প্রত্যয়ী: এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার নেটে স্টার্কের প্রস্তুতি। সোমবার। রয়টার্স
বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা দ্বৈরথ অ্যাশেজ। ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার চিরকালীন এই টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আনন্দবাজারের একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া ম্যানেজারের পাঠানো অডিয়ো রেকর্ডিং মারফত শোনা গেল বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি পেসারের একের পর এক খোলামেলা উত্তর...
প্রশ্ন: বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটিং ইংল্যান্ডের। বিপক্ষের কোন ব্যাটসম্যান আপনাদের সামনে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন?
স্টার্ক: আমার মনে হয়, ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কোনও ব্যাটসম্যানকেই হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না। মানছি, ওদের টপ অর্ডারে কয়েক জন অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আছে। কিন্তু মনে রাখবেন, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বেশ লম্বা। ক্রিস ওকসের মতো ব্যাটসম্যান আছে। যে শেষের দিকে নেমে প্রচুর রান করেছে। তবু বিশেষ কারও কথা বলতে হলে আমি জো রুটের কথাই বলব। প্রচুর টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে ইংল্যান্ড অধিনায়কের। আশা করব, পাঁচ টেস্টের সিরিজে ওদের ব্যাটসম্যানদের চেয়ে আমাদের বোলাররা ভাল পারফর্ম করবে।
প্র: আপনি বেশ কয়েকটি অ্যাশেজে খেলেছেন। অনেক ইংল্যান্ড দলকে দেখেছেন। এই দলটা কি আপনার দেখা সেরা দল?
স্টার্ক: এখনই এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন। আমি কেভিন পিটারসেন, অ্যালেস্টেয়ার কুক, ইয়ান বেলের মতো ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বল করেছি। ওরাও কিন্তু প্রচুর টেস্ট খেলেছে, প্রচুর রান করেছে। ইংল্যান্ডের এই দলটায় বেশ কয়েক জন তরুণ ক্রিকেটার আছে। আর একটা কথা ওদের সম্পর্কে বলা যেতে পারে। এই ইংল্যান্ড খুব আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে। কিন্তু সেরা দল কি না, সেটা অ্যাশেজ শেষ হওয়ার পরেই বোঝা যাবে।
প্র: নিজের দল নিয়ে কী বলবেন? এমন কেউ আছে যে একাই ম্যাচের রং ঘুরিয়ে দিতে পারে?
স্টার্ক: আমি আলাদা করে কারও নাম করতে চাই না। আমাদের দলটা একটা অলরাউন্ড দল। সব বিভাগই শক্তিশালী। দারুণ সব ফাস্ট বোলার আছে। যারা এক সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। আমাদের পেস আক্রমণের তিনটে প্রধান বৈশিষ্ট হল— গতি, ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতা।
প্র: আপনাদের ব্যাটিং নিয়ে কী বলবেন?
স্টার্ক: আমাদের ব্যাটিং লাইনের দিকে যদি তাকান, তা হলে দেখবেন প্রায় সবারই ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলার ভাল অভিজ্ঞতা আছে। টেস্টে প্রচুর সেঞ্চুরি আছে। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশ্রণও আছে দলে। সব মিলিয়ে একটা অলরাউন্ড টিম। আরও একটা বড় ব্যাপার হল, আমাদের স্পিরিটটাও খুব ভাল জায়গায় রয়েছে। আশা করি, দারুণ একটা উত্তেজক সিরিজ হবে।
প্র: শ্রীলঙ্কা সিরিজের পরে আপনি চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ভাবে ফিরে আসেন। এই মুহূর্তে কী অবস্থায় আছেন? পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের জন্য তৈরি?
স্টার্ক: অদ্ভুত একটা চোট লেগেছিল পায়ে। যে চোট বেশির ভাগ সময় ফুটবলে দেখা যায়, ক্রিকেটে নয়। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকাটা কখনওই ভাল ব্যাপার নয়। কিন্তু ওই সময় মাঠের বাইরে থেকে আমার ভালই হয়েছে। নিজেকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে পেরেছিলাম। কী অবস্থায় আছি, বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। এখন মানসিক এবং শারীরিক ভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছি।
প্র: টেস্ট ক্রিকেটে তো অনেক দিন বাদে খেলতে নামছেন। কী মনে হচ্ছে?
স্টার্ক: হ্যাঁ, অনেক দিন লাল বলের ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলাম। তাই আরও বেশি করে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরতে মুখিয়ে আছি। বিশ্বকাপে ভালই বল করেছি (সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন স্টার্ক)। আশা করছি, বিশ্বকাপের ছন্দ আর ফর্মটা অ্যাশেজেও ধরে রাখতে পারব।
প্র: আপনি কি নিজের সামনে কোনও বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে নামবেন? কোনও এক জন ব্যাটসম্যানকে নিশানা করে বা সিরিজে এতগুলো উইকেট নিতে হবে, এ সব ভেবে?
স্টার্ক: আমি নিজের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে কোনও লক্ষ্য সামনে রাখি না। আমার কাছে ক্রিকেট হল টিমগেম। দলের স্বার্থ সবার আগে। আমার কাছে সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি হল, সতীর্থদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা বা বিশ্বকাপ ঘরে তোলা। কোনও সিরিজের আগেই এত উইকেট নেব, কি এই ব্যাটসম্যানকে টার্গেট করব, এই ভাবনাটা আমার থাকে না। তবে একটা লক্ষ্য অবশ্যই আছে। সেটা হল, অ্যাশেজ জিতে সতীর্থদের সঙ্গে গলা ছেড়ে টিম সং গাওয়া।
প্র: আপনাদের দলের সব চেয়ে বড় শক্তিটা কী? অ্যাশেজের জন্য দলে ছ’জন ফাস্ট বোলার আছে। পেস শক্তি নাকি অন্য কিছু?
স্টার্ক: এ সব নয়, এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে বড় শক্তি হল দলের মধ্যে একাত্মতা। আমরা সবাই সবার পাশে আছি। সবাই সবার জন্য কিছু না কিছু করছি। সবাই সবার কথা ভাবছি। টিম স্পিরিটটা দারুণ জায়গায় আছে। যা খেলা থেকে ট্রেনিং— সব ক্ষেত্রে ধরা পড়ছে। অ্যাশেজের মতো দীর্ঘ একটা সিরিজে মাঠের বাইরে অনেক কিছু হবে। অনেক কিছু শোনা যাবে। তাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে আমাদের এই স্পিরিটটা। অ্যাশেজ জিততে এটাই আমাদের সব চেয়ে বড় অস্ত্র।
প্র: আপনারা বিশ্বকাপে রিকি পন্টিংকে পেয়েছিলেন। অ্যাশেজে স্টিভ ওয়কে মেন্টর হিসেবে পাচ্ছেন। এই কিংবদন্তিদের ভূমিকাটা কী? কী ভাবেই বা দলকে অনুপ্রাণিত করছেন ওঁরা?
স্টার্ক: (হাসতে হাসতে) বিশ্বকাপের সময় পান্টার (রিকি পন্টিং) অনেক গল্ফ ম্যাচের আয়োজন করেছিল। আমাদের গল্ফ খেলার খুব উন্নতিও হয়েছিল। স্টিভকে এ বার সেই দায়িত্বটা নিতে হবে! যাই হোক, বিশ্বকাপে রিকি দারুণ সাহায্য করেছিল আমাদের। ব্যাটসম্যানদের জন্য বোধ হয় নিজেই হাজারখানেক বল ছুড়েছিল। বোলারদের বুঝিয়েছিল, ইনিংসের শেষ দিকে কী ভাবে বল করত হবে। ফিল্ডারদের সাহায্য করেছিল, অনেক ট্যাকটিক্যাল পরামর্শ দিয়েছিল। ওয়ান ডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা মস্তিষ্ককে আমরা বিশ্বকাপে পেয়েছিলাম।
প্র: আর স্টিভ নিয়ে কী বলবেন?
স্টার্ক: অ্যাশেজ আর ইংল্যান্ডের মাঠে খেলার অভিজ্ঞতায় স্টিভ অনেক এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ভাগ্যবান, এই দু’জনের সাহায্য পাচ্ছে। ওদের কাছ থেকে অনেক কাহিনি শুনেছি আমরা, যা যে কোনও ক্রিকেটারকে প্রেরণা জোগাবে। ওদের থেকে যে শিক্ষাটা পেয়েছি বা পাচ্ছি আশা করব তা মাঠে কাজে লাগাতে পারব।
প্র: ইংল্যান্ড এই মুহূর্তে ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনালে আপনাদের হারিয়েছিল। আপনার কি মনে হয়, যে কারণে দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ইংল্যান্ড অ্যাশেজে নামবে?
স্টার্ক: দর্শকরা নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাসী থাকবে, মাঠে আওয়াজ-টাওয়াজও করবে। ওদের কয়েক জন ক্রিকেটারও গর্বিত থাকতে পারে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে। কিন্তু দুটো দলই জানে, এ বার ফর্ম্যাটটা আলাদা। দুটো দলের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারও বদলে গিয়েছে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপ আর অ্যাশেজ কিন্তু পুরোপুরি আলাদা। ছ’সপ্তাহ বাদেই সেটা বোঝা যাবে। এখানে পাঁচ টেস্টের কঠিন লড়াই হবে।
প্র: দুটো দলের বোলিং শক্তিকে যদি দাঁড়িপাল্লায় তোলেন, তা হলে কে এগিয়ে? এক দিকে, ব্রড, অ্যান্ডারসন, ওকস, জোফ্রা আর্চার, মইন আলি। অন্য দিকে, স্টার্ক, কামিন্স, হেজলউড, পিটার সিডল, নেথান লায়ন।
স্টার্ক: কোনও সন্দেহ নেই, ব্রড-অ্যান্ডারসনের অভিজ্ঞতা অনেক। ওকস, আর্চার— কাউকে হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না। তবে কারা এগিয়ে, সেটা সিরিজ শেষেই বোঝা যাবে। অ্যাশেজের পরে হয়তো দুটো দলকে নিয়ে কারও কারও ধারণাও পাল্টে যাবে। আমাদের দল নিয়ে বলতে পারি, আমরা পেসারদের গ্রুপটা খুব ভাল জায়গায় আছে। একে অন্যের সঙ্গে খেলাটা দারুণ উপভোগ করছি। একে অন্যের থেকে শিখছি।
প্র: একটা ভাল দলে বোলাররা সব সময় জুটি বেঁধে শিকার করে। আপনার কি সে রকম কোনও পছন্দের সঙ্গী আছে এই অ্যাশেজে?
স্টার্ক: ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। পরিসংখ্যানটা হয়তো বলতে পারব না, কিন্তু জানি কয়েক জন বোলার আছে যারা একে অন্যের সঙ্গে বল করে অনেক উইকেট তুলেছে। আমি জস হেজলউডকে সেই সাত-আট বছর থেকে চিনি। আমরা নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে শুরু করে বেশ কিছু বছর হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া দলে এক সঙ্গে খেলছি। অন্যতম প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে বোলিং ওপেন করতে পারাটা একটা দারুণ অনুভূতি। জসকে উল্টো দিক থেকে পাওয়া, ওর সঙ্গে বোলিং নিয়ে কথা বলতে পারাটা একটা দারুণ পাওনা।
প্র: শেষ প্রশ্ন। এ বারের বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন আপনি। ২৭টি। যা বিশ্বরেকর্ড। কাকে উৎসর্গ করতে চান এই কৃতিত্ব?
স্টার্ক: দু’জনের কথা বলতে চাই। শেষ ১২ মাসে যারা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বোলিং কোচ ডেভিড সাকের। তার পরে যখন চোট পেয়ে বাইরে ছিলাম, তখন নিউ সাউথ ওয়েলসের আন্দ্রে অ্যাডামস। অ্যাডামস আমার বোলিং এবং মানসিকতায় কিছু বদল এনেছিল। বিশ্বকাপে বোলিং কোচ অ্যাডম গ্রিফিথও সাহায্য করেছে। এই ভাবে ফিরে আসার জন্য এদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।
অ্যাশেজ: বৃহস্পতিবার থেকে প্রথম টেস্ট সরাসরি সোনি সিক্স চ্যানেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy