যে ট্রফির জন্য লড়াই। ম্যাচ শুরুর আগেই যা মর্গ্যানের থেকে কেড়ে নিলেন স্যামি।-শঙ্কর নাগ দাস
সেমিফাইনাল মে কড়োড়ো কা দিল দুখাকে ই়ডেন মে ফাইনাল খেলনে যা রহা হ্যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ... অউর ইডেন কো দেখ কর লগ রহা হ্যায় বেগানি শাদি মে আবদুল্লা দিওয়ানা..
এপ্রিলের মধ্য দুপুরের ইডেনে লাইভ চ্যাট দিয়ে চলেছেন যিনি, ভদ্রলোক পাকিস্তান থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে এসেছেন। যাঁর গমগমে ভাষ্যের শেষাংশ শুনলে কানে খট করে লাগবে। সত্যি তো, বাংলায় এর তর্জমা দাঁড়ায়— কার বিয়ে আর কে সাজছে!
ওই যে, সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বারবার মাঠে ছুটছেন, এক সিএবি কর্তাকে পাঠাচ্ছেন আইসিসি অতিথিদের উপহারের ব্যবস্থা করতে— এক দিক থেকে ভাবলে সত্যি মনে হবে এমন প্রাণপাতে লাভ কী? ইডেনে বিশ্বকাপ ফাইনাল হচ্ছে, অথচ ফাইনাল-ফাইনাল আমেজটাই নেই। মিডিয়া ঝিমিয়ে। ক্লাবহাউস গেটের সামনে একটা ওবি ভ্যানও চোখে পড়ল না। গত এক মাস ধরে যে উৎসাহী শ’খানেক মুখ গেটের বাইরে ব্যারিকেডের সামনে দিন-রাত দাঁড়িয়ে থাকত, আজ কোনও এক অজানা মন্ত্রবলে উধাও। ব্যারিকেডও তুলে দেওয়া হয়েছে। কী হবে রেখে? কী হবে দাঁড়িয়ে? কী হবে মিডিয়ার ছুটোছুটি করে?
কাপ ফাইনালের ইডেনে তো ভারতই নেই।
অথচ যুদ্ধ-মাহাত্ম্যে ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোটেও ফেলনা নয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় টিমটা। ইংল্যান্ড থেকে কাপ ফাইনাল করতে আসা প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বর্তমানে নামী সাংবাদিক ভিক মার্কস বলছিলেন, প্রমাণ করার অনেক কিছু ইংল্যান্ডেরও আছে। গত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর থেকে ইংলিশ ক্রিকেট তার রক্ষণশীল বর্ম ছেড়ে ব্যাকরণ-বিহীন মারকুটে প্লেয়ার তুলে আনায় যে মন দিয়েছে, সীমিত ওভারের জন্য তুলে এনেছে অ্যালেক্স হেলস থেকে জেসন রয়কে— তা কোনও মর্যাদাই পাবে না ইয়ন মর্গ্যানের টিম ভারত থেকে কাপ তুলে না নিয়ে গেলে। কিন্তু ক্রিকেট-রং যদি বিচার্য হয়, দৃষ্টিসুখ যদি হয় জনপ্রিয়তার মাপকাঠি, শনিবার গোটা দিনে একটা টিমই চোখে পড়বে।
ডারেন স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আশ্চর্য সব কাজ করে বেড়াচ্ছে টিমটা! বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ব্র্যাভো-স্যামিরা উৎসবের একটা অদ্ভুতুড়ে নাচ আবিষ্কার করেছেন যার পোশাকি নাম ‘রেগে’। ওয়াংখেড়েতে ভারতকে হারিয়ে ওটাই নাচতে-নাচতে হোটেল লবিতে ঢুকেছিলেন। এ দিন বোঝা গেল, ক্রিকেটের মতো ক্যারিবিয়ানরা ওই নাচকেও বেশ সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন। ইডেনে আইসিসি স্পনসর সংস্থার কেউ কেউ নাচটা প্র্যাকটিস করে রাখছিলেন, যদি আগামীকাল দরকার পড়ে। তা স্যামিকে দেখা গেল, বেশ বিরক্ত। টিম ম্যানেজারকে বললেন, ধুর এটা হচ্ছে নাকি? বলে নিজেই নাচটা একটু ঝালিয়ে নেটে ঢুকে গেলেন!
একটা নয়, এ রকম নমুনা একাধিক আছে। সিএবি-র একজন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং কোচ ফিল সিমন্সকে বলতে গিয়েছিলেন যে, আর একটামাত্র কাজই বাকি। একটা ম্যাচ জিততে হবে। সিমন্স শুনেটুনে নাকি বলে দেন, কাজ ম্যাচটা জেতা নয়। ওটা জেতা হবে। কাজ একটাই। কাপ-জয়ের সেলিব্রেশনটা কী হবে, সেটা ভাবা!
অধিনায়ক স্যামি আর এক জন। সাংবাদিক সম্মেলন জমিয়ে দিতে ওস্তাদ। এ দিনও বলে গেলেন, ‘‘বলেছিলাম না মুম্বইয়ে ডেভিড জিতবে? কারণ ডেভিড অনেক স্মার্ট। আর আমরা এগারো জনই ডেভিড!’’ বললেন যে, প্রাক্-টুর্নামেন্ট এত আজেবাজে কথা শুনতে হয়েছে টিমটাকে যে কাপ তোলা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। ‘‘লোকে বলল, আমরা নাকি শুধু টাকার জন্য খেলি। তাই আইপিএলে আমাদের দেখা যায়। বলল, আমাদের ক্রিকেটে বুদ্ধিসুদ্ধির প্রয়োগ নাকি কম। এ ভাবে কেউ বলে? বুদ্ধি তো জন্তু-জানোয়ারেরও থাকে। ফাইনালের আগে একটা কথা বলে যেতে চাই। সবাই যেন মনে রাখে, মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমনকী সেলিব্রেশনেও কেউ পারবে না!’’
আইসিসি প্রেসিডেন্ট জাহির আব্বাস। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য
শুনলে আবহের ভ্রমটা কেটে যাবে। বিরাটহীন ইডেন নিস্তেজ হতে পারে। কিন্তু নিষ্প্রাণ কে বলল? ক্রিস গেইলের ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটই তো রবিবার মূর্তিমান প্রাণের স্পন্দন।
যারা রবিবার কাপ জিততে শুধু লড়বে না। লড়বে বিশ্বকে বোঝাতে যে শুধু টাকা নয়, আধুনিক ক্যারিবিয়ানরা মাঠে নামে দেশের জন্যও। লড়বে বোঝাতে যে, ‘ক্রিকেটে মস্তিষ্কের অভাব’ বলে ক্যারিবিয়ানদের আঁতে ঘা দেওয়ার কোনও দরকার ছিল না। চেষ্টা করবে ইতিহাস সৃষ্টির যা অমরত্ব দিয়ে যাবে মনখারাপের ইডেনকে। লোকে মনে রাখবে চিরকাল।
আশাবাদে অসুবিধে কোথায়? মাইক গ্যাটিংয়ের কালান্তক রিভার্স সুইপ ও ক্রিকেট-আকাশে অ্যালান বর্ডার নামক দুঁদে অধিনায়কের জন্ম— উনত্রিশ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক ইডেন ফাইনালেও তো ভারত বলে কোনও টিম ছিল না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy