ত্রাতা: এ ভাবেই বার বার লাল-হলুদের পতন রুখলেন দেবজিৎ। আইএসএল
আইএসএল
চেন্নাইয়িন এফসি ০ এসসি ইস্টবেঙ্গল ০
অনবদ্য দেবজিৎ মজুমদার। শেষ ৬৩ মিনিট দশ জনে খেলা এসসি ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচাল বঙ্গ গোলরক্ষকের দু’হাত।
বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পরে মনে হচ্ছিল, এসসি ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে অ্যান্টনি পিলকিংটন, ব্রাইট এনোবাখারে-রা। কিন্তু কেরল ব্লাস্টার্স ও চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে লাল-হলুদের খেলা দেখে আমার রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে দিয়েছে।
চেন্নাইয়িনের প্রধান অস্ত্র রাফায়েল ক্রিভেলারো চোট পেয়ে আইএসএল থেকেই ছিটকে গিয়েছে। ভেবেছিলাম, সহজেই ম্যাচটা জিতবে এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগে লাল-হলুদের প্রথম একাদশ দেখেই চমকে গিয়েছিলাম। মাঝমাঠের প্রধান ভরসা মাঠি স্টেনম্যান নেই। এমনিতেই রাজু গায়কোয়াড় চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় লাল-হলুদ রক্ষণ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার উপরে এ দিন স্টেনম্যানকেও দলে রাখেননি রবি ফাওলার। আমার মনে হয়, ফাওলার ভেবেছিলেন ব্রাইট, পিলকিংটন ও জা মাগোমা যখন রয়েছে, চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।
পর পর দু’টো ম্যাচেই ব্রাইট ও মাগোমাকে দেখে হতাশ হয়েছি। অবশ্য এ রকম হওয়ারই ছিল। বিপক্ষের সেরা দুই ফুটবলারকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়ার ভুল কোনও কোচই করবেন না। সোমবার চেন্নাইয়িনের কোচ কাসাবা লাজ়লো-ও সেই পথে হেঁটেছেন। বাধ্য হয়ে ব্রাইট বার বার নীচে নেমে আসছিল। প্রথমার্ধে লাল-হলুদের আক্রমণের সে রকম ঝাঁঝই ছিল না।
ফাওলারের আরও একটা সিদ্ধান্ত অবাক করেছে। মহম্মদ রফিককে না খেলিয়ে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন সদ্য যোগ দেওয়া অজয় ছেত্রীকে। প্রতিশ্রুতিমান এই মিডফিল্ডারের অভিজ্ঞতা কম বলেই ৩১ মিনিটে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ) দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেল। অজয়ের কোনও প্রয়োজনই ছিল না, অনিরুদ্ধ থাপাকে ওই ভাবে ট্যাকল করার।
দশ জন হয়ে যাওয়ার পরে চাপ বেড়ে গেল লাল-হলুদের। এই পরিস্থিতিতে হার বাঁচানোই যে কোনও দলের প্রথম লক্ষ্য হয়। আমার মনে হচ্ছিল, যে কোনও মুহূর্তে গোল খেতে পারে এসসি ইস্টবেঙ্গল। ‘সেভজিৎ’ (দেবজিৎ) ছিল বলে রক্ষে। পাঁচটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে ম্যাচের সেরাও হল লাল-হলুদ গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দেখে কিছুটা চিন্তা কমল। দশ জনে খেলা সত্ত্বেও জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছিল পিলকিংটনরা। ৫১ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত ওরা। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে চেন্নাইয়িনের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে গোল করতে ব্যর্থ হল পিলকিংটন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে দুরন্ত গোল করা তারকার কাছ থেকে এ রকম ভুল আশা করা যায় না। ছ’মিনিটের মধ্যেই আবার হারের আতঙ্ক ফিরে এসেছিল। ইসমায়েল গঞ্জালেসের শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে স্বস্তি দেয় দেবজিৎ। ৬৮ মিনিটে গোল করতে ব্যর্থ হল স্কট নেভিল।
বার বার মনে হচ্ছিল, এই পরিস্থিতিতে স্টেনম্যানকে নামানো উচিত ফাওলারের। না হলে লাল-হলুদ রক্ষণের উপরে চাপ বাড়তেই থাকবে। দেবজিৎ একা কতক্ষণ লড়বে? দ্বিতীয়ত, সুরচন্দ্র সিংহ প্রতিশ্রুতিমান। কিন্তু মহম্মদ রফিক অভিজ্ঞ। ও থাকলে ব্রাইটের উপরেও চাপ কমত।। ফাওলার কেন রফিককে বসিয়ে রাখছেন, তা আমার কাছে রহস্য।
পিলকিংটন আরও এক বার গোল নষ্ট করল ৭২ মিনিটে। চেন্নাইয়িনের পেনাল্টি বক্সের বাইরে ওদের ডিফেন্ডারকে দারুণ ভাবে কাটিয়ে বল উড়িয়ে দিল ক্রসবারের উপর দিয়ে। তা হলে কি পিলকিংটন এখনও পুরো ফিট হয়ে উঠতে পারেনি? ৮৪ মিনিটে ফের লাল-হলুদের ত্রাতা হয়ে উঠল দেবজিৎ। এ বার লালরিনজ়ুয়ালা ছাংতের বাঁ-পায়ের গোলার মতো শট শরীর শূন্য ভাসিয়ে এক হাতে বাঁচাল। মনে হচ্ছিল, এসসি ইস্টবেঙ্গল নয়, দেবজিৎ বনাম চেন্নাইয়িন ম্যাচ চলছে। ৮৫ মিনিটে ফাওলার বুঝলেন, ব্রাইটের পক্ষে চেন্নাইয়িনের চক্রব্যূহ ভেঙে গোল করা অসম্ভব। ওর পরিবর্তে অ্যারন জোসুয়া আমাদিকে নামালেন।
ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। জয় হাতছাড়া করে ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে নবম স্থানেই আটকে থাকল লাল-হলুদ।
চেন্নাইয়িন এফসি: বিশাল কাইথ, জেরি লালরিনজ়ুয়ালা, এলি সাবিয়া, এনেস সিপোভিচ (দীপক টাংরি), রেগান সিংহ, অনিরুদ্ধ থাপা (জাকুব সিলভেস্টার), মেমো মউরা, এডউইন বংশপাল, লালরিনজ়ুয়ালা ছাংতে, রহিম আলি ও ইসমায়েল গঞ্জালেস (ফাতখুলো ফাতখুলেফ)।
এসসি ইস্টবেঙ্গল: দেবজিৎ মজুমদার, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, স্কট নেভিল, ড্যানি ফক্স, নারায়ণ দাস, মিলন সিংহ, অজয় ছেত্রী, জা মাগোমা, সুরচন্দ্র সিংহ, হরমনপ্রীত সিংহ ও ব্রাইট এনোবাখারে (অ্যারন জোসুয়া আমাদি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy