মনোজের ৩০৩ রানের ইনিংসের প্রশংসা শোনা গেল জাতীয় নির্বাচক দেবাংয়ের মুখে।
এক দশক নয়, দুই দশক নয়, তারও বেশি! ঠিকঠাক ধরলে বাইশ বছর। রঞ্জি ট্রফিতে ফের আরও এক বঙ্গ ব্যাটসম্যানের ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে লাগল এতগুলো বছর।
দেবাং গাঁধীর পর মনোজ তিওয়ারি। ১৯৯৮ সালে গুয়াহাটির মালিগাঁও স্টেডিয়ামে অসমের বিরুদ্ধে ৩২৩ করেছিলেন দেবাং গাঁধী। আর সোমবারই কল্যাণীতে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৩০৩ রানে অপরাজিত থাকলেন মনোজ। তাঁর তিনশো হতেই সাত উইকেটে ৬৩৫ রানে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে বাংলা। না-হলে দেবাংকে টপকে সাড়ে তিনশোও হয়ত করে ফেলতেন মনোজ!
দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে প্রচুর জল্পনা। তিক্ততার আবহও কম নেই। যদিও সোমবার দুপুরে উত্তরসূরিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন পূর্বসূরি। মনোজের ইনিংস নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেবাং বললেন, “যখন দলের প্রয়োজন, তখনই এই রানটা করেছে। কাল, ম্যাচের প্রথম দিন বাংলা দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে ছিল। সেই সময়ই এই ইনিংস খেলেছে। মনোজ আরও একবার প্রমাণ করল যে ও বাংলা ক্রিকেটের কত বড় সেবক। আমি অবশ্য ম্যাচটা দেখিনি। ফলে মনোজের ব্যাটিং নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। তবে নিশ্চিত ভাবেই ভাল ব্যাট করেছে। ডমিনেট করেছে, দাপট দেখিয়েছে। না হলে এত রান হয় না।”
আরও পড়ুন: মনোজের ট্রিপল সেঞ্চুরি, জাতীয় নির্বাচকদের উপেক্ষার জবাব দিলেন ব্যাটে
দেবাংয়ের মনে ফিরে আসছে ফেলে আসা এক দিনের কথা। যা করে তুলছে স্মৃতিমেদুর। মালিগাঁওয়ে সেই ইনিংসে তিন নম্বরে নেমেছিলেন তিনি। সেই ইনিংসে ফিরে গিয়ে বললেন, “দুশোয় পৌঁছেছিলাম ছয় মেরে। এখনও পরিষ্কার মনে রয়েছে তা। আবার ২৯৪ রানে যখন ব্যাট করছিলাম তখন একটু প্রেশারে ছিলাম। তখনও ছয় মেরে তিনশো করেছিলাম।” প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনশো এই একটাই দেবাংয়ের। মনোজও এই প্রথম বার পৌঁছলেন ত্রিশতরানে। দেবাং আর একটা মিল খুঁজে পেয়েছেন। বললেন, “আমার আর মনোজের ট্রিপল সেঞ্চুরির মধ্যে একটা কমন ব্যাপার রয়েছে। আমার সময়ও কোচ ছিলেন অরুণলাল। আর এখনও বাংলার কোচ অরুণলালই আছেন।”
মিল যতই থাক না কেন, মনোজ ও দেবাংয়ের সম্পর্ক মোটেই ঊষ্ণ নয়, বরং তা বরফের মতোই ঠান্ডা। কিছুদিন আগেই ইডেনে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচের সময় বাংলার ড্রেসিংরুম থেকে মনোজের অভিযোগে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল দেবাংকে। দুর্নীতি দমন শাখার কাছে মনোজ জানতে চান যে দেবাং কী করে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন? যার জেরে দেবাংকে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন দুর্নীতি দমন শাখার কর্তা। দেবাং পাল্টা বলেন যে কোমরে ব্যথা হচ্ছে বলে তিনি বাংলা দলের ফিজিয়োর পরামর্শ নিতে ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলেন। সিএবি-র তরফেও জানানো হয় যে অনুমতি নিয়েই দেবাং ঢুকেছিলেন সাজঘরে। সেই প্রসঙ্গে এদিনও দেবাং বললেন, “না, ওই ব্যাপারে আমার কোনও বক্তব্য নেই। তবে আমি কোনও ভুল কাজ করিনি। আমার জায়গায় ঠিক আছি।”
আরও পড়ুন: টসকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছি! ওয়ানডে সিরিজ জিতে দাবি কোহালির
কিন্তু নানা সময়ে তো জাতীয় নির্বাচকদের দিকেও আঙুল তুলেছেন মনোজ। তাঁকে সুযোগ না দেওয়ার জন্য করেছেন অভিযোগ। তোপ দেগেছেন দেবাংয়ের বিরুদ্ধেও। এই ইনিংস কি মনোজকে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগের মঞ্চ এনে দেবে? এ বার নির্বাচকমণ্ডলীতে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধির রক্ষণ জমাট। বললেন, “না, জাতীয় নির্বাচক হিসেবে এই ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারি না। জানি, এটা নিয়ে চর্চা হবে, লেখালেখি হবে। কিন্তু, কিছুই বলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। ”
এই ট্রিপল সেঞ্চুরির পর কি মনোজের কেরিয়ারের পালে লাগবে হাওয়া? তেমনই আশা করছে বঙ্গ ক্রিকেটমহল। সটান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বন্ধ দরজা খোলা সম্ভব নয়, খুলবেও না। কিন্তু জাতীয় স্তরের নানা দলের জন্য বিবেচিত হতেই পারেন তিনি। অন্তত নির্বাচকমণ্ডলীর বৈঠকে দেবাংকে এমন উদ্যোগী ভূমিকাতেই দেখতে চাইছে ময়দান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy