মহড়া: আজ কেনদের বিরুদ্ধে নামছেন মদ্রিচরা। গেটি ইমেজেস
তিন বছর আগে মস্কোয় ক্রোয়েশিয়ার কাছেই সেমিফাইনালে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট নিশ্চয়ই ভোলেননি নিদ্রাহীন রাতগুলি। সেই হারের পরের রাতেও ভোর চারটে পর্যন্ত জেগে তিনি সেমিফাইনাল ম্যাচের রিপ্লে দেখছিলেন। কোথায় ভুল হয়ে গেল? তখন বলেও ফেলেছিলেন ইংল্যান্ডের ম্যানেজার, ‘‘এই দুঃখ সারা জীবন হয়তো সঙ্গী হবে।’’
দুঃখ মেটানোর সুযোগ রবিবার থেকে পাচ্ছেন সাউথগেট এবং তাঁর দল। এবং, অভিযানের শুরুতেই সামনে সেই ক্রোয়েশিয়া। যারা মস্কোতে ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে ২-১ হারিয়ে দিয়েছিল। এবং, সেই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার নায়ক লুকা মদ্রিচ রবিবারেও হাজির থাকছেন প্রতিপক্ষের তুরুপের তাস হিসেবে। মদ্রিচের দক্ষতায় সে দিন মস্কোতে ইংল্যান্ডকে মাঝমাঠের দখল পেতে দেয়নি ক্রোয়েশিয়া। তিন বছর পরে হ্যারি কেন-রা কি পারবেন পাল্টা জবাব দিতে? ও দিকে যেমন মদ্রিচ, ইংল্যান্ডে কেমনই কেন। একজন মাঝমাঠের শিল্পী। অন্য জন গোলমেশিন। ইউরোর মঞ্চে ফের মুখোমুখি আজ। ফুটবলবিশ্ব আগ্রহভরে অপেক্ষায় সেই দ্বৈরথের।
অন্যতম ফেভারিট হিসেবে এ বারে ইউরো অভিযানে নামছে ইংল্যান্ড। তাই সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এ বারে কি ঘরের মাঠে, ঐতিহাসিক ওয়েম্বলিতে ফাইনাল খেলতে পারবে তারা? ১৯৬৬-র সেই সোনালি অতীত কি ফিরিয়ে আনতে পারবে সাউথগেটের দল? রাশিয়া বিশ্বকাপে অনেক সহজ গ্রুপ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। এখানে সে সব বিলাসিতা নেই। স্কটল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড এমনিতেই বরাবরই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ম্যাচ। যোগ্যতা অর্জন পর্বে চেক প্রজাতন্ত্র হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সব চেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ।
ইংল্যান্ডের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট অবশ্য আক্রমণের পন্থাই বেছে নিচ্ছেন লুকা মদ্রিচদের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাহিম স্টার্লিংকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাউথগেট। স্টার্লিং দেশের হয়ে ছন্দে থাকলেও সম্প্রতি ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে তাঁর জায়গা হারিয়েছেন। কিন্তু যা ইঙ্গিত, ইউরোর প্রথম ম্যাচে তাঁকে বাইরে রাখার কথা ভাবছেন না সাউথগেট। আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ানোর জন্য তিনি অতিরিক্ত স্ট্রাইকার খেলিয়েও চমক দিতে পারেন। হ্যারি কেন অবশ্যই মধ্যমণি হয়ে থাকছেন। সঙ্গে স্টার্লিং এবং মেসন মাউন্ট মোটামুটি নিশ্চিত। মার্কাস র্যাশফোর্ড, ফিল ফোডেন এবং জ্যাক গ্রিলিশের মধ্যে থেকে এক জনকে বেছে নিতে হতে পারে সাউথগেটকে। তিন জনের মধ্যে ইংল্যান্ড ম্যানেজারের সব চেয়ে পছন্দের নাম যে র্যাশফোর্ড, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যান সিটিতে দুরন্ত উত্থান ঘটা ফোডেনকে বাইরে রাখার বিরোধী অনেক বিশেষজ্ঞ।
ইংল্যান্ডের রক্ষণে সব চেয়ে বড় ভরসা হ্যারি ম্যাগুয়েরকে নিয়েও আশা কথা শোনা যাচ্ছে। গোড়ালির চোট থেকে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খেলানোর জোর চেষ্টাও করা হতে পারে। মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসনেরও চোট। তাঁর অনুপস্থিতি আর একটা বড় ধাক্কা ইংল্যান্ডের জন্য।
সাম্প্রতিক অতীতে তাদের দেশের সংবাদমাধ্যম প্রায়ই জাতীয় দলকে নিয়ে হইচই করেছে। কিন্তু বিশ্বমানের কোনও প্রতিযোগিতা জেতা হয়নি ইংল্যান্ডের। ২০০৪ ইউরোতে ক্রোয়েশিয়াকেই ৪-২ হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করে ইংল্যান্ড। উত্থান ঘটে ওয়েন রুনির। কিন্তু সেই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১৬ ইউরোতে আইসল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা। ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়। ২০১৮ বিশ্বকাপে সাউথগেটের দলকে এ রকমই বলা হচ্ছিল, ১৯৬৬-র পরে সেরা প্রজন্ম। কিন্তু শেষ চার
থেকেই বিদায়।
তিন বছর আগের সেই স্বপ্নভঙ্গের মতোই এ বারও ইংল্যান্ডের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন মদ্রিচ। রাশিয়া বিশ্বকাপের পরে ক্রোয়েশিয়ার চার জন বড় ফুটবলার অবসর নিয়েছেন। তার মধ্যে সব চেয়ে বড় নাম ইভান রাকিতিচ এবং মারিয়ো মাঞ্জুকিচ। কিংবদন্তি দাভর সুকেরের (৪৫) পরে ক্রোয়েশিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতা মাঞ্জুকিচ (৩৩)। রাকিতিচ ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সব চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলারদের তালিকায় চতুর্থ। কিন্তু মদ্রিচ এখনও রয়েছেন দলের ইঞ্জিন হয়ে। তিন বছর আগে রাশিয়ায় সেরা ফুটবলার হিসেবে সোনার বল জেতা তারকার নিখুঁত ফুটবল থামাতে পারেন কি না চাণক্য সাউথগেট, সেই পরীক্ষাও হবে। ইংল্যান্ডের মেসন মাউন্টই যেমন মদ্রিচের ভক্ত। নেশ্নস লিগের ম্যাচের পরে মদ্রিচের সঙ্গে জার্সি বদল করে যিনি বলেছিলেন, ‘‘টটেনহ্যামে খেলার দিন থেকে ওঁকে দেখেই আমার ফুটবল স্বপ্ন গড়ে উঠেছে। ছোটবেলা থেকেই আমি মগ্ন হয়ে ওঁর খেলা দেখেছি।’’ রাকিতিচের ভূমিকায় এ বার দেখা যেতে পারে মাতেয়ো কোভাসিচকে। ইংল্যান্ডের নতুন তারা মেসন মাউন্টকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সরবরাহ করতে পারেন চেলসিতে তাঁর সতীর্থ কোভাসিচ। এ দিন ইংল্যান্ডের অনুশীলনের সময়ে আবার দেখা গেল, অভিনব ভঙ্গিতে আকাশে বিশেষ ব্যানার ওড়ানো বিমান ঘুরছে। তাতে পরামর্শ লেখা, ‘‘ক্রোয়েশিয়ার বেশির ভাগ গোল আসে কিন্তু বাঁ দিক থেকে।’’ আকাশপথে আসা পরামর্শে কি ভাগ্য
খুলবে হ্যারি কেনদের?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy