Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

ফাইনালটা ফাইনালই হয়, কাল জিতলেও তো কেউ কাপ জিতছে না

ভূমিকাটা বদল নয়, একেবারে রূপান্তর! এককালে তাঁর খেলা দেখার জন্য উত্সাহীদের ঢল আর ভিড় সামলানোর জন্য পুলিশ ডাকতে হত। আজ তিনি কিনা শান্তিরক্ষক ডাকা আর সব কিছু তদারকির ভূমিকায়। কখনও তাঁর ঘরে হন্তদন্ত ঢুকে আইসিসি-র কেউ কেউ বলছে পাকিস্তান প্র্যাকটিসের সময় বদলাবে বলছে, কী করব? কখনও কেউ বলছে ইন্ডিয়ান টিমকে যাদবপুরের মাঠে পাঠালে কেমন হয়? একটা ফোন এল। মনে হয় সুজন মুখোপাধ্যায়ের। এই প্রান্তে শুধু এটুকু শোনা গেল যে, ভাল করে জল দাও। রোল করো। ভাল উইকেট হয়েছে দেখেছ তো! তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বড় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার পঁচিশতম বছরে একেবারে নতুন ভূমিকায়। শনিবারের ভারত-পাক যজ্ঞের পুরোহিত। এককালে ব্রেট লি সামলাতেন। এখন সামলাতে হচ্ছে ভারত-পাক অনুরাগীদের খেলা দেখার আব্দার। যা সময় সময় বৃহস্পতিবারের মতো আয়ত্তের বাইরে... ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালই। অন্য কিছুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। শনিবারের ম্যাচ নিয়ে প্রচণ্ড হাইপ আছে সত্যি কথা। কিন্তু রিয়েলিটিটা তো মাথায় রাখতে হবে যে, এখানে ইন্ডিয়া জিতলেও কাপ পাচ্ছে না। পাকিস্তান জিতলেও না।

গৌতম ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

প্রশ্ন: আপনার প্রশাসনিক ক্রিকেট ভাগ্যটাও তো দেখা যাচ্ছে ক্রিকেট ভাগ্যের মতোই। ওখানে সিধু আচমকা দেশে ফিরে যাওয়ায় আপনার সামনে লর্ডস অভিষেকের দরজা খুলে গেছিল। এখানে ধর্মশালা থেকে হঠাত্ করে ম্যাচ সরে গিয়ে আপনার হাতে বসে গেল। এটাও তো একরকম লর্ডস, তাই না?

সৌরভ: ওভাবে ভাবিনি। নেভার থট অ্যাবাউট ড্যাট। তবে ম্যাচটা হঠাত্ করে এখানে যে চলে এল সে দিক দিয়ে আমরা ভাগ্যবান তো বটেই।

প্র: সবাই ভয় পাচ্ছিল যে ইন্ডিয়া যদি ফাইনালে না ওঠে, তা হলে ফাইনালটা জোলো হয়ে যাবে। ভাগ্যের খেলায় শনিবারের ম্যাচ হয়ে গেল ফাইনালের আগের ফাইনাল।

সৌরভ: আমি একমত নই। ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালই। অন্য কিছুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। শনিবারের ম্যাচ নিয়ে প্রচণ্ড হাইপ আছে সত্যি কথা। কিন্তু রিয়েলিটিটা তো মাথায় রাখতে হবে যে, এখানে ইন্ডিয়া জিতলেও কাপ পাচ্ছে না। পাকিস্তান জিতলেও না।

প্র: নাগপুরে ভারত হারা আর ইডেনে পাকিস্তান জেতার পর তো যা দাঁড়িয়েছে ধোনিদের জন্য নক আউট পরিস্থিতি। শনিবার হারলে মোটামুটি গন।

সৌরভ: সেটা তো স্পোর্টসের অংশ। খেলার অংশ। যদিও আমি মনে করি বাকি তিনটে ম্যাচ আর সেমিফাইনাল জিতে ইন্ডিয়ার ফাইনাল না যাওয়ার কোনও কারণ নেই।

প্র: ভারতের কাকে সবচেয়ে ভয় পাওয়া উচিত? মহম্মদ আমের?

সৌরভ: আমি একটা কথা বলব এই তুলনাটা কেন হচ্ছে আমি জানি না।

প্র: আক্রম তো নিজেই বলেছেন।

সৌরভ: বলতে পারে। কিন্তু আমার মত জিজ্ঞেস করছেন বলে বলছি, আমের মোটেও আক্রম নয়। ও বিপজ্জনক কিন্তু আনপ্লেয়েবল নয়।

প্র: তা হলে ভারতের ভয় পাওয়ার বিষয় কী?

সৌরভ: ভয় পাবে না কিন্তু মাথায় রাখবে পাকিস্তান এই সব টুর্নামেন্টে আনপ্রেডিক্টেবল। কোন দিন ভাল খেলে বসবে কেউ জানে না।

প্র: বলা হয়, খুব ভাল ব্যাটিং পিচে তারাই জেতে যাদের বোলিং আক্রমণ বেশি ভাল। সে দিক থেকে ভারতের কি ইডেনে একটা ভয় নেই?

সৌরভ: ভারত ভাল ব্যাট করেও তো পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিতে পারে। সেই সম্ভাবনাটাই বা ধরছেন না কেন?

প্র: একটা বিশ্বকাপ খেলার চেয়ে একটা বিশ্বকাপ সংগঠন করা কতটা আলাদা? কোনটা বেশি কঠিন? বাইশ গজে ব্যাট করা, নাকি সিএবিতে থেকে ইন্দো-পাক আয়োজন করা?

সৌরভ: জীবনে যে কোনও বড় দায়িত্বই চ্যালেঞ্জিং। শেখার বা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার তো কোনও শেষ নেই। প্রতিদিনই আপনি শিখছেন। তবে আমি একটা কথা বলতে পারি, আপনি যদি নিজের শরীর ও মন প্রাণপাত করে পেছনে পড়ে থাকেন, তা হলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।

প্র: এই ম্যাচ ঘিরে এমন চাহিদা যে, সিএবি প্রশাসনে খুব বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় টিকিট বাটোয়ারা। তাতে অনেক সদস্য ক্লাব যেমন খুব খুশি, তেমনি দু’এক জন কর্তার মধ্যে অসন্তোষও রয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল?

সৌরভ: দেখুন আমি ততটুকুই করতে পারি যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে। এই ম্যাচ ঘিরে কী পরিমাণ চাহিদা সবাই জানে। তার মধ্যেও কিন্তু আমরা ক্লাবগুলোকে পুরো কোটার টিকিট দিয়েছি। বুক মাই শো-তে প্রচুর টিকিট গেছে। প্লাস এটা আইসিসি টুর্নামেন্টের ম্যাচ। তাদের খেলা। ভারতীয় বোর্ডকে সেখানে টিকিট দিতে হয়। কাজেই সিএবির তো সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

প্র: কিন্তু এই যে শোনা যাচ্ছে পুরো টিকিট বিলি করছেন একা আপনি! কাকে কী দেওয়া হবে-না হবে সব সিদ্ধান্ত একা আপনার।

সৌরভ: তাই তো সিস্টেম। সিএবি-তে তো বরাবর প্রেসিডেন্টই একা করে এসেছে।

প্র: আজকের ভাঙচুর সম্পর্কে কী বলবেন?

সৌরভ: এটাই বলব যে আমি নিরুপায়। টিকিট শেষ হয়ে গেলে কী করার থাকতে পারে?

প্র: আপনার সঙ্গে এই আলোচনাটা করতেই অদ্ভুত লাগছে। এখন কি সিএবি প্রশাসনের পুঙ্খানুপুঙ্খ সব জেনে গিয়েছেন?

সৌরভ: মোটামুটি।

প্র: বলুন তো টোটাল ইডেনে এখন কত লোক ধরে?

সৌরভ: ৬৭ হাজার।

প্র: বলুন সিএবি মেম্বারশিপ সংখ্যা কত?

সৌরভ: ২০ হাজার।

প্র: এই ক’দিন পদে কাটিয়ে কী মনে হচ্ছে, ভাল প্রশাসক হতে কী কী চাই?

সৌরভ: স্কিল দরকার। মানুষকে সামলানোর ক্ষমতা দরকার। আস্তে আস্তে শিখতে হয়। প্রচুর সময় দিয়েছি, এখনও দিচ্ছি এর পেছনে।

প্র: তিনটে বিশ্বকাপ আপনি খেলেছেন। তবু নিজে এতগুলো ওয়ার্ল্ড কাপ ম্যাচ সংগঠন করার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

সৌরভ: অভিজ্ঞতা তো ভালই। প্রচুর শেখার বললাম তো। তবে আমরা অনেক আগে শুরু করায় সুবিধে হয়েছে। সবাই যার যার মতো কাজ করছে। আমি বলব টিম প্লে। প্রত্যেকেই কন্ট্রিবিউট করছে।

প্র: কিন্তু এই যে সিএবির অন্দরমহলে শোনা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট সব ব্যাপারে মাথা গলাচ্ছেন। বলতে গেলে একার হাতে দেখছেন, এটা কতটা সত্যি?

সৌরভ: আমি সব কিছু মনিটর করছি এটা খুব সত্যি। এ জন্যই করছি যে, আমাকেও তো সব কিছু শিখতে হচ্ছে। জানতে হচ্ছে।

প্র: মধ্যিখানে সিএবির আভ্যন্তরীণ গণ্ডগোলের কথা শোনা যাচ্ছিল। শুরুর দিকের ম্যাচে টিকিটের বাটোয়ারাও যা নাকি আবার চাড়া দেয়। এটা কতটা সত্যি?

সৌরভ: আমি এটুকু বলতে পারি, আমরা একসঙ্গে কাজ করছি অ্যাজ আ টিম। উই আর ইউনাইটেড।

প্র: ইউনাইটেড?

সৌরভ: ইয়েস অলওয়েজ ইউনাইটেড।

প্র: আমাদের অনেকেরই একটা জিনিস অবাক লেগেছে। তা হল যেমন প্রাণশক্তি আর উদ্যম নিয়ে আপনি সিএবির কাজে ঝাঁপিয়েছেন। এটা কেউ আন্দাজ করেনি। সবার ধারণা ছিল, ও সৌরভ জাস্ট নামেই প্রেসিডেন্ট। সৌখিন কিছু কাজকর্ম করবে। ওর সময় কোথায় ২৪X৭ পড়ে থাকার? কৌতূহল হচ্ছে, এই উদ্যমটা কী প্রমাণ করতে? কার কাছে প্রমাণ করতে?

সৌরভ: কাউকে প্রমাণ করতে নয়। নিজের তাগিদে।

প্র: বিশ্বাস করা শক্ত।

সৌরভ: সত্যিই তাই। আমি এতগুলো আইসিসি টুর্নামেন্টে নিজে খেলেছি। মাঠ থেকে তো দেখলাম কী ভাবে গোটা জিনিসটা আয়োজন হচ্ছে। তার পর আইএসএলে তো আমি নিজেই টিম মালিকদের একজন। সেই অভিজ্ঞতাটা তো দারুণ হেল্প করেছে।

প্র: আসলে এই পর্যায়ের চাড় আপনার থাকবে সেটা ভাবা যায়নি যে নিজের টিভি কমেন্ট্রি নষ্ট করে, ব্যবসা নষ্ট করে এর পেছনে ছুটবেন?

সৌরভ: দেখুন আমার জীবনের নীতিই হল আমি যা করি মনপ্রাণ ঢেলে করি। হয় আমি মন দিয়ে করব, নয়তো আমি করবই না। মাঝামাঝি কিছু নেই।

প্র: তৃপ্তির মাপে এত বড় ম্যাচ অর্গানাইজ করাটা ক্রিকেট কেরিয়ারের পাশে কোথায় থাকবে?

সৌরভ: ক্রিকেট নিজে খেলাটা সবার আগে। তার সঙ্গে কারোর তুলনা হয় না। তার পরেই এটা আসবে।

প্র: তাই?

সৌরভ: ইয়েস এটাও দারুণ স্যাটিসফাইং।

অন্য বিষয়গুলি:

sourav gangul eden cricket wt20
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy