Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মর্গ্যান

‘জোফ্রাদের সঙ্গে মাঠের বাইরেও মিশে গিয়েছি’

নির্বাচকেরাও আমাকে খুবই সমর্থন করেছিলেন। বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়ের মতো তরুণ ও আগ্রাসী ক্রিকেটারদের দলে নেওয়া শুরু হয়। কোচ হিসেবে যোগ দেন ট্রেভর বেলিস। তারপর থেকে পুরো ছবিটাই পাল্টে যেতে শুরু করে।

কাণ্ডারি: ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ইংল্যান্ড ক্রিকেটের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসেন মর্গ্যান। ফাইল চিত্র

কাণ্ডারি: ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ইংল্যান্ড ক্রিকেটের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসেন মর্গ্যান। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বে দুই অধ্যায় দেখেছে ইংল্যান্ড। ২০১৫-তে অধিনায়ক গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল বাংলাদেশের কাছে হেরে। ২০১৯-এ তিনিই প্রথম বিশ্বকাপ উপহার দিলেন ইংল্যান্ডকে। ভিন্ন অনুভূতির দুই বিশ্বকাপের মধ্যে চার বছরে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প, অনেক পরিশ্রম ও ক্রিকেট-দর্শনে পরিবর্তন। আবু ধাবি টি-টেন (দশ ওভারের প্রতিযোগিতা) লিগে খেলতে নামার আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর দলের নাটকীয় বিবর্তনের কাহিনি শোনালেন বিশ্বকাপজয়ী অইন মর্গ্যান। যাঁকে ইংল্যান্ড এবং ক্রিকেট বিশ্ব ডাকছে ‘ক্যাপ্টেন মর্গ্যান’ বলে।

প্রশ্ন: ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াল ইংল্যান্ড?

মর্গ্যান: আমাদের শেষ চার বছরের যাত্রা অসাধারণ। ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলাম। অবশ্য এই ব্যর্থতার দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমটি অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ, ক্রিকেটবিশ্বে ইংল্যান্ডকে কেউ সমীহ করছিল না। দ্বিতীয়টি পরিবর্তনের। সেই বিশ্বকাপের পরেই বদলের সুর এসেছিল আমাদের সকলের মধ্যেয় বুঝতে পেরেছিলাম বিশ্বের সেরা চারটি দলের ধারেকাছে আমরা নেই।

প্রশ্ন: পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ কী ছিল?

মর্গ্যান: ইসিবি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের যোগ দেওয়া। স্ট্রস এসেই জানিয়ে দিয়েছিল, অধিনায়ক আমিই থাকছি। এক দিন ইসিবি অফিসে আমাকে একটা সাদা কাগজ দিয়ে স্ট্রস বলেছিল, বিশ্বকাপ জেতার জন্য কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন সেটা লিখে ফেলো।

প্রশ্ন: ঘাবড়ে যাননি?

মর্গ্যান: অবশ্যই। শুরুতে বুঝতে পারিনি কী লেখা উচিত। কিন্তু স্ট্রসই আমাকে জিজ্ঞাসা করল, কাদের দলে নেওয়া হলে ক্রিকেটবিশ্বের কাছে ভয়ডরহীন হয়ে উঠবে ইংল্যান্ড! সে দিন থেকেই তরুণ ও আগ্রাসী ক্রিকেটার খোঁজা শুরু হয়। নির্বাচকেরাও আমাকে খুবই সমর্থন করেছিলেন। বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়ের মতো তরুণ ও আগ্রাসী ক্রিকেটারদের দলে নেওয়া শুরু হয়। কোচ হিসেবে যোগ দেন ট্রেভর বেলিস। তারপর থেকে পুরো ছবিটাই পাল্টে যেতে শুরু করে।

প্রশ্ন: পরিবর্তনের চার বছরে ট্রেভর বেলিসের ভূমিকা কী রকম ছিল?

মর্গ্যান: বেলিস আসার পরেই বলে দিয়েছিলেন, প্রত্যেকের মধ্যে আগ্রাসী মানসিকতা দেখতে চান। বিশ্বকাপের পরে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে আমরা হেরেছিলাম ঠিকই কিন্তু যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছিলাম, তা আগের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ওপেনার হিসেবে জেসন রয় দলে আসার পরে ‘পাওয়ার প্লে’-তেই অনেক রান হয়ে যেত। তার ফলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা নিজেদের স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেত। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে যা সে ভাবে ঘটেনি।

প্রশ্ন: ক্রিকেটীয় উন্নতির সঙ্গেই মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর বিশেষ ক্লাস করেছিল ইংল্যান্ড দল। শোনা যায়, নিউজ়িল্যান্ড রাগবি দলের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন?

মর্গ্যান: নিউজ়িল্যান্ড রাগবি দল কী ভাবে বিশ্বের সেরা হয়ে উঠেছিল, তা জানার ইচ্ছে ছিল প্রত্যেকের। ‘দ্য লেগাসি’ বইয়ে নিউজ়িল্যান্ড রাগবি দলের ইতিহাস যিনি তুলে ধরেছিলেন, তাঁর সঙ্গে অ্যান্ড্রু স্ট্রসই দেখা করিয়েছিল। নিয়মিত জেমস কারের ক্লাস করেছি বিশ্বকাপের আগে। আসলে এই ইংল্যান্ড দলে শুধু ইংরেজরাই খেলে না। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারেরা ইংল্যান্ড জার্সিতে খেলেছে। জেমস বলেছিলেন, দলের সকলের অধিনায়ক হয়ে ওঠার জন্য প্রত্যেকের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। যেমন জোফ্রা আর্চারের জন্ম বার্বেডোজে, ও রেগে সঙ্গীত পছন্দ করে। ওর সঙ্গে বসে বব মার্লির গান শুনতাম। জেসন রয় দক্ষিণ আফ্রিকান। ওরা খুব ভাল বার্বিকিউ বানাতে পারে। ওদের সঙ্গে আমিও বার্বিকিউ পার্টিতে যেতাম। এ ভাবেই প্রত্যেকে বুঝতে শুরু করেছিল যে, আমি শুধু টিম ইংল্যান্ডের অধিনায়কই নই, প্রত্যেকের দাদার মতো, বন্ধুর মতো। যেমন মাঠে নিজেদের সুবিধা, অসুবিধার কথা আমাকে বলা যায়, মাঠের বাইরেও তেমনই ভাল-মন্দের আলোচনা করা যায়।

প্রশ্ন: ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও নাকি আপনাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল?

মর্গ্যান: অবশ্যই। স্ট্রস আমাদের জন্য বিশেষ প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা করেছিল ম্যান সিটির বল রুমে। পেপ গুয়ার্দিওলার প্রশিক্ষণে যে ভাবে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা দেখে যে কেউ অনুপ্রাণিত হবে। কিন্তু কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই প্রক্রিয়াটা কিন্ত সবাই জানে না। সেটা আমার জানানোও উচিত না। শুধু বলতে পারি, উন্নত ফুটবলের জন্যই শুধু ম্যান সিটি এত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষ যখন একসঙ্গে লড়াই করে, সেখানেই তৈরি হয় এক অদ্ভুত শক্তি। সেই বোঝাপড়াই একটি দলকে শীর্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমরাও সেই পদ্ধতিতে এগিয়েছি।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১৭টি ছয় মেরে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। আগে যে ভাবে সুইপ ও রিভার্স সুইপের সাহায্যে রান করতেন, তা এখন দেখাই যায় না। উইকেটের সোজাসুজি শট খেলা শুরু করেছেন। বিশ্বকাপের আগেই কি টেকনিক নিয়ে কাজ করলেন?

মর্গ্যান: আমার এই উন্নতির পিছনে বেলিসের অবদান অনস্বীকার্য। উইকেটের আড়াআড়ি শট নেওয়ার সঙ্গেই লং-অন, লং-অফ অঞ্চল দিয়ে ছয় মারার অনুশীলন করাতেন বেলিস। আরও একটি পরিবর্তন হয়েছে। আগে ফিল্ডিং অনুযায়ী ব্যাট করতাম না। জানতাম, সুইপ ও রিভার্স সুইপ, কাট ও পুল আমার শক্তি। সেই শটের উপরে নির্ভর করেই ইনিংস গড়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু মার্ক রামপ্রকাশ আর গ্রাহাম থর্প বুঝিয়েছিলেন, শুধুমাত্র চারটি শটের উপরে নির্ভর করে খেলা যায় না। বিশেষ কোনও শট-নির্ভরতা থাকা ঠিক নয়। ওঁদের নির্দেশেই ফিল্ডিং অনুযায়ী শট বাছতে শুরু করি।

প্রশ্ন: আইপিএলে কেকেআর, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে খেলেছেন। কোন দলের জার্সিতে সব চেয়ে ভাল সময় কেটেছে?

মর্গ্যান: কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় অনেক কিছু শিখেছি। ২০০৯-এ ইংল্যান্ডে সুযোগ পাওয়ার পরের বছরেই আমাকে নিয়েছিল কেকেআর। জাক কালিস, ব্রেট লি-র মতো বিখ্যাত ক্রিকেটারদের থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। তা ছাড়া অন্য দলগুলোর চেয়ে নাইটদের হয়েই সব চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই সব সময় কেকেআর আমার মনে অন্য জায়গায় থাকবে।

প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্মকে কী বার্তা দিতে চাইবেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক?

মর্গ্যান: যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলো। নেট প্র্যাক্টিস তো করতে হবেই, তার সঙ্গে সমান ভাবে ম্যাচ খেলে যেতে হবে। এখন আর বাঁধাধরা ফিল্ডিংয়ের জায়গা নেই। সুতরাং ফিল্ডিং সাজিয়ে ব্যাট করাই সব চেয়ে ভাল অনুশীলন। উঠতি ক্রিকেটারদের বলব, মানসিক ভাবে তৈরি হওয়ার জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলো। অনায়াসে বড় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে খেলার সাহস তৈরি হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে আপনার সব চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত কোনটা?

মর্গ্যান: বেশ কয়েকটি ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি (হাসি)। তার মধ্যে অন্যতম, পাকিস্তান সিরিজে জোফ্রা আর্চারকে প্রথম একাদশে খেলানো। ফাইনালে সুপার ওভারে ওকে বল দেওয়ার চেয়েও এই সিদ্ধান্তটি বড়। দ্বিতীয়টি গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারের পরে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে জ্যাক লিচের খেলার কথা ছিল। আরও একটি ম্যাচ বিশ্রাম দেওয়ার কথা ছিল রয়কে। কিন্তু আমি শেষ চার বছরের ছন্দ নষ্ট হতে দিতে চাইনি। সাফ বলে দিয়েছিলাম, ভারতের বিরুদ্ধে জেসন রয়ই আমার দলের ওপেনার। বাকিটা ইতিহাস।

প্রশ্ন: বেন স্টোকস না কি অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফ? আপনার সেরা একাদশে কাকে জায়গা দেবেন?

মর্গ্যান: দুই প্রজন্মের দুই সেরা অলরাউন্ডারের মধ্যে কী করে বাছব! পারলে দু’জনকেই দলে রাখব। একান্তই যদি একজনকে নিতে হয়, তা হলে বর্তমান ফর্মের বিচারে স্টোকসই আমার একাদশে জায়গা পাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket England Eoin Morgan World Cup 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy