জার্মানির চিকিৎসক লুডউইগ গাটম্যান। —ফাইল চিত্র।
ব্রিটেনের বাকিংহ্যামশায়ারের আইলেসবুরির ছোট্ট গ্রাম স্টোর ম্যান্ডেভিল। প্যারালিম্পিক্স শুরু হওয়ার আগে সেখানে মশাল জ্বালান ব্রিটেনের দুই প্যারালিম্পিয়ান। কয়েক দিন পরে সেখান থেকেই মশাল গিয়েছিল স্যেন নদীর তীরে প্যারিসে। কিন্তু কেন আগে ব্রিটেনের এই ছোট্ট গ্রামে মশাল জ্বালানো হল? কারণ, ৭৬ বছর আগে এই গ্রামেই প্রথম শুরু হয়েছিল প্যারালিম্পিক্স। শুরু করেছিলেন জার্মানির চিকিৎসক লুডউইগ গাটম্যান। যুদ্ধে আহত সৈন্যদের চিকিৎসা করার জন্য তাঁদের মাঠে নামান গাটম্যান। সেখান থেকেই প্যারালিম্পিক্সের ভাবনা।
জার্মানির স্নায়ু চিকিৎসক গাটম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ছেড়ে ব্রিটেনে চলে যান। সেখানে স্টোক ম্যান্ডেভিলে তাঁকে ‘ন্যাশনাল স্পাইনাল সেন্টার’-এর দায়িত্ব দেয় ব্রিটিশ সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে সব সৈন্যরা মেরুদণ্ডে চোট পেতেন তাঁদের চিকিৎসা হত সেখানে। চল্লিশের দশকে মেরুদণ্ডে চোট পেলে খুব কম লোকই পায়ে দাঁড়াতে পারতেন। বেশির ভাগকেই শুয়ে বাকি জীবন কাটাতে হত। শুয়ে থেকে শরীরে ঘা হয়ে যেত অনেকের। ফলে তাড়াতাড়ি মারা যেতেন তাঁরা। চিকিৎসা করতে গিয়ে গাটম্যানের মনে হয়, অসুস্থদের নিজের পায়ে দাঁড় করাবেন তিনি।
গাটম্যানের রোগীরা ভালবেসে তাঁকে ‘পোপ্পা’ বলে ডাকতেন। গাটম্যান চালু করেন স্পোর্টস থেরাপি। প্রথমে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রোগীদের মাঠে নামান তিনি। তাঁদের হাতে তুলে দেন তির-ধনুক। সেই শুরু। প্রথমে গাটম্যানের রোগীরাই খেলতেন। পরে ধীরে ধীরে অন্য হাসপাতাল, এমনকি, অন্য দেশের রোগীরাও সুস্থ হওয়ার জন্য খেলার সাহায্য নেন।
১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সের সময় একটি প্রতিযোগিতা শুরু করেন গাটম্যান। প্রতিযোগিতার নাম দেওয়া হয় ‘স্টোক ম্যান্ডেভিল গেমস’। সেটাই প্যারালিম্পিক্সের হাতেখড়ি। ১৯৫২ সালে নেদারল্যান্ডস থেকেও অসুস্থ রোগীরা খেলতে আসেন। ১৯৫৬ সালে ১৮টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নেন ‘স্টোক ম্যান্ডেভিল গেমস’-এ। সেই বছরই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতি বার অলিম্পিক্সের পরে সেই দেশেই এই প্রতিযোগিতা হবে। ১৯৬০ সালে রোমে প্রথম সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে বড় ভূমিকা ছিল গাটম্যানের। কী কী খেলা হবে তা ঠিক করেছিলেন তিনি। প্রথম বার হুইলচেয়ারে বসে ফেন্সিং, স্নুকার, বাস্কেটবল, তিরন্দাজি, অ্যাথলেটিক্স, টেবল টেনিস, সাঁতারের মতো প্রতিযোগিতা হয়।
তবে প্যারালিম্পিক্স নাম প্রথম বার দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালের রোম অলিম্পিক্সে। নাম বদল দেখে যেতে পারেননি গাটম্যান। ১৯৮০ সালে ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বার প্যারালিম্পিক্সের আগে স্টোক ম্যান্ডেভিলে মশাল জ্বালানো হয়। তার পরে সেই মশাল যায় আয়োজক দেশে। প্রতি বার প্যারালিম্পিক্সের জন্মদাতা গাটম্যানকে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানায় অলিম্পিক্স কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy