Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Athletics

শ্রীনিবাসের দৌড়ের সময় কোন ঘড়িতে মাপা হল? বোল্ট-তুলনায় বিস্মিত অ্যাথলিট মহল

বেঙ্গালুরুর কাম্বালা উৎসবে জামাইকান স্প্রিন্ট কিংবদন্তি বোল্টের থেকেও ভাল সময় করেছেন শ্রীনিবাস। গৌড়ার এই সময় দেখে রীতিমতো অবাক অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে জড়িত কোচ-ট্রেনাররা।

একটা দৌড় শ্রীনিবাসকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দিয়েছে। বোল্টের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে তাঁর। —ফাইল চিত্র।

একটা দৌড় শ্রীনিবাসকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দিয়েছে। বোল্টের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে তাঁর। —ফাইল চিত্র।

সৌরাংশু দেবনাথ ও কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১৪
Share: Save:

কাদামাখা জমিতে খালি পায়ে দৌড়ে রেকর্ড গড়ে ফেলা শ্রীনিবাস গৌড়া এখন রীতি মতো চর্চায়। ২৮ বছরের যুবকের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে বিশ্বের দ্রুততম অ্যাথলিট উসেইন বোল্টের সঙ্গে। কিন্তু, সেই তুলনা টানা কতটা যুক্তিযুক্ত? আদৌ কি বোল্টকে অতিক্রম করতে পারলেন শ্রীনিবাস?

অ্যাথলিট মহল কিন্তু শ্রীনিবাসের পাশে তেমন ভাবে নেই। বরং তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, শ্রীনিবাসের দৌড়নোর পদ্ধতি এবং সময় নিয়ে। এমনকি সময় মাপার ঘড়ি বা অতিক্রান্ত দূরত্ব মাপার পদ্ধতি নিয়েও তাঁরা সন্দিহান। কেন শ্রীনিবাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ব্যবস্থা করা ট্রায়ালে অংশ নিতে চাইছেন না, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

বেঙ্গালুরুর কাম্বালা উৎসবে জামাইকান স্প্রিন্ট কিংবদন্তি বোল্টের থেকেও ভাল সময় করেছেন শ্রীনিবাস। গৌড়ার এই সময় দেখে রীতিমতো অবাক অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে জড়িত কোচ-ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা। বোল্টের থেকেও ভাল সময় করার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। ২০০৯ সালে বার্লিনে মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড গড়েছিলেন বোল্ট। শ্রীনিবাস ১৩.৬২ সেকেন্ডে অতিক্রম করেছেন ১৪২.৫ মিটার। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, গৌড়া ১০০ মিটার অতিক্রম করেছেন ৯.৫৫ সেকেন্ডে। বোল্টের থেকেও ০.০৩ সেকেন্ড সময় কম নিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ট্রায়ালেই নামতে চাইছেন না ‘ভারতের উসেইন বোল্ট’ শ্রীনিবাস!

এটাই বিশ্বাস করতে পারছেন না বাংলার অ্যাথলিট গড়ার কারিগর কুন্তল রায়। দ্রোণাচার্য কোচের কথায়, “দেখুন, এর কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। গিমিক বলে কোনও শব্দ স্পোর্টসে নেই। এখানে করতে হলে বাস্তবে করতে হয়। আসলে, ভারতবর্ষে সবই সম্ভব। এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে বলব বিজ্ঞান বলে কোনও শব্দ নেই।’’

আর দেশের প্রাক্তন মহিলা দৌ়ড়বিদ সাইনি উইলসন বলছেন, ‘‘বোল্টের সঙ্গে তুলনা টানা বাড়াবাড়ি। জাতীয় গেমসে নেমে আগে ও জিতুক। তার পর তো বোল্টের সঙ্গে তুলনা! তা ছাড়া কাদামাঠ আর সিন্থেটিক ট্র্যাকে দৌড়নোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। দীর্ঘ অনুশীলনের পরে সিন্থেটিক ট্র্যাকে জোরে দৌড়নোর কৌশল রপ্ত করা যায়।’’

পালিত মোষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়েছিলেন শ্রীনিবাস। এ ক্ষেত্রে তিনি জকির কাজ করেছেন। গতির ঝড় তোলার জন্য একটা সাহায্যও পেয়েছেন শ্রীনিবাস। কুন্তলবাবু বলছিলেন, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বলতে হলে বলব, শ্রীনিবাস একটা সহায়তা পেয়েছেন। আমরা স্পিন্টারদের দু’ধরনের ট্রেনিং করাই। একটাতে স্প্রিন্টারদের একটা লোড দিয়ে দেওয়া হয়, যা ওদের পিছনে টানে। আর অন্যটা হল, সামনে গাড়ি বা মোটর বাইক থাকে, যা স্প্রিন্টারকে টানতে থাকে। এটাতে মেশিনের সাহায্যে স্প্রিন্টারের ক্ষমতাকে বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ট্রেডমিলেও এটা করা যায়। আমি যা দেখলাম, দুটো মোষ ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছে। তাই সময়ও ভাল হয়েছে। অবশ্য সময় কতটা ঠিক ভাবে মাপা হয়েছে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, ইলেকট্রনিক টাইমিং না থাকলে সেটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’

আর এই সময় মাপা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়। তাঁর মতে, “এগুলো মাপতে হাইটেক ঘড়ির দরকার। তার সঙ্গে বাতাসের সহায়তা ছিল কি না, সেটাও দেখতে হবে। এমন অনেক বিশ্বরেকর্ড হয়েছে যেগুলো কিন্তু বাতাসের সহায়তার জন্য গ্রাহ্য হয়নি। এ ক্ষেত্রে তো সেটা বোঝা যাচ্ছে না। এখানে সেটা কে দেখছে? আর যে ঘড়িতে মাপা হয়েছে, সেটা কতটা ঠিকঠাক ঘড়ি? এগুলো স্পিড ক্যামেরায় হয়। লাইন ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা ধরে নেয়। ম্যানুয়ালে হাত দিয়ে টেপা ঘড়ির সঙ্গে যার বিশাল ফারাক। এমন হলে তো বোল্ট ৯ সেকেন্ডের কমে দৌড়বে! বিশ্বস্বীকৃত হল ফিকো ডিজিটাল ক্লক। আর ১০০ মিটারই বা কী ভাবে মাপা হল? সেটা কি ফিতে দিয়ে চিহ্নিত করা ছিল? নাকি সেটাও আন্দাজে ঠিক করা?”

আরও পড়ুন: ক্রিস লিন অতীত, এই মরসুমে ওপেনিংয়ে নাইট রাইডার্সের তুরুপের তাস হতে পারেন এঁরা

যাঁকে নিয়ে সর্বত্র এত চর্চা সেই শ্রীনিবাসের জন্য ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু। কিন্তু, ট্রায়াল দিতে রাজি নন শ্রীনিবাস। তিনি বেঁকে বসেছেন। সাইনি উইলসন বলছেন, ‘‘ওঁর ছবি দেখেছি। পেশীবহুল চেহারা। তবে, উচ্চতা মনে হয় কম। এমনও অনেক স্প্রিন্টার রয়েছেন যাঁরা খর্বকায় অথচ দারুণ জোরে দৌড়তে পারেন। আর ট্রায়ালের ব্যবস্থা যখন ওঁর জন্য করা হয়েছে, তখন তো নামাই উচিত। উনি যাচ্ছে না কেন? খালি পায়ে আর স্পাইক পরে দৌড়নোর মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। স্টার্টিং ব্লক থেকে কী ভাবে ছিটকে বেরতে হয়, সেটাও শিখতে হবে। সাইয়ে ভাল কোচের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন উনি।’’

আর শ্রীনিবাস কী বলছেন? গতির ঝড় তুলে প্রচারের সব আলো শুষে নিয়েছেন তিনি। বোল্টের সঙ্গে তুলনা টানায় লজ্জিতও। তাঁর কথায়, ‘‘বোল্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমি জলকাদার মাঠে দৌড়ই। আমার সাফল্যের পিছনে দুটো মোষেরও অবদান রয়েছে। ওরাও খুব ভাল দৌড়য়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy