হ্যারি কেন। ফাইল চিত্র।
পঞ্চান্ন বছর আগের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জার্মানিকে ৪-২ হারিয়ে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়। আমার বয়স তখন মাত্র দশ বছর হলেও স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল। আজ, রবিবার সেই ওয়েম্বলিতেই প্রথম বার ইউরো ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষ সম্পূর্ণ ভাবে বদলে যাওয়া ইটালি। তাই অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও আমার মন পড়ে ইংল্যান্ডেই।
১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল লন্ডনের সময় দুপুর দু’টোয়। খুব সকালেই আমরা চলে গিয়েছিলাম ঠাকুরমার বাড়িতে। একটা ঘরে দশ জন একসঙ্গে বসে খেলা দেখেছিলাম সাদা-কালো টেলিভিশনে। উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠার মিশ্রণে অদ্ভুত আবহ তৈরি হয়েছিল। ম্যাচের ১২ মিনিটে হেলমুট হালারের গোলে জার্মানি এগিয়ে যাওয়ার পরে স্তব্ধতা নেমে এসেছিল। ছ’মিনিটের মধ্যে জেফ হার্স্ট সমতা ফেরানোর পরেও ছবিটা বদলায়নি।
উৎসব শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ড ৪-২ জেতার পরে। লন্ডনের সমস্ত রাস্তাই যেন মুহূর্তের মধ্যে ফুটবল মাঠে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কেউ আনন্দে চিৎকার করে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। কেউ আবার গান গাইছিলেন। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কতটা গৌরবের তখন বুঝতে না পারলেও উপলব্ধি করেছিলাম, ঐতিহাসিক কিছু একটা ঘটে গিয়েছে। আমাদের পরিচিত যাঁরা ওয়েম্বলিতে গিয়েছিলেন ফাইনাল দেখতে, তাঁরা যখন ফিরলেন উৎসবের মাত্রা যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। সে দিনই ঠিক করেছিলাম, বড় হয়ে আমিও স্টেডিয়ামে গিয়ে ইংল্যান্ডের ট্রফি জয় দেখব।
১৯৬৬-র বিশ্বকাপ জয়ের পরে এত দিন কোনও প্রতিযোগিতারই ফাইনালে উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৫৫ বছর পরে অবশেষে শাপমুক্তি। কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান হল না। আমি এখন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। ইচ্ছে থাকলেও ওয়েম্বলিতে বসে ইউরো ২০২০-র ফাইনাল দেখার উপায় নেই। এ বারও ভরসা সেই টেলিভিশন।
ইটালি মানেই রক্ষণাত্মক ফুটবল, এই ধারণাটা রবের্তো মানচিনি ভেঙে দিয়েছেন। চিরো ইমমোবিলে, ফেদেরিকো কিয়েসা, লোরেনজ়ো ইনসিনিয়েরা আক্রমণের ঝড় তুলছে। মাঝমাঠে অসংখ্য পাস খেলছে জর্জে লুইজ় (জর্জিনহো), মার্কো ভেরাত্তিরা। ইটালীয় রক্ষণের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে জর্জে কিয়েল্লিনি, লিয়োনার্দো বোনুচ্চিরা। চোখ ধাঁধানো বৈচিত্র। তবে লিয়োনার্দো স্পিনাজ্জোলার না থাকাটা বড় ধাক্কা ইটালির জন্য।
তবুও ইংল্যান্ডকে কোনও ভাবেই পিছিয়ে রাখছি না। গ্যারেথ সাউথগেটও দলটা সুন্দর ভাবে গড়ে তুলেছে। এই প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত মাত্র একটাই গোল খেয়েছে ইংল্যান্ডের রক্ষণ। সেটাও সেট-পিস থেকে। আশা করব, ইমমোবিলেদের বিরুদ্ধে সফল হবে জন স্টোনস, কাইল ওয়াকাররা।
ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের গত মরসুমটা ভাল যায়নি এভার্টনের হয়ে। ওকে দলে ডাকা নিয়ে সাউথগেট প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন। ও-ই সেমিফাইনালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ম্যাচে পিছনে ফেলে দিয়েছে কিংবদন্তি গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাঙ্কসকে। ইংল্যান্ডের হয়ে সব চেয়ে বেশি সময় (৭২০ মিনিট) গোল না খাওয়ার নজির এত দিন ছিল ব্যাঙ্কসের দখলে। পিকফোর্ড ৭২১ মিনিট গোল খায়নি। হ্যারি কেন গ্রুপ পর্বে গোল না পেলেও সাউথগেট কিন্তু ওর প্রতি আস্থা হারায়নি। হ্যারি-ই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইংল্যান্ডকে প্রথম বার ইউরোপ সেরা হওয়ার। রিজার্ভ বেঞ্চ দারুণ শক্তিশালী। জাডন স্যাঞ্চো, মার্কাস র্যাশফোর্ডের মতো ফুটবলার রয়েছে। আমার মনে হয়, ফাইনালে শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের লক্ষ্য হওয়া উচিত মাঝমাঠের দখল নেওয়া।
ইংল্যান্ডের সব চেয়ে বড় সুবিধে ফাইনাল হবে ওয়েম্বলিতে। সমর্থকদের গর্জন জার্মানিকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। ইটালিরও একই সমস্যা হবে বলে আমার অনুমান। রবিবার সকালেই কোপা আমেরিকায় স্বপ্নের ফাইনাল হবে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার। রাতে ইউরো ফাইনাল। ৫৫ বছর আগে ওয়েম্বলিতেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ববি মুররা। ইটালিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর এই সুযোগ হাতছাড়া কোরো না হ্যারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy