প্রস্তুতি: বোরখাকে সামনে রেখে ইস্টবেঙ্গলের মহড়া। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ব্রায়ান লারার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোয় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শাহরুখ খানের ভক্ত। ভারতে ফুটবল খেলতে এসে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন দর্শনীয় সব গোলের মাধ্যমে। তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে গড়গড় করে এ কথাই বলেন, কেরলের দল গোকুলমের সেই ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার মার্কাস জোসেফ। এ বার কলকাতায় ডুরান্ড কাপে খেলতে এসেও তিনি গোল করে চলেছেন যন্ত্রের মতো। তিন ম্যাচে জোড়া হ্যাটট্রিক-সহ আট গোল তাঁর। যার সুবাদে এগারো গোল কেরলের দলটির।
আজ, বুধবার বিকেলে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডুরান্ড সেমিফাইনালে নামছে সেই গোকুলম। সেই ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার সকালে যুবভারতী সংলগ্ন অনুশীলন মাঠে রীতিমতো হুমকির সুর মার্কাসের গলায়। বলেন, ‘‘গোল করাই আমার কাজ। সেমিফাইনালেও গোল করব।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আট গোল করেছি এখনও পর্যন্ত। বাকি দুই ম্যাচে আরও সাত গোল করতে চাই। ডুরান্ডে ১৫ গোল করাই আমার লক্ষ্য। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বুধবার সামান্য ভুল করলেই শাস্তি ভোগ করবে। আর সেই শাস্তিটা দেব আমি।’’
ভাদ্র মাসের চড়া রোদে যখন মার্কাস এ কথা বলছেন, তখন পাশের মাঠে সদ্য দলবল নিয়ে নেমেছেন ইস্টবেঙ্গলের স্পেনীয় কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। মার্কাসের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে অবহিত থাকলেও বিপক্ষ স্ট্রাইকারের এ রকম গরমাগরম বিবৃতির ব্যাপারে জানতেন না। প্রসঙ্গ উঠতেই ইস্টবেঙ্গল কোচ পাল্টা বলেন, ‘‘ওদের সম্পর্কে সব হোমওয়র্কই করেছি। মাঠে নামলে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা জিতেই ফিরবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘মার্কাসকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা তৈরিই আছে। ওর বিরুদ্ধে কী ভাবে রক্ষণ সামলাতে হবে, তা নিয়ে আজ ছেলেদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ বার মাঠে নেমে সেই পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত দ্বৈরথ জেতার পালা ছেলেদের।’’
কথাগুলো বলার সময় আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রোর গলায়। গ্রুপ লিগে তাঁর দলও টানা তিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে এসেছে তিন ম্যাচে ১০ গোল করে। গোকুলমের শক্তির কথা মাথায় রেখে লাল-হলুদ শিবিরের কোচ বলে দেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই আই লিগের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছি। তবে হাল্কা মেজাজে নিচ্ছি না ডুরান্ড সেমিফাইনালকে। নিজেদের একশো শতাংশ দিয়েই বাকি দুই ম্যাচ জিততে চাই। তা হলেই মরসুমের প্রথম ট্রফিটা ঘরে আসবে। বুধবার তাই প্রথম পরীক্ষা আমাদের।’’
সেমিফাইনালের আগে আলেসান্দ্রোর স্বস্তি, অভিজিৎ সরকারের হাঁটুর চোট ছাড়া তাঁর দলে সবাই সুস্থ। দলে ফিরছেন খাইমে সান্তোস কোলাদো। তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করে ছন্দে রয়েছেন বিদ্যাসাগর সিংহও।
এ দিন সকালে পুরো দল নিয়েই সেমিফাইনালের মহড়া সারলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। অনুশীলন থেকে পরিষ্কার, গোকুলম মাঝমাঠ থেকে মার্কাসের জন্য যে ঠিকানা লেখা বলগুলো বাড়ান শিবিল মুহম্মদ, সেই রাস্তায় আলেসান্দ্রো পাঁচিল তুলে দিতে চান কাশিম আইদারাকে দিয়ে। রক্ষণের আগে দাঁড়িয়ে বল কাড়ার দায়িত্ব তাঁর। তার পরে সেই বল নিয়ে লালরিনডিকা রালতে বাড়াবেন দুই উইংয়ে দাঁড়ানো ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা বা পিন্টু মাহাতোদের। এই সময়ে বিপক্ষ রক্ষণ ও গোলকিপারের মাঝে চুপিচুপি পৌঁছে যাবেন লাল-হলুদের দুই গোলমেশিন বিদ্যাসাগর ও কোলাদো। এ ভাবেই গোলের দরজা খোলার পরিকল্পনা লাল-হলুদে। রক্ষণেও যাতে কোনও ছিদ্র তৈরি না হয়, তার জন্য বোরখা গোমেস পেরেস, অভিষেক আম্বেকরদের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বললেন আলেসান্দ্রো। সব শেষে সেট পিস, ক্রসিং, অনুশীলনের সঙ্গেই হল পেনাল্টি মারার মহড়াও।
গোকুলম কোচ ফের্নান্দো সান্তিয়াগো বারেলার চিন্তা, তাঁর বিদেশি ফুটবলার হেনরি কিসেক্কার চোট। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অনিশ্চিত তিনি। গোকুলম কোচ বলছেন, ‘‘বুধবার সকালে ফিটনেস টেস্ট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’ শেষ ১৬ বছর বার্সেলোনার বাসিন্দা হলেও আর্জেন্টিনায় জন্মানো গোকুলম কোচ ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলকে রীতিমতো সমীহ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের প্রেসিং ফুটবলটা বিপক্ষকে চাপে ফেলে। আমরাও চিন্তায় রয়েছি। ছোট ছোট পাসে প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক ফুটবল খেলেই আমরা তার মোকাবিলা করতে চাই।’’
ডুরান্ড কাপ বুধবার: ইস্টবেঙ্গল বনাম গোকুলম এফসি (যুবভারতী)। তিনটে থেকে স্টার স্পোর্টস থ্রি-তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy