফল্যের শিখরে তিনি। অস্ট্রেলিয়া সফর সেরে শুক্রবারই ফিরেছেন বাড়িতে। তারপরই রবিবার কাকভোরে সেই শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিলেন দয়ানন্দ। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা একটি কলম ছাত্র তুলে দেন তাঁর শিক্ষাগুরুর হাতে।
পাঁশকুড়ার উখড়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মণ্ডল সাহু ১৯৯৯ সালে কোলাঘাটের জামিট্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। দয়ানন্দ গরানি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। খেলাধূলা এবং শরীরচর্চায় দয়ানন্দের প্রবল ঝোঁক নজর এড়ায়নি শিক্ষিকার। প্রিয় ছাত্রকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। আর সব জায়গাতেই প্রথম পুরস্কার ধুলিতে পুরতেন দয়ানন্দ। গরিব বাড়ির ছাত্র দয়ানন্দকে কৃষ্ণাদেবী কিনে দিয়েছিলেন যোগ ব্যায়ামের বই। দেড় বছর পর অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান কৃষ্ণা। ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিক্ষিকার।
তারপর সময় গড়িয়েছে। একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ ভারতীয় দলের ম্যাসাজ থেরাপিস্ট কাম থ্রো ডাউন স্পেশ্যালিস্ট কোলাঘাটের দয়ানন্দ গরানি। বছর দুয়েক আগে অনেক খোঁজ করে দেড়িয়াচকে কৃষ্ণা দিদিমণির বাড়িতে এসেছিলেন দয়ানন্দ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত টেস্ট সিরিজ জেতার পর শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন দয়ানন্দ। জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিতে এদিন কাকভোরে ছোটেন শিক্ষাগুরুর বাড়িতে। গুরুর পা ছুঁয়ে আশীবার্দ নেন। মিষ্টি আর অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা দামী কলম তুলে দেন শিক্ষিকার হাতে। চা পর্বের মধ্যে শিক্ষিকার পাশে বসে স্মৃতিচারণ করছিলেন দয়ানন্দ। বলেন, ‘‘আমার জীবনে কৃষ্ণা দিদিমণির ভূমিকা ভোলার নয়। ওঁর দেওয়া যোগ ব্যায়ামের বই আজও সযত্নে গুছিয়ে রেখেছি। আজ আমি যে সুযোগ পেয়েছি তাতে ওঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ ছাড়াও ক্রিকেট ক্লাব ৮০-এর কোচ লাট্টুদা ও মলয় পালের ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না। এঁরা আমার জীবনে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর।’’
অস্ট্রেলিয়ায় জয়ের বিষয়ে দয়ানন্দ বলেন, ‘‘দলের ক্রিকেটাররা ভাল খেলেছে। তাই জয় এসেছে। আমি মন্দিরের পুরোহিতের মতো। পিছন থেকে খেলোয়াড়দের আমার একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
ছাত্রের সাফল্য নিয়ে কী বলছেন দিদিমণি?
কৃষ্ণা দিদিমণির কথায়, ‘‘দয়ানন্দের মতো ছাত্র ক’জন পায় বলুন! আমার শিক্ষক জীবন সার্থক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy