Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
হ্যাটট্রিকের পরের দিন একান্ত সাক্ষাৎকারে চাহার

‘বাবার সাধনায় তৈরি হয়েছি, মাহি ভাইয়ের কাছেও কৃতজ্ঞ’

লেংথে পরিবর্তন করে বল করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সেই সঙ্গেই চেষ্টা করছিলাম গতির হেরফের করে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে। 

আগ্রাসন: রবিবার নাগপুরে দীপকের আগুনে বোলিংই ভারতকে এনে দিল কাঙ্ক্ষিত টি-টোয়েন্টি ট্রফি। ফাইল চিত্র

আগ্রাসন: রবিবার নাগপুরে দীপকের আগুনে বোলিংই ভারতকে এনে দিল কাঙ্ক্ষিত টি-টোয়েন্টি ট্রফি। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ছোটবেলায়। বাবা লোকেন্দ্রসিংহ চাহারই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন ছেলে দীপক চাহারকে। ছেলের প্রতিভা আন্দাজ করতে পেরে আগ্রায় নিজের বাড়ির উঠোনেই টার্ফ ও কংক্রিটের উইকেট বানিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন লোকেন্দ্রসিংহ। ছেলেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য, বায়ুসেনার চাকরি ছেড়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি। কোচিংয়ের প্রাথমিক পাঠ না-থাকা সত্ত্বেও ইউটিউবে ম্যালকম মার্শাল ও ডেল স্টেনের ভিডিয়ো দেখে ছেলেকে তৈরি করেছেন। বাবার এই তাগিদই অনুপ্রেরণা ছেলে দীপকের কাছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাত রানে হ্যাটট্রিক-সহ ছয় উইকেটের স্পেল বাবাকেই উৎসর্গ করলেন তরুণ ভারতীয় পেসার। হ্যাটট্রিকের পরের দিনই নাগপুর থেকে কেরল যাওয়ার পথে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে বসেই আনন্দবাজারকে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন দীপক।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হ্যাটট্রিক। একই দিনে ভেঙে দিলেন শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিসের আট রানে ছয় উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। অনুভূতিটা কী রকম?

দীপক: এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ড্রেসিংরুমে ফিরতেই প্রত্যেকে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ভরসা রেখেছে অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ওর ভরসাই আমার সাহস দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। তবে আমার বাবা যদি ছোটবেলা থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না দিতেন, তা হলে এই দিনটা দেখা সম্ভব হত না। এই স্পেল বাবাকেই উৎসর্গ করতে চাই।

প্রশ্ন: সুইং বোলার হিসেবেই আপনি পরিচিত। কিন্তু নাগপুরে বল সুইং করছিল না। কী ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিলেন?

দীপক: সুইং‌ তো করছিলই না। সেই সঙ্গে বল ভেজাও ছিল। তাই সিম মুভমেন্টও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লেংথে পরিবর্তন করে বল করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সেই সঙ্গেই চেষ্টা করছিলাম গতির হেরফের করে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে।

আরও পড়ুন:ডেউচা-পাচামিতে ‘প্রতিরোধ’ গড়ার তোড়জোড়ে বিজেপি, সামনে রাখা হচ্ছে জনজাতি সাংসদদের

প্রশ্ন: আইপিএল খেলার সময়েই এই কৌশল রপ্ত করেছিলেন?

দীপক: একেবারেই তাই। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার সময়েই লেংথে পরিবর্তন করে বল করার পাঠ রপ্ত করেছি। চেন্নাইয়ে বল সুইং করে না। রাতে শিশিরও পড়ে। তাতে বল ভিজে যায়। লেংথের হেরফের করেই উইকেট পেতে হয় সেখানে। গত দু’বছর চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার সুবাদে লেংথ ও গতির হেরফের করে বল করার কৌশল অনায়াসে রপ্ত করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: সে ক্ষেত্রে এই সাফল্যের নেপথ্যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও কি ধন্যবাদ দিতে চাইবেন?

দীপক: অবশ্যই। যখন আমাকে কেউ চিনত না, তখন মাহি ভাই আমার উপরে ভরসা রেখেছিল। প্রথম বার আইপিএল খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল রাইজিং পুণে সুপার জায়ান্টসের হয়ে। গত দু’বছর তার নেতৃত্বেই চেন্নাইয়ের হয়ে খেলেছি। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই নতুন বল তুলে দেওয়া হত আমার হাতে। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম টি-টোয়েন্টিতে সুইং করানোর। সাধারণত টি-টোয়েন্টিতে পেসাররা সুইং করাতে চায় না মার খাওয়ার ভয়ে। ক্রস সিম ব্যবহার করেই বল করে অনেকে। কিন্তু মাহি ভাই সাহস দিয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে সুইং করানোর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের নেপথ্যে মাহি ভাইয়ের অবদান ভোলার নয়। বলা যায়, বাবার পরেই আমার জীবনে মাহি ভাইয়ের সব চেয়ে বড় অবদান।

প্রশ্ন: আপনার হ্যাটট্রিক বলটি ছিল ইয়র্কার। আমিনুল ইসলাম বোঝার আগেই বল আছড়ে পড়েছিল তাঁর অফস্টাম্পে। বাংলাদেশ সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ইয়র্কার উন্নত করার বিশেষ অনুশীলন করেছিলেন?

দীপক: টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই ইয়র্কার উন্নত করার পরামর্শ দিতেন বাবা। বাংলাদেশ সিরিজের আগেও প্রচুর ইয়র্কার অনুশীলন করেছি। কোনও কোনও দিন অনুশীলনে শুধু ইয়র্কারই করতাম। কিন্তু ম্যাচের দিন কোন ডেলিভারিতে উইকেট পাওয়া যাবে, সেটা বুঝতে পারা খুব জরুরি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বুঝতে পেরেছিলাম ওদের কোথায় সমস্যা।

প্রশ্ন: হ্যাটট্রিক বল করার সময়েই ইয়র্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

দীপক: শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল করতে যাওয়ার আগে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখলাম ‘হ্যাটট্রিক বল’ লেখা আছে। তার আগে জানতাম না, হ্যাটট্রিক হতে পারে। তখনই ঠিক করলাম, ইয়র্কার করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, উইকেট পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।

প্রশ্ন: সামনের বছরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই?

দীপক: বিশ্বকাপ খেলার জন্যই তো এত পরিশ্রম। দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন নিয়েই বাবা আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তুতি অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ সিরিজ শেষ। এ বার কি কয়েক দিন বিশ্রাম নেবেন?

দীপক: বিশ্রামের কোনও জায়গাই নেই। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি চলছে। তাই আগ্রার টিকিট না কেটে তিরুঅনন্তপুরমের পথে রওনা দিয়েছি। দেশকে সিরিজ জিতিয়েছি। এ বার রাজস্থানকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সময়।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India Bangladesh Deepak Chahar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy