গুরু-শিষ্য: বার্মিংহামে সোনা জেতার পরে সৃজা ও সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র।
গ্যালারি থেকে বসে কোচ চিৎকার করে তাঁর ছাত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ, তিনি দলের সঙ্গে থাকার অনুমতি পাননি।
এমন দৃশ্য শুধু রুপোলি পর্দায় নয়, দেখা যায় বাস্তবেও। যেমন দেখা গিয়েছে সদ্য সমাপ্ত বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসেও। এক বাঙালি কোচ গ্যালারিতে বসে চেঁচিয়ে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন তাঁর হায়দরাবাদ নিবাসী ছাত্রীকে। কারণ ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে ছাত্রীর সঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয় অনুমতি পাননি তিনি।
এ বারের কমনওয়েলথ গেমস থেকে টেবল টেনিস তারকা মণিকা বাত্রা পদকহীন অবস্থায় ফিরলেও আর এক প্রতিভাবান খেলোয়াড় কিন্তু নজর কেড়েছেন। তিনি হায়দরাবাদের বছর চব্বিশের মেয়ে আকুলা সৃজা। যিনি এ বার টিটি মিক্সড ডাবলসে সোনা জিতেছেন। যাঁকে সাইয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উদীয়মান প্রতিভা। আর এই সৃজাকেই ছোট বয়স থেকে একার হাতে তৈরি করেছেন এক বাঙালি কোচ— সোমনাথ ঘোষ।
সৃজার বয়স যখন ১১, তখন থেকেই সোমনাথের কোচিংয়ে রয়েছেন তিনি। কমনওয়েলথ গেমসেও ছাত্রীর পাশে থাকতে নিজের উদ্যোগে বার্মিংহামে যান সোমনাথ। সেখান থেকে সবে দেশে ফিরেছেন তিনি। বুধবার দিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘হায়দরাবাদে আমি যখন টিটি অ্যাকাডেমি শুরু করেছিলাম, তখন একটা বোর্ড ছিল। সৃজা প্রায় শুরু থেকেই আমার সঙ্গে আছে। ওর পরিশ্রম করার ক্ষমতা অসাধারণ।’’
সোমনাথ জানাচ্ছেন, বার্মিংহামে গেমস ভিলেজে থাকার জন্য তিনি অনুমতিপত্র পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। ‘‘কিন্তু পাইনি। তাও নিজের উদ্যোগে ওখানে চলে গিয়েছিলাম,’’ বলছিলেন সোমনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার গেমসে অতটা কড়াকড়ি ছিল না। সৃজার সঙ্গে বাইরে দেখা করে ওর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। ম্যাচের সময় গ্যালারি থেকে চিৎকার করে যতটা যা বলার বলেছি।’’
সৃজা নজর কেড়েছেন তাঁর ক্ষিপ্রতার জন্য। যেটাকে এই মুহূর্তে জাতীয় সেরা এবং কমনওয়েলথে সোনাজয়ী মহিলা টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের অন্যতম সেরা অস্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে। এই ক্ষিপ্রতাও তৈরি হয়েছে এক অভিনব কৌশলের মাধ্যমে। ছেলেদের সঙ্গে ট্রেনিং করিয়ে সৃজাকে তৈরি করেন সোমনাথ। বঙ্গ কোচ বলছিলেন, ‘‘জাতীয় টিটি এবং কমনওয়েলথ গেমসের আগেও ছেলেদের সঙ্গে ট্রেনিং করেছে সৃজা। যে কারণে ওর ক্ষিপ্রতা এতটা বেশি।’’ আরও একটা কথা ফাঁস করেন তিনি, ‘‘একটা সময় আমার অ্যাকাডেমিতে সৃজা ছাড়া কেউ ছিল না। তখন ও আমার সঙ্গেই খেলত। সেখান থেকেই ওর গতি, ক্ষিপ্রতা বাড়তে শুরু করে।’’
সিঙ্গলস সেমিফাইনালে তৃতীয় গেমে অল্পের জন্য হেরে যান সৃজা। এর পরে শরৎ কমলের সঙ্গে জুটি বেঁধে মিক্সড ডাবলসে সোনা। যা নিয়ে সোমনাথের মন্তব্য, ‘‘শরৎ আমার বন্ধু। জাতীয় টিটি-র সময়ই ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। সৃজার খেলা দেখে পছন্দ হয়েছিল শরতেরও।’’
বাংলার হয়ে একটা সময় নিয়মিত খেলতেন সোমনাথ। ২০০২ সাল থেকে হায়দরাবাদে। যে রাজ্যের হয়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত খেলেন। কিন্তু তার পরে চোট খেলোয়াড় জীবন শেষ করে দেয়। শুরু হয় কোচিং জীবন। একটা টেবল নিয়ে শুরু করা অ্যাকাডেমিতে এখন টেবলের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও। বাংলা থেকে প্রাপ্তি সেনের মতো প্রতিভাও হায়দরাবাদে গিয়ে কোচিং নিচ্ছেন।
সোমনাথের স্বপ্ন, আরও অনেক প্রতিভাকে রাস্তা দেখানোর। আর সৃজার সামনে ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে দেওয়া। যে ‘রোডম্যাপ’-এর শেষে রয়েছে দু’টো গন্তব্যস্থল। এশিয়ান গেমস এবং অলিম্পিক্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy