লড়াকু: আগামী লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন শ্রীকান্ত। ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচন্দের উত্তরসূরি মনে করা হয় তাঁকে। ২০১৮-তে বিশ্বের এক নম্বর হয়ে ইতিহাস গড়ার পরেও চোটের জন্য পিছিয়ে পড়েছিলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতে প্রত্যাবর্তন। নিঃসন্দেহে ২০২১-এ ভারতের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কেমন গেল এ বছরটা? রুপো জিতলেন না সোনা হারালেন? কোভিডের সময় কতটা কঠিন খেলোয়াড়ের লড়াই? নতুন বছরের স্বপ্ন কী? সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কিদম্বি শ্রীকান্ত...
প্রশ্ন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জয়। কেউ বলছেন স্বপ্নভঙ্গ, কেউ বলছেন বড় প্রাপ্তি। আপনি কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
কিদম্বি শ্রীকান্ত: রুপো জিতে আমি খুবই খুশি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতা আমার বহু দিনের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন এ বার পূরণ হল। যে ভাবে খেলেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বছরটা যে রকম গিয়েছে, তাতে আমি খুশি।
প্র: বিখ্যাত একটা উক্তি আছে। তুমি রুপো জিততে পারো না, শুধু সোনা হারাতে পারো। কখনও কি সে ভাবে ভাবেন আপনি?
শ্রীকান্ত: না, আমি এই উক্তি সম্পর্কে জানি না। নিজে এ ভাবে ভাবিও না। আমার মতে, রুপো পাওয়াও একটা জয়। আমি তাই খুশি। একটা প্রতিযোগিতায় এক জনই তো চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। আমি নিশ্চয়ই সোনা জিততে চেয়েছিলাম, সোনা জিতলে আরও খুশি হতাম, সন্দেহ নেই। তবু, আমার কাছে এই রুপো জীবনের খুব বড় একটা জয়। ফাইনালে যে ভাবে খেলছিলাম, হয়তো দু’তিনটে পয়েন্ট এদিক-ওদিক হলে ফল ঘুরেও যেতে পারত।
প্র: কোভিডের এই কঠিন সময়ে খেলোয়াড়দের পক্ষে সেরাটা বার করে আনা কতটা কঠিন? জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে দিনের পর দিন থাকা মানসিক দিক থেকে কতটা প্রভাব ফেলে?
শ্রীকান্ত: সবচেয়ে প্রভাব পড়ছে প্রস্তুতিতে। লকডাউনে আটকে থেকেছি কত দিন। প্র্যাক্টিস করাই তো যাচ্ছিল না। তার উপরে কোভিডের পৃথিবীতে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে। আগের মতো শুধু যাও, খেলো, চলে এসো-র জীবন আর নেই। বারবার কোভিড টেস্ট করো, নথিপত্র জমা দাও, কোয়রান্টিন করো। তবে নিজের এবং সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে এগুলোর সঙ্গে তো মানিয়ে নিতেই হবে। আমি তিন মাসের উপরে জৈব সুরক্ষা বলয়ে কাটিয়েছি। এখন সয়ে গিয়েছে। আশা করব, ২০২২-এ পুরনো পৃথিবীতে ফিরতে পারব।
প্র: ভাইরাসের ভয় মনের মধ্যে নিয়ে নিজেকে তরতাজা, চাঙ্গা রাখার জন্য কিদম্বি শ্রীকান্তের মন্ত্র কী?
শ্রীকান্ত: আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রেরণা হচ্ছে, দেশের হয়ে টুর্নামেন্ট জেতা, পদক জেতা। ভাইরাস নিয়ে আমাদের হাতে সব কিছু নেই। যেগুলো আমরা করতে পারি, সেগুলো করে যাও। যেমন মাস্ক পরো, স্যানিটাইজ় করো, কখনও হাল্কা দিয়ো না। প্রতিষেধক নিতে দেরি করা যাবে না, কোনও বোকামি না করা। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যা যা বলা হচ্ছে, সেগুলো পালন করে যাওয়া।
প্র: ২০১৭-তে দুর্ধর্ষ গতিতে এগোচ্ছিলেন। তার পরে চোটের ধাক্কা...
শ্রীকান্ত: চোট-আঘাত খেলোয়াড়দের জীবনের অঙ্গ। কী ভাবে মানসিক শক্তি না হারিয়ে চোটের সঙ্গে লড়াই করতে পারলাম, সেটাই আসল। আমার সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছিল কোভিড অতিমারি। প্রস্তুতি, রিহ্যাব, খেলা সবই আটকে গিয়েছিল। কোনও টুর্নামেন্টই হচ্ছিল না। তাই চোট সারিয়ে ফিরতে বেশি সময় লাগল। অলিম্পিক্সে যেতে পারলাম না। কিন্তু আমি জানতাম, অলিম্পিক্সের পরেও আরও অনেক টুর্নামেন্ট আসবে। জানতাম, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আসবে। সেখানে ভাল করতে হবে। এখনও সামনে অনেক ভাল টুর্নামেন্ট রয়েছে। কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, তার পরেই আর একটা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। একই রকম পরিশ্রম করে যেতে চাই আর এই টুর্নামেন্টগুলো থেকে দেশের হয়ে পদক জিততে চাই।
প্র: অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা কত বড় ধাক্কা ছিল?
শ্রীকান্ত: হতাশ হয়েছিলাম ঠিকই কারণ অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা যে কারও কাছে বিরাট স্বপ্ন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার হাতে কিছু ছিল না। সেই সময়ে আমার র্যাঙ্কিং ছিল ১৪ আর নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ১৬ জনের মধ্যে থাকলেই অলিম্পিক্সের টিকিট নিশ্চিত। কিন্তু বিডব্লিউএফ (বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থা) বলল, এ বারে যে-হেতু অনেক টুর্নামেন্ট বাতিল হয়েছে কোভিডের জন্য, নতুন র্যাঙ্কিং হবে। যে কারণে আমার অলিম্পিক্সে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। সাত-আটটা টুর্নামেন্ট খেলতে না পারলে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট কোথা থেকে আসবে? যাক, ফেলে আসা সেই সময় ভুলে সামনের দিকে তাকাতে চাই। এখন আমি ভাল খেলছি আর আমার লক্ষ্য, ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য ধরে রাখা।
প্র: সে দিক দিয়ে এই রুপো কি আশ্বাসের অক্সিজেন ফিরিয়ে দিয়ে গেল যে, সেরার শৃঙ্গ জয় করা সম্ভব?
শ্রীকান্ত: ইয়েস, আমি তাই বলব। এখন আমার লক্ষ্য, নিজেকে আরও বেশি পদক জয়ের দিকে ঠেলা। পরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফেলে আসা সোনাটার জন্য অবশ্যই ঝাঁপাতে চাই। জীবনে অনেক পদক জয়
এখনও বাকি।
প্র: অনেকে বাতিল ঘোড়া বলে দিয়েছিলেন আপনাকে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের রুপো কি তাঁদের যোগ্য জবাব?
শ্রীকান্ত: সত্যি কথা বলতে কী, কারও কাছে কিছু প্রমাণ করতে চাইনি। আমি নিজের যোগ্যতায় বিশ্বাস রাখি আর জানি, কতটা পরিশ্রম করছি ভাল ফলের জন্য। কাউকে জবাব দেওয়ার নেই। ২০২২-এ অনেক ভাল টুর্নামেন্ট রয়েছে, সেগুলোতে ভাল ফল করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। দেশের হয়ে পদক জেতায় মন দিতে চাই। আমি জানি, নিজের উপরে বিশ্বাস রেখে যদি পরিশ্রম করে যেতে পারি, ঠিক নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারব।
প্র: প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচন্দের মতো কিংবদন্তিদের কাহিনি, সাফল্য থেকে কতটা প্রেরণা পান?
শ্রীকান্ত: দু’জনেই সর্বকালের সেরাদের গ্রহে রয়েছেন। দুই সেরা কিংবদন্তি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে গোপী স্যরকে খুব পছন্দ করি। উনি নিজে খেলোয়াড় হিসেবে দারুণ সফল তো বটেই, কোচ হয়েও অনেক খেলোয়াড়কে নিজে হাতে তৈরি করেছেন।
প্র: অন্য কোন খেলা দেখেন? অন্য খেলার কাউকে আপনার ভাল লাগে?
শ্রীকান্ত: আমি ক্রিকেট আর টেনিস দেখতে পছন্দ করি। ধোনি আর রজার ফেডেরারকে খুব ভাল লাগে।
প্র: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আপনার সঙ্গে লক্ষ্য সেনের হাড্ডাহাড্ডি সেমিফাইনাল হল। বিশ্ব মঞ্চে দুই ভারতীয় সেমিফাইনাল খেলছে, কতটা উপভোগ করলেন এই মুহূর্ত? নতুন প্রতিভা লক্ষ্যের উত্থান নিয়ে কী বলবেন?
শ্রীকান্ত: লক্ষ্য খুব ভাল খেলছে। অল্প বয়স। আশা করব, এই ছন্দ ধরে রাখবে। ভবিষ্যতে অনেক পদক, অনেক টুর্নামেন্ট জয় ওর জন্য অপেক্ষা করছে। বলা যায়, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে দুই ভারতীয়ের সেমিফাইনাল ছিল একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বপ্ন সফল হওয়ার মতো মাহেন্দ্রক্ষণ। সেই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি খুবই
খুশি হয়েছিলাম।
প্র: কিদম্বি শ্রীকান্তের লক্ষ্য কী? কোন চাঁদমারি তিনি তাক করছেন? কী সেই শৃঙ্গ, যা তিনি জয় করতে চান?
শ্রীকান্ত: আমার স্বপ্ন, ২০২৪ অলিম্পিক্সে পদক জেতা। তবে এই মুহূর্তে সামনে যে সব টুর্নামেন্ট রয়েছে, সেগুলোতে ভাল করাই লক্ষ্য। ইন্ডিয়ান ওপেন আসছে, সৈয়দ মোদী রয়েছে। মার্চে আরও টুর্নামেন্ট রয়েছে। এগুলোতে খেলে নিজের ভুলভ্রান্তি বুঝতে হবে, নিজেকে তৈরি করতে হবে আগামী দিনের নতুন
লড়াইয়ের জন্য।
প্র: নিউ ইয়ার রেজ়োলিউশন কী?
শ্রীকান্ত: ডায়েট নিয়ে আরও কঠোর হওয়া। অনুশীলনে আরও শৃঙ্খলা, অনুশাসন আনা। ২০২২-এ আরও ফিট কিদম্বি শ্রীকান্তকে কোর্টে
উপস্থিত করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy