Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
প্রকাশ স্যরের কাছে কৃতজ্ঞ
Lakshya Sen

Lakshya Sen: প্রথম দশের মধ্যে ঢুকে পড়াই লক্ষ্য, একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন লক্ষ্য সেন

ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের উদিত সূর্য তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ব্রোঞ্জ জিতে ফিরেছেন।

প্রতিভা: কুড়িতেই বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে নজর কেড়েছেন লক্ষ্য।

প্রতিভা: কুড়িতেই বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে নজর কেড়েছেন লক্ষ্য। ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১০
Share: Save:

ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের উদিত সূর্য তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ব্রোঞ্জ জিতে ফিরেছেন। আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় লক্ষ্য সেন।

প্রশ্ন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সময় আপনার লড়াকু মানসিকতার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তা দেখে আপনার কী রকম প্রতিক্রিয়া হয়?

লক্ষ্য সেন: সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কী-ই বা বলতে পারি! আমি ধন্য যে, এত মানুষের সমর্থন পেয়েছি, এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়া এই ভালবাসা আমাকে ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, আগামী দিনে আরও ভাল খেলার জন্য।

প্র: তরুণ বয়সেই আপনার হার-না-মানা মানসিকতার প্রশংসা করছেন অনেকে। এই লড়াইয়ের মন কী ভাবে তৈরি হল?

লক্ষ্য: এটা কিন্তু অতি সম্প্রতি যোগ হয়েছে আমার খেলায়। আমি আগ্রাসন আনার চেষ্টা করেছি কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হয়েছে যে, ব্যাডমিন্টনে ধৈর্যও রাখা দরকার। লম্বা র‌্যালিও তো জিততে হবে। গতিটা তুলতে হবে ঠিক সময়ে। এই উপলব্ধিগুলো আমার খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। দেখুন, যত বেশি খেলব, যত বেশি উচ্চ পর্যায়ে লড়াই করতে পারব, তত আমি শিখব। এটা একটা প্রক্রিয়া। মনস্তাত্ত্বিক দিক সেই প্রক্রিয়ার একটা বড় অঙ্গ।

প্র: বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে যেমন ম্যাচ পয়েন্ট হারানোর মুখ থেকে দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে জিতলেন...

লক্ষ্য: একদমই তাই। কোয়ার্টারে সেই সময় এসপার-ওসপার মুহূর্ত। ওই পয়েন্টটা প্রতিপক্ষের থেকে কেড়ে নিতেই হবে, না হলে টুর্নামেন্টই শেষ। ওখানে মানসিক শক্তিটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমি খুশি যে, সেই অদম্য মনোভাবটা দেখাতে পেরেছি। তার আগে প্রথম রাউন্ডেও বেশ কঠিন ম্যাচ খেলেছিলাম। এই মানসিক দৃঢ়তাটা যত সময় যাবে, তত বেশি আসবে। যত খেলব, তত শিখব।

প্র: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম বার খেলতে নেমে ব্রোঞ্জ। কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই পারফরম্যান্সকে?

লক্ষ্য: বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপে খেলতে নামা এবং ব্রোঞ্জ জেতা খুবই উপভোগ করেছি। এত বড় একটা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে খুব ভাল ভাবে তৈরি করতে হয়েছিল। বিশেষ করে মানসিক প্রস্তুতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, এই সব সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে মানসিক গঠনটা তফাত গড়ে দিয়ে যায়।

প্র: ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের বিস্ময় প্রতিভা বলা হচ্ছে আপনাকে। এত অল্প বয়সে এই প্রচারের আলো, শিরোনামে থাকা, তারকা হয়ে ওঠা— কী ভাবে এ সব সামলাচ্ছেন। প্রত্যাশার চাপ অনুভব করতে পারছেন?

লক্ষ্য: আমি মনে করি, এটা বাড়তি দায়িত্ব। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ভাল খেলতে থাকলে মানুষ আপনার থেকে ভাল ফল প্রত্যাশা করতে শুরু করবে। সেটা তো ঠিকই আছে। যেমন গত দু’মাসে আমি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনাল্‌স আর বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেললাম। এর পর যেখানেই খেলব, আমার কাছে ভাল ফল প্রত্যাশা করবেন সমর্থকেরা। মনে রাখা দরকার, এই সমর্থন, প্রত্যাশা, ভালবাসাটা কিন্তু সকলের ভাগ্যে জোটে না। দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার সৌভাগ্য ক’জনের হয়? আমি সেই কতিপয় খেলোয়াড়দের এক জন। প্রত্যাশায় কুঁকড়ে যাব কেন, বরং আরও চনমনে, গর্বিত হয়ে কোর্টে নামব।

প্র: কিদম্বি শ্রীকান্তের সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

লক্ষ্য: আমরা একসঙ্গে অনেক প্র্যাক্টিস করেছি। কিন্তু মুখোমুখি হওয়াটা সম্পূর্ণ অন্য রকম অনুভূতি ছিল। আমরা দু’জনেই আগ্রাসী ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করি। দু’জনেই নেটের সামনে আক্রমণাত্মক থাকার চেষ্টা করি। স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে, ম্যাচে কেমন জোর লড়াই হয়েছিল। লম্বা র‌্যালি হয়েছিল। শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাও নিয়েছিল ম্যাচটা।

প্র: শ্রীকান্তের সঙ্গে ওই ম্যাচটার পরেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন। হেরে কি খুব ভেঙে পড়েছিলেন?

লক্ষ্য: হ্যাঁ, ফাইনালে যেতে পারলাম না বলে সেই সময় সত্যিই খুব হতাশ লাগছিল। তার পরে নিজেকে বোঝাই যে, প্রথম বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে এসে আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। খুব খারাপ করিনি। ভেঙে না পড়ে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। কেন্তা নিশিমোতো, ঝাও জুন পেংকে হারানোটা নিঃসন্দেহে আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। সেই সঙ্গে ব্রোঞ্জ জয়। শেষ পর্যন্ত খুশি মনেই ফিরেছি আমি।

প্র: আপনার উত্থানে প্রকাশ পাড়ুকোনের ভূমিকা কী? প্রকাশ অ্যাকাডেমিতেই ব্যাডমিন্টনে শিক্ষা লাভ?

লক্ষ্য: প্রকাশ স্যর কিংবদন্তি। ওঁর আশীর্বাদ, সমর্থন, শিক্ষা পাওয়াটা পরম সৌভাগ্য। দশ বছর হয়ে গেল আমি প্রকাশ পাড়ুকোন অ্যাকাডেমিতে রয়েছি। ওখানে যোগ দেওয়ার পর থেকে শুধু উন্নতি আর উন্নতিই করেছি। খালি প্রকাশ স্যরই নন, বিমল স্যরও (বিমল কুমার) আমার খেলার উন্নতি ঘটানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। অনেক সময় দিয়েছেন। তাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জটা নিয়ে অ্যাকাডেমিতে ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছিল।

প্র: ২০১৭-তে বিশ্বের জুনিয়র এক নম্বর হলেন। তার পর থেকে আপনার যাত্রা শুধুই উর্দ্ধগামী। লক্ষ্য সেনের জীবন কতটা পাল্টেছে?

লক্ষ্য: আমি মানুষটা একই রকম আছি। একদমই পাল্টাইনি। হয়তো লোকে এখন বেশি করে আমার নাম জানে। হয়তো বেশি পরিচিত হয়েছি। প্রত্যাশা বেড়েছে। আমার মধ্যেও দায়িত্ববোধ বেশি এসেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি সেই ছেলেটাই আছি যে কি না মার্ভেল ফিল্মস দেখতে ভালবাসে। প্লে স্টেশনে বুঁদ হয়ে থাকতে চায়।

প্র: আপনার পদবী সেন। আপনারা কি বাঙালি?

লক্ষ্য: অনেকেই এই প্রশ্নটা আমাকে করে। কিন্তু আমরা উত্তরাখণ্ডের কুমায়ন থেকে এসেছি। সেটা দারুণ একটা গ্রাম। বাঙালি যোগাযোগের কথা কখনও শুনিনি।

প্র: আপনার জন্ম তো আলমোরায়। সেখান থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে যাত্রাটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

লক্ষ্য: আলমোরায় আমার জন্ম ঠিকই। ওখানে প্র্যাক্টিসও করেছি। ওখানকার মানুষ আমাকে খুব সমর্থন করেছেন। ভাবতে ভালই লাগে যে, উত্তরাখণ্ডে খুব বড় রকমের খেলার রীতি ছিল না। সেখান থেকে আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনো, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ। যুব অলিম্পিক্সে সোনা। বিশ্বাস করতে চাইব, সঠিক পথেই এগোচ্ছি। আর এ ভাবেই এগিয়ে যেতে চাই।

প্র: লক্ষ্য সেনের এর পরের লক্ষ্য কী?

লক্ষ্য: পরের বছর র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে ঢুকে পড়তে চাই। তার আগে চাই, সব টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করতে। ইন্ডিয়ান ওপেন আসছে, কমনওয়েলথ রয়েছে। সেখানে ভাল করতে হবে। আমি মনে করি, যদি ধারাবাহিকতা আনতে পারি, পদক ঠিকই আসবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Lakshya Sen badminton Prakash Padukone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy