তারকা: সোমবার মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে ইয়োহান ব্লেক। নিজস্ব চিত্র
পথ নিরাপত্তার জন্য ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড সিরিজ। আয়োজক মহারাষ্ট্র সরকার। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা যে লিগের কমিশনার আবার সুনীল গাওস্কর। যেখানে খেলার কথা সচিন তেন্ডুলকর, ব্রায়ান লারা, বীরেন্দ্র সহবাগ, ব্রেট লি, জন্টি রোডস-সহ ১১০ জন প্রাক্তন ক্রিকেটারের। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতার প্রচারেই ভারতে এসেছেন অলিম্পিক্সে জোড়া সোনা ও জোড়া রুপোর মালিক জামাইকার অ্যাথলিট ইয়োহান ব্লেক। ইউসেইন বোল্টের পরে যিনি বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম মানব। সোমবার বিকেলে নরিম্যান পয়েন্টের হোটেলে বসে আড্ডা দিলেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। যেখানে উঠে এল, আসন্ন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদক জয়ের সম্ভাবনা থেকে ক্রিকেট এবং তাঁর আগামী পরিকল্পনার কথাও।
প্রশ্ন: প্রথম বার কি ভারতে এলেন?
ব্লেক: হ্যাঁ। ভারত নিয়ে অনেক কথা শুনেছি ছোটবেলা থেকে। এ বার চলেই এলাম। উদ্দেশ্যটাও মহৎ।
প্র: একটু আগে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন বলছিলেন, পথ দুর্ঘটনায় ছেলেকে হারিয়েছেন। তাই তিনি এই বিশ্ব সিরিজের সঙ্গে রয়েছেন। আপনার ক্ষেত্রে তেমন কোনও ব্যক্তিগত ঘটনা রয়েছে?
ব্লেক: আজহারের জীবনের দুঃখের কথা শুনলাম। আমিও একবার জামাইকায় গাড়ির ধাক্কায় মারা যেতে বসেছিলাম। ভারতে তো শুনলাম প্রতি চার মিনিটে একজন পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। বছরে সেই সংখ্যাটা প্রায় দেড় লক্ষ। আর আহত হওয়ার সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ বছরে। তাই এই সিরিজের সঙ্গে আমি রয়েছি।
প্র: ইউসেইন বোল্টের পরে আপনি বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম মানব। আর তিনি বলছেন, গতিতে যতি টানতে?
ব্লেক: যতি টানতে বলিনি। আমাদের বার্তা গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। অনিয়ন্ত্রিত গতির জন্য বা পথ নির্দেশকা মেনে না চলার জন্য কত তাজা প্রাণ চলে যায়। যেমন আমার হতে বসেছিল। এটা বেশি হয় কম বয়সীদের। যারা যে কোনও দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ওদের জন্যই এই উদ্যোগ।
প্র: ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নামার আগেই আপনি নাকি ক্রিকেট খেলতেন?
ব্লেক: খেলতাম তো। স্কুল জীবনে এক বার দশ রানে চার উইকেট পেয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: রোনাল্ডোকে টপকে দুরন্ত মেসির ষষ্ঠ ব্যালন ডি’ওর জয়
প্র: তা হলে ক্রিকেট ছাড়লেন কেন? শেল্ডন কটরেলদের সঙ্গে তা হলে আপনাকেও তো আজ বল হাতে দৌড়াতে দেখতাম?
ব্লেক: আসলে ছোট থেকেই আমি জোরে দৌড়াই। স্কুলের স্যর একদিন বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিজগিজ করছে ক্রিকেটার। সেই ভিড়ে হারিয়ে যেতে চাস, নাকি জামাইকার অন্যতম সেরা অ্যাথলিট হতে চাস? আমি দ্বিতীয়টাকেই বেছে নিয়েছিলাম।
প্র: বোল্ট বিশ্বের দ্রুততম অ্যাথলিট। আপনি তো ওর ছায়াতেই থেকে গেলেন আজ পর্যন্ত। টোকিয়োতে বোল্ট নেই। আপনি কি এ বার ১০০ মিটারে সোনা নিয়ে ফিরবেন?
ব্লেক: ২০১২ সালের পর থেকে ডোপিং বিতর্ক, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য ছন্দে ছিলাম না। তার পরে ফের ছন্দে ফেরার চেষ্টা করেছি। বোল্ট যদি বিশ্বের দ্রুততম অ্যাথলিট হন, তা হলে আমি তো দ্বিতীয় দ্রুততম। এ বার বোল্ট নেই। তা হলে কে ১০০ মিটারে টোকিয়োতে সোনা পাবে, সেটা বুঝে নিন। ২০১২ সালে লন্ডনে কিন্তু আমি বোল্টকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলাম। বয়সটা ব্যাপার নয়। আসল কথা হল অভিজ্ঞতা। সেটা আমার রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান বিরুদ্ধে সিরিজ জিতল অস্ট্রেলিয়া, চ্যাপেলে বিদ্ধ স্মিথ
প্র: এত বছর জামাইকা অ্যাথলেটিক্স দলে বোল্টের সঙ্গে কাটিয়েছেন। ওঁর থেকে কী শিখেছেন?
ব্লেক: ইউসেইন বোল্ট অতিমানব। ওঁর থেকে শিখেছি স্বপ্ন দেখতে হবে। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য দিবারাত্র পরিশ্রম করতে হবে। অর্থের পিছনে না ছুটে স্বপ্নকে সফল করার চেষ্টা করো। তা হলে একদিন সফল হবে। সেই চেষ্টা তো দু’টো অলিম্পিক্সে করেছি। একটু খারাপ সময়ে জন্মে গিয়েছি। তাই বোল্টের মতো দৈত্যের সঙ্গে দৌড়াতে হয়েছে। এ বার মনে হচ্ছে বোল্ট-মন্ত্র কাজে লাগিয়ে আমার সফল হওয়ার পালা। টোকিয়োতে সোনা জিতলে সেটা ওঁকেই উৎসর্গ করব।
প্র: অলিম্পিক্সে ১০০ মিটারে আপনার সোনা জয়ের পথে প্রথম প্রতিপক্ষ কে হতে পারেন?
ব্লেক: ক্রিস কোলম্যান সব থেকে বড় প্রতিপক্ষ হতে পারে। আমি প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছি না।
প্র: শুনলাম আপনি বলছেন, ভারতে এসে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ছবি তুলবেন বলে নানা পরিকল্পনা করে রেখেছেন?
ব্লেক: শুধু ছবিই তুলব না। অটোগ্রাফটাও নেব। সঙ্গে সচিনকে বল করে দেখতেও চাই, ক্রিকেটের ভগবান আমার গতির কী মূল্যায়ন করেন।
প্র: ষাট, সত্তর ও আশির দশকের ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের মতো বিধ্বংসী কাকে মনে হয় ক্রিকেট বিশ্বে?
ব্লেক: ভিভিয়ান রিচার্ডস, কালিচরণদের মতো এখন ক্রিকেট শাসন করেন দু’জন। বিরাট কোহালি ও স্টিভ স্মিথ। দু’জনের ধারাবাহিকতাই কথা বলে। বিরাট দেখুন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রান পায়নি, ঠিক কলকাতায় গোলাপি বলে শতরান করে ফেলল। এটাই ক্যারিবিয়ান মানসিকতা। তুমি আজ আমাকে ব্যর্থ প্রমাণিত করলে, কাল আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে তোমাকে পর্যুদস্ত করে ছাড়ব। স্টিভ স্মিথও তাই।
প্র: সচিনকে বল করতে চান। বিরাট কোহালিকে বল করতে ইচ্ছে করে না?
ব্লেক: খুউউউব!
প্র: গোলাপি বলে ভারতের প্রথম টেস্টটা দেখলেন?
ব্লেক: ঘণ্টা বাজানো থেকে দেখেছি। সব গড়গড় করে বলতে পারব। ইডেন আমার খুব প্রিয় একটা মাঠ। ওখানে তো শুনেছি স্যার ফ্র্যাঙ্ক ওরেল দিবস পালিত হয়। ঠিক বলছি তো?
প্র: আপনি যে হোটেলে রয়েছেন। রবিবার রাতে সেখানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন। দেখা করলেন?
ব্লেক: হয়নি। তবে দেখা হলে একটা আবদার করব। সৌরভকে বলব ইডেনে একবার ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরু করতে চাই। আমি কিন্তু আনকোরা নই। আমি বিশ্বের একমাত্র অপেশাদার ক্রিকেটার যে, লর্ডসে ঘণ্টা বাজিয়ে ২০১২ সালের ১৬ অগস্ট ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শুরু করিয়েছিলাম। কাজেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্র: ভারতের কোন অ্যাথলিটকে চেনেন?
ব্লেক: হিমা দাস, দ্যুতি চন্দকে চিনি। হিমার সঙ্গে গত বছর গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমসে দেখা হয়েছিল। পরামর্শ চাইতে এসেছিল। ওকে বলেছি, দিনরাত এক করে খেটে যাও। সাফল্য পাবেই। আজ না হলেও কয়েক বছর পরেই পরিশ্রম ভাগ্য গড়ে দেবে।
প্র: অলিম্পিক্সের পরে কী পরিকল্পনা?
ব্লেক: অলিম্পিক্সের পরেই আমার দল নিয়ে ভারতে আসব। মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই যাব। সেখান থেকে দ্রুততম অ্যাথলিট খুঁজে বার করব। তার পরে তাদের বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy