দুই-মেরু: বিধ্বস্ত ক্রোমা (বাঁ দিকে)। উল্লাস অ্যারোজের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের অশনি সঙ্কেত লাল-হলুদ শিবিরে!
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দল ইন্ডিয়ান অ্যারোজে কোনও বিদেশি নেই। ফুটবলারদের অধিকাংশই আঠারো ছুঁইছুঁই। কেউ কেউ সদ্য উনিশে পা দিয়েছেন। এগারো দলের আই লিগ টেবলে সবার শেষে তারা। শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা বলছিলেন, ‘‘গত বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসিকে আগের ম্যাচেই সহজে হারিয়েছেন মার্কোস খিমিনেস দে লা এসপারা মার্তিনেরা। অ্যারোজ দাঁড়াতেই পারবে না। অন্তত তিন-চার গোলে জিতবে।’’
ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ বাস্তব রায় জানতেন— আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ...ম্যাচের দিন তিনেক আগে থেকে তিনি বার বার বলে চলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ অ্যারোজের এই ফুটবলারেরা। ওদের হাল্কা ভাবে নিলে বিপর্যয় অনিবার্য।’’
বাস্তব জানতেন অ্যারোজ দলে বিক্রমপ্রতাপ সিংহের মতো প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকার রয়েছেন। যিনি যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। এই কারণেই শুক্রবারের অনুশীলনে আর এক সহকারী কোচ মার্সাল সেভিয়ানোকে নিয়ে মার্তি ক্রেসপি, খাইমে সান্তোস কোলাদোদের শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন অ্যারোজের একঝাঁক তরুণ ফুটবলারদের গতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল।
সতর্কবাণী থেকে অ্যারোজকে আটকানোর মহড়া— শনিবারের কল্যাণীতে সবই মুখ থুবড়ে পড়ল। সেই সঙ্গে গতির লড়াইয়ে হেরে ধ্বংসের মুখে শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গলের আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নও। অ্যারোজের কোচ ভারতীয় দলের প্রাক্তন মিডফিল্ডার বেঙ্কটেশ। তাঁর সহকারী ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মহেশ গাউলি। দু’জনেই ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী। বেঙ্কটেশ-মহেশ জুটির চালেই মশাল নিভল।
শনিবার সকালেই স্পেন থেকে কলকাতায় ফিরেছেন লাল-হলুদের নতুন কোচ মারিয়ো রিভেরো। রিজার্ভ বেঞ্চেও বসেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিষেক ম্যাচেই তিরবিদ্ধ হয়ে মাঠ ছাড়লেন মারিয়ো। হবেই না-ই বা কেন? ইস্টবেঙ্গলের বিপর্যয়ের কারণ তো একটা নয়, একাধিক।
এক) কার্ড সমস্যায় আগের ম্যাচে মার্তি ক্রেসপি ছিলেন না। তাঁর অভাব বুঝতে দেননি মেহতাব সিংহ ও আশির আখতার। এই ম্যাচে অদ্ভুত ভাবে মেহতাব ছিলেন না শুরু থেকে। তাঁর বদলে খেললেন ক্রেসপি। স্পেনীয় ডিফেন্ডার একের পর এক ভুল করে গেলেন। ৫৮ মিনিটে বিক্রমপ্রতাপ সিংহের অসাধারণ গোলের জন্যও ক্রেসপি নিজেও দায় এড়াতে পারেন না।
দুই) কোলাদো ছন্দে নেই। মার্কোসের সঙ্গে বোঝাপড়াও তলানিতে। তা সত্ত্বেও আনসুমানা ক্রোমাকে মাঠে নামানো হল ৬৩ মিনিটে। তত ক্ষণে ০-১ পিছিয়ে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল। দুই স্ট্রাইকারই অবিশ্বাস্য ভাবে একের পর এক সহজ সুযোগ নষ্ট করে গিয়েছেন। ম্যাচের শেষ পর্বে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ কার্ড) দেখে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ক্ষুব্ধ সমর্থকদের উদ্দেশে অঙ্গভঙ্গিও করেন মার্কোস। রেফারির দিকে তেড়ে গিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন কোলাদোও। ম্যাচের পরে বেঙ্কটেশ বলেই দিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ফুটবলারদের উচিত বিপক্ষকে আরও সম্মান করা।’’
তিন) ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা ও খুয়ান মেরা গঞ্জালেস। অথচ ব্রেন্ডনকে তুলেই নামানো হয় ক্রোমাকে। তত ক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে যাওয়া অ্যারোজের ফুটবলারেরা নেমে এসেছেন নিজেদের রক্ষণে। অ্যারোজের কাছে হেরে ৯ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগ টেবলের ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল। এক ম্যাচ বেশি খেলে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবলের শীর্ষ স্থানে মোহনবাগান। অর্থাৎ ১২ পয়েন্টের ব্যবধান। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ এখনও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘আমার মতে মোহনবাগানের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য ন’পয়েন্টের। কারণ, পরের ডার্বিতে আমরাই জিতব।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘গোলের সুযোগ নষ্ট করার পরেই ফুটবলারদের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’’ ইস্টবেঙ্গলের বেহাল অবস্থা দেখে বিস্মিত বেঙ্কটেশও। বললেন, ‘‘আমরা যখন খেলতাম, তখন এ ভাবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে কেউ হারাতে পারত না।’’
ইস্টবেঙ্গল: মিচু, কমলপ্রীত (সামাদ আলি মল্লিক), ক্রেসপি, আশির, অম্বেকর, ভানলালরেমডিকা (ক্রোমা), লালরিনডিকা (রোহুল পুইয়া), টনদোম্বা, খুয়ান মেরা, কোলাদো ও মার্কোস।
ইন্ডিয়ান অ্যারোজ: লালবিয়াখুলুয়া, টম, আকাশ, সৌরভ, হরমিপম, বিকাশ ইউমনাম, বিক্রম প্রতাপ সিংহ, রিকি, গিভসন (রোহিন দানু), আয়ূষ অধিকারী (সুরঞ্জিৎ সিংহ) ও নিখিল (হরমনপ্রীত সিংহ)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy