স্বপ্ন: বাস্তুহারাদের নিয়ে বনির লড়াই চলছে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
ফাঁকা রেলওয়ে স্টেশনে রাতের অন্ধকারে একা কাঁদতে দেখে পুলিশ তাকে নিয়ে গিয়েছিল থানায়। কোথায় বাড়ি জানতে চাওয়ায় বলতে পারেনি শিবু হালদার। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল শুধু।
বাবা-মা একসঙ্গে আত্মহত্যা করার পর মামার বাড়ির আশ্রয়ে থাকার সময় শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বছর ছ’য়ের বিরাজ মণ্ডল। দিকভ্রান্ত হয়ে শুয়ে ছিল গঙ্গার পাড়ের বেঞ্চিতে। প্রাতঃভ্রমণে আসা একদল পথচারী তাকে উদ্ধার করে তুলে দেয় সমাজকল্যাণ কর্মীদের হাতে।
বাদল বাউরির বয়স যখন ছয় বছর, অভাবের তাড়নায় তাকে বসিরহাটের বাসে বসিয়ে রেখে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তার মা। এখন ষোলো বছর বয়সেও বাদল বলতে পারে না তাদের বাড়ি কোথায়।
সেই শিবু, বিরাজ, বাদলদের (সব নামই পরিবর্তিত) এখন ফুটবল পাঠ দিচ্ছেন বন্দনা পাল ওরফে বনি পাল। দেশের একমাত্র রূপান্তরকামী মেয়ে ফুটবল তারকার কোচিংয়ে ঠিকানাহীন একদল ছেলে খুঁজছে বেঁচে থাকার উন্মুক্ত আকাশ। চমকপ্রদ এই ঘটনা ঘটছে বারাসতের কিশলয় সরকারি হোমের মাঠে। রোজ সকালে।
আরও পড়ুন:অফিসে উপস্থিতি কম, চাকরি গেল ফুটবলার সিকে বিনিথের
বাংলা শেষ বার মেয়েদের জাতীয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। বন্দনা পালের সোনালি গোলে। কিন্তু তিনি ছেলে না মেয়ে, সেই বিতর্কে আটকে ফুটবল জীবনটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল গোবরডাঙার মেয়ে স্ট্রাইকারের। বেঁচে থাকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন ঠাকুর গড়ার কাজ। পাশাপাশি শুরু করেছিলেন ফুটবল কোচিংও। ২০০৭ সালে মহিলা থেকে পুরুষ হয়ে যান বন্দনা। রূপান্তরের পর বন্দনা হয়ে যান বনি। বিয়েও করেন। নাটকীয় এই চরিত্রকে নিয়ে তৈরি হয় ‘আই অ্যাম বনি’ তথ্যচিত্র। যা কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পায় গত বার।
আর এই তথ্যচিত্রই বনিকে নাটকীয়ভাবে নিয়ে আসে কিশলয়ের মাঠে। ঠিকানাহীন ছেলেদের কোচিং করাতে এসে কেমন লাগছে? উচ্ছ্বসিত বনি বলছিলেন, ‘‘ছেলেগুলোর চেষ্টা আর শেখার ইচ্ছা আমাকে অবাক করেছে। অন্তত ছ’টা ছেলেকে পেয়েছি যাদের স্কিল খুব ভাল। কলকাতা লিগে খেলতে পারে।’’ তার পরেই যোগ করলেন, ‘‘মেসি থেকে রোনাল্ডো, বার্সেলোনা থেকে রিয়াল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সব ওদের মুখস্থ। আমি বেশ উপভোগ করি।’’
হোমের আধিকারিকরা ঠিক করেছেন বনিকে দিয়ে কোচিং করিয়ে ভাল একটা টিম করে পরের মরসুমে আইএফএ-র লিগে খেলাবেন। সে জন্য রাজ্য ফুটবল সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy