Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
John Buchanan

নেতৃত্ব কোহালির প্রেরণা, চাপ নয়: বুকানন

জন বুকানন

জন বুকানন

কৌশিক দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০৬:০৮
Share: Save:

তাঁর কোচিংয়ে অস্ট্রেলিয়া টানা ১৬টি টেস্ট জিতেছে। দু’বার বিশ্বকাপ। আবার আইপিএলে কোচিং করিয়ে ব্যর্থ। অনেকেই বলেন, শক্তিশালী দল পেলেই সফল হন তিনি। সেই অস্ট্রেলিয়া ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন কোচ জন বুকানন একান্ত সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারকে যা বললেন...

কোচিংয়ের মন্ত্র: আমার দর্শন হল, ক্রিকেটারদের কাছে জানতে চাওয়া— তোমার এভারেস্ট কী? কত উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যেতে চাও? সেটা জানার পরে, কাজ হল, লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য ওই ক্রিকেটারকে উদ্দীপিত করা। অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে ‘এভারেস্ট’ কিন্তু শুধু জেতা ছিল না। ‘এভারেস্ট’ ছিল খেলাটাকেই বদলে দেওয়া। প্রতিপক্ষের থেকে সব ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে থাকা।

বিরাটদের অস্ট্রেলিয়া সফর: অনেক কিছুই নির্ভর করবে, কোথায় টেস্ট ম্যাচ হবে। করোনার ধাক্কায় এখানে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মেলবোর্নে টেস্ট হবে বলে একেবারেই মনে হচ্ছে না। সিডনিও খুব সম্ভবত বাতিল হবে। একটা বায়ো-বাবল করে পার্‌থ এবং অ্যাডিলেডে টেস্ট হতে পারে। ব্রিসবেনেও। ভারতকে মাঠের চ্যালেঞ্জ সামলানোর আগে নিভৃতবাস, কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকার চ্যালেঞ্জটা সামলাতে হবে।

ভারতের বোলিং শক্তি: গত কয়েক বছরে ভারতের পেস আক্রমণ দারুণ ধারালো হয়েছে। গভীরতাও আছে। তাই মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ার পুরো শক্তির ব্যাটিংকেও ঝামেলায় ফেলার ক্ষমতা আছে ওদের। প্রশ্ন হল, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। সেটা ঠিক কী রকম থাকবে, এখন বলা কঠিন। তবে ব্রিসবেন, পার‌থের পরিবেশ দু’দলের বোলাররাই উপভোগ করবে। সেরা দলকে চারটে টেস্টেই নামাতে পারা যাবে কি না, তার উপরে সিরিজের ফল নির্ভর করবে।

কোহালি-স্মিথ তুলনা: কোভিড অতিমারির আক্রমণে ক্রিকেট স্তব্ধ হওয়ার আগে সেরার দৌড়ে দুটো নামই ছিল। বিরাট কোহালি এবং স্টিভ স্মিথ। দু’জনে টেকনিক্যালি যথেষ্ট শক্তিশালী। ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। যে কোনও সময়ে রক্ষণের খোলস ছেড়ে আক্রমণে যেতে পারে, আবার উল্টোটাও হয়। মানসিক ভাবে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে দু’জনে। কিন্তু কোহালির উপরে একটা বাড়তি দায়িত্ব আছে। অধিনায়কত্বের, যা এখন স্মিথের নেই। কিন্তু এই দায়িত্ব কোহালিকে চাপের মধ্যে ফেলেনি। বরং বলব, অধিনায়কের এই বাড়তি দায়িত্ব কোহালির ব্যাটিংকে আরও ভাল হতে সাহায্য করেছে। ধারালো করেছে।

বছর শেষের দ্বৈরথ: একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। কোহালি বা স্মিথ— কেউ কিন্তু ওই সিরিজের আগে বিশেষ ম্যাচ প্র্যাক্টিস পাবে না। বিশেষত, ক্রিকেটের দীর্ঘ ফর্ম্যাটে তো নয়ই। তাই দেখতে হবে কে কত তাড়াতাড়ি টেস্টে নিজের সেরাটা দিতে পারে। সেটাই হয়তো ঠিক করে দেবেকোহালি, স্মিথ না অন্য কেউ শেষ হাসি হাসবে বছরের শেষে।

দর্শক না থাকার সমস্যা: ক্রিকেটে সাফল্যের মঞ্চে উঠতে গেলে কঠিন মানসিকতার পরিচয় দিতে হয়। আর সেই মানসিকতার বড় অংশ হল, কোনও কিছুতেই মনঃসংযোগ নষ্ট না হতে দেওয়া। মাঠে দর্শক থাকুক, না-থাকুক, কিছুতেই মাথা ঘামানো চলবে না। এই তো সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দেখলাম, ক্রিকেটাররা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও তাই হবে। কোহালি হোক কী ডেভিড ওয়ার্নার— কারও কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

স্টিভ ওয়, রিকি পন্টিংদের সামলানো: স্টিভ, রিকি আর আমার, তিনজনের মতাদর্শন কিন্তু একই রকমের ছিল। স্টিভের মন্ত্র ছিল: সেই রাস্তায় হাঁটব, যে রাস্তায় কেউ সচরাচর হাঁটে না। আমার দর্শন ছিল: খেলাটাকেই বদলে দাও। রিকি আমাদের এই দুই দর্শনকে এক করে নিজের ফর্মুলা তৈরি করে নিয়েছিল। স্টিভ, রিকি আর আমার মধ্যে ভাল বোঝাপড়া ছিল। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা এগোতাম। তাই দলের দায়িত্বে কে, এই নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি তৈরি হত না।

আন্তর্জাতিক আর আইপিএল কোচিংয়ের চাপ: দু’টো দু’ধরনের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে একজন কোচ বছরে প্রায় ২৫০ দিন যুক্ত থাকে। আইপিএল আট সপ্তাহের দুরন্ত গতির প্রতিযোগিতা। এই ফর্ম্যাটে কী ভাবে একচেটিয়া আধিপত্য দেখানো যায়, তা কোনও দল বার করতে পারেনি। আইপিএলে মালিকেরা দলের উপরে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। সমর্থকেরা চায় প্রতিটা ম্যাচ জিততে। তাই কোচ হিসেবে আইপিএলে যা অভিজ্ঞতা হয়, তার তুলনা আর কিছুর সঙ্গে করা যায় না।

আইপিএলের স্মৃতি: প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝেছি্লাম, আইপিএলে আমি অপরিহার্য নই। অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবেও চাকরি যেতে পারত, কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমার হয়ে কথা বলত আমার রেকর্ড। কিন্তু আইপিএলে আমার কোনও ট্র্যাক রেকর্ড ছিল না। আমি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একটা দলের কোচিং করাচ্ছিলাম। যারা নিজেদের ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারত।

আইপিএলে ফেরার ভাবনা: আইপিএলের মতো কোনও টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় আমার কোচ হওয়ার সময় শেষ। তার মানে এই নয় যে, এটা শুধু তরুণ কোচেদের মঞ্চ। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আইপিএলের ধকল আমি আর নিতে পারব না।

অন্য বিষয়গুলি:

John Buchanan Cricket India Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy