Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Diego Maradona

বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন: আই এম বিজয়ন

কেরল সফরে এসেছিলেন মারাদোনা। আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কন্নুরের সেই অনুষ্ঠানে।

জাদু-মুহূর্ত। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে দিয়েগো মারাদোনার দৌড়। ফাইল চিত্র

জাদু-মুহূর্ত। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে দিয়েগো মারাদোনার দৌড়। ফাইল চিত্র

আই এম বিজয়ন
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৭
Share: Save:

আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছিলাম যাঁর জন্য, সেই দিয়েগো মারাদোনাকে সামনে থেকে যে কোনও দিন দেখার সুযোগ পাব, কল্পনাও করিনি। স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল বছর সাত-আট আগে।

কেরল সফরে এসেছিলেন মারাদোনা। আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কন্নুরের সেই অনুষ্ঠানে। দারুণ আনন্দ হয়েছিল স্বপ্নের নায়ককে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি বলে। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন যত এগিয়ে আসছিল, ততই ভয় করছিল। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা নয়, আমার চোখে শ্রেষ্ঠ ফুটবলার মারাদোনা। তিনি কি আর আমার সঙ্গে ছবি তুলতে রাজি হবেন?

দুরুদুরু বুকে মারাদোনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। দোভাষী আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুকে জড়িয়ে ধরিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য। মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। ফুটবলের রাজপুত্র কি না আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। তখন খুব আফসোস হচ্ছিল স্প্যানিশ ভাষাটা জানি না বলে। ইচ্ছে থাকলেও কথা বলতে পারিনি। হঠাৎ দেখলাম, এক জন একটা ফুটবল হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন। দেখেই মারাদোনা শিশুর মতো লাফিয়ে উঠে বলটা চেয়ে নিলেন।

আরও পড়ুন: নায়ক, ফুটবলের ব্যাড বয়... সব বিতর্ক পেরিয়ে মারাদোনা শুধুই এক কিংবদন্তি

বিস্ময় আরও অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। আমাকে ডাকলেন মারাদোনা। তার পরে আমার সঙ্গে বল নাচানো শুরু করলেন। কখনও হেডে, কখনও পায়ে। এক বারের জন্য বল মাটিতে পড়তে দিলেন না। কেরলে আসার আগে শুনেছিলাম, মারাদোনা সবে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাই কেরল সফরে ওঁর যাতে বেশি ধকল না হয়, তা নিশ্চিত করতে মরিয়া ছিলেন সকলে। সে দিন মারাদোনা বুঝিয়ে দিলেন, শিল্প চিরকালীন। আর তিন দিন কেরলে ছিলেন ফুটবল ঈশ্বর। আমার সঙ্গে যদিও আর দেখা হয়নি। তাতে কোনও দুঃখ নেই। মারাদোনা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন, খেলেছেন, ছবি তুলেছেন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?

মারাদোনার খেলা প্রথম দেখি ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। আমার বয়স তখন সতেরো বছর। বিপক্ষের ডিফেন্ডার কড়া ট্যাকল ও মারও থামাতে পারছে না আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে। মারাদোনার বাঁ-পায়ের জাদু দেখে মনে হচ্ছিল যেন মাখনের উপর দিয়ে কেউ ছুরি চালাচ্ছেন। কী অসম্ভব বলের উপরে নিয়ন্ত্রণ। দুর্দান্ত নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওঁর হাত দিয়ে গোল দেওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক হলেও আমার ভালবাসা এতটুকু কমেনি। মারাদোনা প্রমাণ করেছিলেন, ফুটবলেও একা কেউ দলকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন: কলকাতা দেখে মারাদোনার মনে পড়েছিল নাপোলির রাত

ছিয়াশি বিশ্বকাপে মারোদানার খেলা দেখেই আমার ফুটবলার হওয়ার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমাদের পরিবারের টিভি কেনার মতো অবস্থা ছিল না। মারাদোনার খেলা দেখার জন্য এর-ওর বাড়ি ঘুরতাম। কখনও কারওর বাড়ির জানলার সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতাম। কখনও আবার কেউ দয়া করে ঘরে ঢুকতে দিতেন। মাঠে নেমে একা একা চেষ্টা করতাম মারাদোনার মতো বল নিয়ে দৌড়নোর। বাঁক খাওয়ানো ফ্রি-কিকে গোল করার। মাঝেমধ্যেই পুরনো কাগজ বিক্রির দোকানেও হানা দিতাম। মারাদোনার ছবি চোখে পড়লেই নিয়ে আসতাম। অনেকেই অবশ্য বিনামূল্যে দিতে চাইতেন না। তখন রীতিমতো হাতেপায়ে ধরতাম।

মারাদোনা তখন খেলতেন নাপোলিতে। ম্যাচের আগে বাজনার তালে-তালে ওয়ার্মআপ করতেন। বল নিয়ে কসরত করতেন। সেই ক্লিপিংস বুধবার দুপুরেও মোবাইল ফোনে দেখেছিলাম। ভাবতেই পারিনি রাতেই দুঃসংবাদ শুনতে হবে।

মারাদোনার প্রয়াণের খবরে আমার মতো কোটি কোটি মানুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। করোনা অতিমারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বে আরও যে কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে কে জানে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy