চলে গেলেন ডিন জোন্স।
পেস ও স্পিন বোলিং খেলার ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। ফুটওয়ার্কও ছিল দেখার মতো। ২২ গজের মধ্যে দৌড়নোয় দারুণ ক্ষিপ্র ছিলেন। আইপিএল-এ রোজ বিশেষজ্ঞের মতামত দিতেন স্টার স্পোর্টসের মুম্বইয়ের স্টুডিও থেকে। বুধবার রাতেও দিয়েছেন। সেই ডিন জোন্স যে বৃহস্পতিবার এতটা আকস্মিক ভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন, তা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কেউই ভাবতে পারেননি। বিশেষত, মাত্রই ৫৯ বছর বয়সে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ ব্রেকফাস্ট সেরে জোন্স এ দিনের আইপিএল সম্প্রচার সংক্রান্ত এক ব্রিফিং সেসনে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ মুম্বইয়ের যে হোটেলে তিনি ছিলেন, তার বারন্দাতেই তিনি পরে তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন।এমন সময়েই সকলকে স্তম্ভিত করে দিয়ে জোন্স হঠাৎই পড়ে যান। এর পরে সেখানে উপস্থিত অ্যাম্বুল্যান্সে করেই হরকিসনদাস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে পৌঁছতেই চিকিৎসকরা জোন্সকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জোন্সের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ এবং হতবাক ক্রিকেটমহল। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি জোন্সের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। শোকজ্ঞাপন করেছেন ক্রিকেটবিশ্বের আরও বহু মানুষ। শোক জানিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও। ভিভিয়ান রিচার্ডস টুইট করেছেন, ‘হরিব্ল নিউজ টু ওয়েক আপ। তুমি নিছক আমার বিরুদ্ধে খেলা একজন প্লেয়ার ছিলে না। তুমি ছিলে আমার বন্ধু, আমার ভাই। পৃথিবীতে যেখানে যেখানে ক্রিকেট খেলা হবে, তোমার উপস্থিতি আর তোমার হাসি মিস্ করবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। রেস্ট ইন পিস ডিনো ম্যান’।
Horrible news to wake up to...
— Sir Vivian Richards (@ivivianrichards) September 24, 2020
You were more than a player I had played against, you were my friend, my brother. Will deeply miss your smile & your presence where ever cricket is played around the world.
Rest In Peace Deano man. The world needed more from you! Always in my ❤️ pic.twitter.com/N9gwAoUgSc
১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক হয়েছিল জোন্সের। সেই বছরেরই মার্চ মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২টি টেস্ট খেলেছেন। মোট সংগ্রহ ৩,৬৩১ রান। টেস্টে ১১টি সেঞ্চুরি। পাশাপাশি, ১৬৪টি ওয়ান ডে ম্যাচ। রান ৬,০৬৮। সেঞ্চুরি ৭টি। ১৯৮৮-৮৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে কেরিয়ারের সর্বোচ্চ ২১৬ রান করলেও ১৯৮৬ সালে চিপকে ভারতের বিরুদ্ধে ২১০ রানের কালজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন জোন্স। সেই ইনিংসের জন্যই তিনি উপমহাদেশে সম্যক পরিচিত এবং বিখ্যাত। অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারতের সেই টেস্টটি ‘টাই’ হয়েছিল। মাদ্রাজের (তখনও ‘চেন্নাই’ নামকরণ হয়নি) গরমে ব্যাট করতে করতে ‘ডিহাইড্রেশন’-এ আক্রান্ত হয়ে মাঠেই বমি করে ফেলেছিলেন জোন্স। ভেজা রুমাল গলায় জড়িয়ে ব্যাট করেছিলেন। কিন্তু মাঠ ছেড়ে যাননি। ম্যাচের পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দিতে হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, পরের বছর, ১৯৮৭ সালে ইডেনে বিশ্বকাপ ফাইনালে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। অজি অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের সেই বিশ্বজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন জোন্স।
Absolutely heartbreaking news about Dean Jones passing away.
— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) September 24, 2020
A wonderful soul taken away too soon. Had the opportunity to play against him during my first tour of Australia.
May his soul rest in peace and my condolences to his loved ones. 🙏🏼 pic.twitter.com/u6oEY1h7zz
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল ধারাভাষ্যকার হিসেবে। মাঠে নেমে কোন দল কী স্ট্র্যাটেজি নেবে, মূলত তা আগে থেকে অনুমান করার চেষ্টা করতেন জোন্স। পাশাপাশিই, কোন ক্রিকেটারের কোথায় কী ভুল হয়েছে, তা-ও ধরিয়ে দিতেন। তাই অনুষ্ঠানে একটা সময় তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘প্রফেসর ডিনো’। তবে একবার ধারাভাষ্য দিতে গিয়েই গভীর বিপাকে পড়েছিলেন জোন্স। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি টেস্ট ম্যাচে খানিকটা হাল্কাচালেই প্রোটিয়া ক্রিকেটার হাসিম আমলা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ওকে উগ্রপন্থীদের মতো দেখতে। হি লুকস লাইক আ টেররিস্ট।’’
দ্রুত জোন্সকে বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল। বেশ কিছুদিন তাঁকে ধারাভাষ্য দিতে দেওয়া হয়নি। পরে ক্ষমা-টমা চেয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকারের প্যানেলে ফেরেন। কিন্তু তাঁর কাজ মূলত ছিল স্টুডিওতেই। মাঠে গিয়ে ধারাভাষ্য দিতে তাঁকে সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি।
Shocked to hear about the tragic loss of Dean Jones. Praying for strength and courage to his family and friends. 🙏🏻
— Virat Kohli (@imVkohli) September 24, 2020
মুম্বইয়ে এসেছিলেন আইপিএলের ম্যাচ নিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত দিতে। যে দেশের মাটিতে তিনি অমর দ্বিশতরানের ইনিংস খেলেছিলেন, সেখানেই সকলকে হতবাক করে শেষ হয়ে গেল জোন্সের জীবনের ইনিংস। স্টার ইন্ডিয়া তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন ডিন জোন্স। আমরা তাঁর শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং কঠিন এই সময়ে তাঁদের পাশে আছি’।
Really shocking to lose a colleague and a dear friend - Dean Jones. Gone so young. Condolences to the family and may his soul rest in peace #RIPDeanJones 🙏 - @cricketcomau pic.twitter.com/pckNBow5Sv
— Ravi Shastri (@RaviShastriOfc) September 24, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy