জ্যোতি প্রধান।—ছবি সৌজন্য ফেসবুক পেজ।
কয়েক দিন আগেই গুয়াহাটিতে গিয়ে অসম রাইফেলসে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে এসেছিলেন জ্যোতি প্রধান। ট্রায়ালে পাশও করেন। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বাংলার অন্যতম সেরা বক্সার দিন গুনছিলেন, কবে পাবেন চাকরির চিঠি। কিন্তু তাঁর চাকরি করা হল না। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নও থেকে গেল অপূর্ণ।
বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বক্সিং ক্লাবে অনুশীলন করার সময় রিংয়েই মৃত্যু হল রাজ্যের অন্যতম সেরা বক্সার, কুড়ি বছরের জ্যোতির। অন্যান্য দিনের মতোই এ দিন খিদিরপুরের ভূকৈলাস রোডের বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে ভবানীপুরে অনুশীলন করতে এসেছিলেন যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রীটি। তাঁর অনুশীলনের সঙ্গী সুরজ সিংহ, শিবমকুমার সিংহ রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে দাঁড়িয়ে জানান, জ্যোতি বিকেল ৫টায় রিং-এ নেমে তিন মিনিট করে পরপর দু’বার পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুষি মারা অনুশীলন করছিলেন। মাঝখানে নিয়মমতো এক মিনিট করে বিশ্রামও নিচ্ছিলেন সম্প্রতি বাংলার হয়ে দিল্লিতে জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করে আসা মেয়ে। তৃতীয় বার তিন মিনিট একই অনুশীলন করার পরে বিশ্রাম নিতে গিয়ে জলের গ্লাস তুলে নিয়েছিলেন হাতে। তার পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেয়েদের সিনিয়র বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন জ্যোতি। জাতীয় পর্যায়ে ব্রোঞ্জ জয়ী বক্সার সুরজ বললেন, ‘‘জ্যোতির দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছিল। জল গড়িয়ে পড়ছিল মুখের পাশ দিয়ে। ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে দেখে আমরা চেষ্টা করি জল খাওয়াতে। কিন্তু দাঁত খোলা যাচ্ছে না দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই মিলে ট্যাক্সি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তারেরা বলেন, মারা গিয়েছে।’’ অন্তত ১০ জন জুনিয়র বক্সার হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন একযোগে। ‘‘ডাক্তারেরা ভাল করে দেখেনইনি। হাতে কি একটা লাগিয়ে দিয়ে বললেন, মারা গিয়েছে। আমরা বারবার বললাম, আরও এক বার দেখুন। ওঁরা গুরুত্বই দিলেন না,’’ তীব্র ক্ষোভে বললেন জ্যোতির তিন সতীর্থ।
অভিযোগের জবাব দিতে চাননি ইমার্জেন্সি বিভাগের কর্তব্যরত কোনও চিকিৎসকই। কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসক বললেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। আমার নামও জানতে চাইবেন না। সুপারের কাছে যান।’’ অন্য এক জন বললেন, ‘‘শিফট বদল হয়েছে। কে বক্সারকে দেখেছেন, জানি না। আমাদের বলার এক্তিয়ার নেই।’’
সুপারের অফিসে গিয়ে দেখা গেল, দরজা বন্ধ। গেটে লরি লাগিয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার কথা শুনে কয়েকশো মানুষ রাতেই চলে আসেন হাসপাতালে। জ্যোতির সতীর্থদের কাছে চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরাও। ভবানীপুর ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র পরিস্থিতি সামাল দেন। শোভনদেববাবু বললেন, ‘‘নিজে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বক্সার ছিলাম। বক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি ৫০ বছর। কখনও এ-রকম ঘটনা দেখিনি বা শুনিনি।’’
মেয়ের দেহ ময়না-তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর পরে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে জ্যোতির বাবা রাজুপ্রসাদ প্রধান কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘জ্যোতি আমার চার মেয়ের মধ্যে ছোট। কয়েক মাস আগে ওর জন্ডিস হয়েছিল। লিভার বড় হয়ে গিয়েছিল। এই হাসপাতালেই ওর চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সুস্থ ছিল। কী যে হল! সাড়ে ৭টা নাগাদ খবর পেয়ে চলে এসেছি হাসপাতালে।’’ জ্যোতির মা তখন সামান্য দূরে জ্ঞান হারিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy