হতাশা: অতিমারির প্রকোপে পূরণ হল না দীপার আশা। ফাইল চিত্র।
রিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রোদুনোভা ভল্টকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন ভারতের ঘরে ঘরে। সেই দীপা কর্মকারের আর টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা রইল না। একটা যে ক্ষীণ আশা ছিল এত দিন, এখন তাও আর থাকল না।
করোনা অতিমারির কারণে একের পর এক যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রতিযোগিতাগুলো বাতিল হয়ে যাওয়াতেই স্বপ্ন ভেঙে গেল দীপার। দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী আগে জানিয়েছিলেন, যদি শেষ মুহূর্তে কোনও যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রতিযোগিতা হয়, তা হলে দীপার একটা সম্ভাবনা থাকবে। সেই যোগ্যতা অর্জন পর্বের একটা প্রতিযোগিতা শেষ মুহূর্তে আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা। এই মাসের ২৩-২৬ তারিখ, দোহায়। কিন্তু জানা গেল, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সোনা পেলেও দীপার পক্ষে আর টোকিয়ো যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কেন এ রকম দাঁড়াচ্ছে ব্যাপারটা? আগরতলা থেকে ফোনে বিশ্বেশ্বরবাবু বলছিলেন, ‘‘বাস্তব কথাটা বলছি। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে আর যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা রইল না দীপার।’’ কিন্তু একটা প্রতিযোগিতা তো হচ্ছে দোহায়। ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপ বা দোহা বিশ্বকাপ। সেখানে তো একটা সুযোগ থাকতে পারত। বিশ্বেশ্বরবাবুর জবাব, ‘‘শেষ মুহূর্তে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটা অ্যাপারেটাস বিশ্বকাপ। অলরাউন্ড বিশ্বকাপ নয়। আমরা ভেবেছিলাম, অলরাউন্ড বিশ্বকাপ হবে। যেখানে ভাল করলে দীপার একটা সম্ভাবনা থাকত টোকিয়ো যাওয়ার। কিন্তু অ্যাপারেটাস বিশ্বকাপে সোনা পেলেও টোকিয়োর ছাড়পত্র পাবে না দীপা।’’
সেটা কেন, তার ব্যাখ্যা পাওয়া গেল দীপার গুরুর কাছে। বিশ্বেশ্বরবাবু জানাচ্ছেন, ভল্টে দীপার এখন মোট পয়েন্ট ৩৬। র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে। সোনা পেলে আরও ৩০ পয়েন্ট যোগ হবে। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে হবে ৬৬। কিন্তু অলিম্পিক্সে যেতে গেলে অন্তত ৯০ পয়েন্ট পেতেই হবে। যেটা দীপার পক্ষে এই বিশেষ বিশ্বকাপ থেকে তোলা সম্ভব নয়। তিনটে বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ৯০ পয়েন্ট তোলার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে একের পর এক প্রতিযোগিতা বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে দীপার ৯০ পয়েন্ট তোলা অসম্ভব হয়ে গেল। বিশ্বেশ্বরবাবুর আক্ষেপ, ‘‘করোনা এ বার অনেক ক্ষতি করে দিয়ে গেল সবার।’’
ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার কাছ থেকে মঙ্গলবার দোহা বিশ্বকাপ নিয়ে চিঠি পেয়েছেন বিশ্বেশ্বরবাবু। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে দোহা যাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে কোনও আলোকপাত করা নেই সেখানে। শেষ মুহূর্তে সংস্থার তরফে এই চিঠি পাওয়ায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দোটানায় বিশ্বেশ্বরবাবু। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হল, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও লাভ হবে না। দীপার কোচের কথায়, ‘‘এখানে সোনা পেলেও তো দীপার আর টোকিয়োয় যাওয়া হবে না। কিছু করার নেই আর। আমাদের এ বার অন্য লক্ষ্য সামনে রেখে তৈরি হতে হবে।’’
আগামী ৩০ জুন, আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার তরফে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের অংশগ্রহণকারী জিমন্যাস্টদের তালিকা সরকারি ভাবে প্রকাশ হবে। যেখানে দীপার নাম থাকছে না। থাকবে বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েকের নাম। এ বার টোকিয়ো অলিম্পিক্সে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলার মেয়ে প্রণতি।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করতে না পারাটা কত বড় ধাক্কা দীপার কাছে? বিশ্বেশ্বরবাবুর জবাব, ‘‘একটু ধাক্কা তো বটেই। কিন্তু এখন আর সে সব ভেবে লাভ নেই। আমাদের পরের লক্ষ্যের জন্য এ বার তৈরি হতে হবে।’’ কী সেই লক্ষ্য? দ্রোণাচার্য কোচের কথায়, ‘‘পরের বছর কমনওয়েলথ গেমস আর এশিয়ান গেমস আছে। একটা চমক দেখানোর জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি।’’
প্রোদুনোভাকে বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করা মেয়ে আর কী চমক দিতে পারেন, তা দেখার অপেক্ষাতেই থাকবে গোটা দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy