Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Cricket

কেকেআরে সই করা পুত্র না শিষ্য, সমর্থন কাকে? বেছে নিলেন রোহিত শর্মার কোচ

টানা পাঁচ বছর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল দীনেশ পুত্র সিদ্ধেশকে। গত বার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটে সিদ্ধেশের।

রোহিত শর্মা এবং সিদ্ধেশ লাড। পাঁচ বছর মুম্বইয়ে থাকার পরে দল বদলালেন সিদ্ধেশ। —ফাইল চিত্র।

রোহিত শর্মা এবং সিদ্ধেশ লাড। পাঁচ বছর মুম্বইয়ে থাকার পরে দল বদলালেন সিদ্ধেশ। —ফাইল চিত্র।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ১১:৩৬
Share: Save:

কেকেআর-এ রয়েছেন ছেলে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে প্রিয় শিষ্য। এ বারের আইপিএল-এ দুই দল মুখোমুখি হলে গুরুর আশীর্বাদ পাবেন কে? ছেলে সিদ্ধেশ, না কি প্রিয় শিষ্য রোহিত শর্মা?

গুরু দীনেশ লাড এক মুহূর্ত না ভেবে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে বললেন, ‘‘ক্রিকেট আমার কাছে সবার আগে। আমি ক্রিকেটকেই সমর্থন করবো। ছেলে সিদ্ধেশকে আমি সাপোর্ট করবো বা রোহিতের জন্য ভালবাসা উজাড় করে দেবো, এমন কথা আমি বলতে পারি না। কারণ আমি দু’জনেরই গুরু। যে ভাল ক্রিকেট খেলবে, আমি তাকেই সাপোর্ট করবো। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে জিততে হলে রোহিতকে ভাল খেলতে হবে। আবার কেকেআর-এর জয়ের পিছনে সিদ্ধেশকেও অবদান রাখতে হবে। দু’ জনের জন্য আমার একটাই বার্তা, নিজের দলকে জেতানোর চেষ্টা করে যাও। ভাল ক্রিকেট উপহার দাও।’’

টানা পাঁচ বছর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল দীনেশ পুত্র সিদ্ধেশকে। গত বার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটে সিদ্ধেশের। তাও আবার ম্যাচের আগের দিন তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মুম্বই কোচ মাহেলা। রাত সাড়ে ১১টায় সিদ্ধেশকে ফোনে জানানো হয়, পরের দিন তিনি খেলছেন। আঙুলে চোট থাকায় আবার সেই ম্যাচে ছিটকে যান রোহিতই। তাঁর জায়গাতেই নেমে পড়েন সিদ্ধেশ।

আরও পড়ুন: আইএসএলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসছে অ্যাপ

মুম্বইয়ের জার্সিতে মাত্র একটা ম্যাচ খেলা সিদ্ধেশ এ বার ঠিকানা বদলে হয়েছেন কেকেআর-এর নতুন নাইট। ‘কিং খান’-এর দলে কি ভাগ্য ফিরবে তাঁর? প্রথম একাদশে কি জায়গা করে নিতে পারবেন তিনি? ছেলের প্রতিভা নিয়ে গর্বিত বাবা বলছেন, ‘‘সিদ্ধেশ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেটে (যশপ্রীত) বুমরা, বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমানদের সামলেছে। আমার সঙ্গে ওর কথাও হয়েছিল। আমাকে বলেছিল, আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের সামলাতে কোনও সমস্যা হয়নি। ওর প্রতিভা রয়েছে। কঠিন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরতে জানে। কেকেআর-এ সুযোগ পেলে ও নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।’’

শিষ্য রোহিতের সঙ্গে গুরু দীনেশ। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু পুরনো দলের পরিবেশ, সংস্কৃতি, সতীর্থদের ছেড়ে নতুন দলে যোগ দেওয়ায় মানিয়ে নিতে তো সমস্যাই হবে। অনেকে ধাতস্থ হতে সময় নেন। আবার অনেকে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। দী‌নেশ বলছেন, “নতুন টিম হলে মানিয়ে নিতে সবারই প্রথম দিকে সমস্যা হয়। এটা ঠিকই। তবে সিদ্ধেশের ক্ষেত্রে একাধিক পজিটিভ দিকও রয়েছে। কেকেআর ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিক আমার ছেলেকে খুব ভাল চেনে। কার্তিকের সামনে বেশ ভাল কিছু ইনিংস খেলেছে সিদ্ধেশ।

দু’বছর আগে রঞ্জি ট্রফিতে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে এক সময়ে মুম্বই ধুঁকছিল। ৫০ রানে পাঁচ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেই সময়ে ব্যাট করতে নেমে ১৫০ রানের ইনিংস খেলেছিল সিদ্ধেশ। সেই ম্যাচে তামিলনাড়ুর হয়ে কিপিং করছিল কার্তিক। ফলে সিদ্ধেশকে খুবই ভাল জানে কার্তিক। নীতীশ রাণা রয়েছে কেকেআর-এ। ওর সঙ্গেও খেলেছে সিদ্ধেশ। পেশাদার ক্রিকেটে দ্রুত মানিয়ে নিতে হয়। যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে, ততই নিজের জন্য ভাল।’’

করোনাভাইরাসের জন্য নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খেলাধুলোর মেগা সব টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ক্রিকেটাররা ঘরবন্দি। মাঠে নেমে অনুশীলন পর্যন্ত করতে পারছেন না। এর মধ্যেই আইপিএল-এর গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্রিজেশ পটেল জানিয়ে দিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে শুরু হবে আইপিএল। দেশের মাটির পরিবর্তে তা হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে।

মেগা টুর্নামেন্টের জন্য কতটা প্রস্তুত সিদ্ধেশ এবং রোহিত? দীনেশ বলছেন, ‘‘খেলা বন্ধ থাকলেও সিদ্ধেশ নিয়মিত প্র্যাকটিস করে গিয়েছে। আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাদে ওকে নিয়ে প্র্যাকটিস করেছি। ঘরেই নিজেকে ফিট রেখেছে ও। ওকে বল‌ে দিয়েছি, মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতে হবে। অনেক খরচ করে কেকেআর তোমাকে দলে নিয়েছে। সুযোগ পেলে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে।’’

পুত্র সিদ্ধেশের সঙ্গে দীনেশ। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর প্রিয় শিষ্য তো আবার বহু যুদ্ধের সৈনিক। মুম্বইয়ের ক্যাপ্টেন হিসেবে সোনা ফলিয়েছেন। নেতৃত্বের ব্যাটন রোহিতের হাতে ওঠার পর থেকে বদলে গিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। চার বার খেতাব এসেছে মুম্বইয়ে। এ বারও রোহিতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন মুম্বই-ভক্তরা। মাঠে গিয়ে নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার জন্য ‘হিটম্যান’ ঘাম ঝরাচ্ছেন। হাতের তালুর মতো চেনেন শিষ্যকে। গলায় আত্মবিশ্বাস জড়িয়ে রোহিতের গুরু বলছেন, ‘‘রোহিত টপ টেভেলে খেলেছে। কী ভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটা তো আর ওকে শিখতে হবে না। ফিটনেসটাই কেবল ঠিক রাখতে হবে। আর রোহিত সেই কাজটা ঠিকঠাকই করছে।’’

রোহিত এক বার চলতে শুরু করলে তা দর্শকদের জন্য বড় পাওয়া। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গ্যালারিই হয়তো ফাঁকা থাকবে। দর্শক না থাকলে ক্রিকেটারদের শরীর থেকে কি বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরবে? ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে দীনেশ বলছেন, ‘‘দর্শক থাকুক বা না থাকুক, বাইশ গজে বোলারকে তো একাই সামলাতে হবে ব্যাটসম্যানকে। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ তো দর্শক ছাড়াই হচ্ছে। ক্রিকেটারদের কি তাতে মোটিভেশনে সমস্যা হয়েছে? ভাল না খেললে পরের বারের নিলামে কিন্তু আর ডাক পাওয়া যাবে না। এটাই তো মোটিভেশন হওয়া উচিত সবার।”

আইপিএল-এর জন্য সবাই হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উইকেট নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন সিদ্ধেশ। দীনেশ বলছিলেন, ‘‘আইপিএল-এর উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হবে। প্রথম দিকে শক্ত থাকবে। পরে স্লো হয়ে যাবে।’’

আরও পড়ুন: পোপ আবিষ্কারে বঙ্গ কোচের হাত

পৃথিবীর রহস্যময় সরণীর অন্যতম বাইশ গজ। এই সরণীতে পথ হারিয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে উপেক্ষার জ্বালা-যন্ত্রণা জুড়িয়েছেন এখানেই। মরুশহরের বাইশ গজে নতুন নাইট সিদ্ধেশের যে সিদ্ধিলাভ হবে না তা কে বলতে পারেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy