দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাইকা। ছবি: পিটিআই
ছোটবেলায় বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ক্রিকেট খেলুক। নিজের তেমন ইচ্ছা ছিল এমন নয়। কিন্তু বাবাকে ছোটবেলাতেই হারানোর পর জেদ চেপে গেল মেয়েটার। বাবার কথা রাখতেই হবে। ক্রিকেটার তাঁকে হতে হবে। আর কিছু নিয়ে ভাবেন না সাইকা ইশাক। মেয়েদের আইপিএলে বাংলার ক্রিকেটের মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রায় প্রতি দিন কোচের সঙ্গে কথা বলছেন নিজেকে আরও ভাল ক্রিকেটার করে তুলতে। সেই কথাই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন সাইকার কোচ শিবসাগর সিংহ।
বৃহস্পতিবার দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাইকা। তাঁর দাপটে দিল্লি শেষ হয়ে যায় ১০৫ রানে। ২ উইকেট হারিয়ে সহজেই সে রান তুলে নেয় মুম্বই। এখনও পর্যন্ত উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষে তিনিই। তিন ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট। শিবসাগর বললেন, “সাইকা এখন বাংলার এক নম্বর বোলার। ও জানত যে উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে কোনও একটা দলে ও সুযোগ পাবেই। প্রায় প্রতি দিন কথা হয় ওর সঙ্গে। প্রতিটা ম্যাচে ভাল করার খিদে রয়েছে ওর মধ্যে। প্রতিটা বল ভাল করতে হবে। এটাই ওর এখন একমাত্র লক্ষ্য। যে সুযোগটা পেয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে চায়।”
এই সুখের সময়টা যদিও কয়েক বছর আগে ছিল না। বাংলা দল থেকে বাদ পড়েছিলেন সাইকা। ২০২১ সালে তিনি শিবসাগরের কাছে আসেন নিজের বোলিংয়ে উন্নতি করতে। শিবসাগর বললেন, “ওর কিছু টেকনিকাল সমস্যা হচ্ছিল। তিন বছর দলের বাইরে ছিল। কী করবে বুঝতে পারছিল না। সেই সময় আমার কাছে আসে। তখন থেকেই আমার কাছে অনুশীলন করছে। লাল বল এবং সাদা বলে খেলার ধরনে একটা তফাত আছে। সেটা নিয়ে কাজ করে আমার সঙ্গে। লাইন, লেংথের কিছু সমস্যা হচ্ছিল, সেগুলো আমি দেখে দিয়েছিলাম।”
পার্ক সার্কাসে বাড়ি সাইকার। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন ভাইবোন মানুষ হয়েছেন মায়ের কাছে। অভাবের সংসারে সাইকার ক্রিকেট আলো নিয়ে এসেছে। মেয়েদের আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগিয়েছেন। শিবসাগর বললেন, “ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে ও। একটু ব্যাট, বল করার সুযোগ পেলেই আনন্দ পায়। ছোটবেলায় ছেলেদের সঙ্গে খেলত। পরে সেটাকেই পেশা করে। এখন ওর লক্ষ্য ভাল খেলা।”
সাইকা নিজে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ক্রিকেটার হতে চাননি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাইকা বলেন, “আমার ক্রিকেটার হওয়ার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। বাবা আমাকে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় করায়। এখন ক্রিকেটই আমার সব কিছু। ক্রিকেটার হওয়ার জন্য বাবা আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল।” ভাগ্যিস উৎসাহ দিয়েছিলেন। না হলে বাংলার ক্রিকেটার হিসাবে মেয়েদের আইপিএলে নজর কাড়ার সুযোগই পেতেন না।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে প্রথম ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন সাইকা। পরের ম্যাচে নিয়েছিলেন দু’উইকেট। বৃহস্পতিবার তিন উইকেট নিয়ে দলের হয়ে বল হাতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। সাইকা বলেন, “হ্যারিদি (হরমনপ্রীত কৌর) আমার বোলিং দেখে খুশি। আমাকে খুব সমর্থন করে। যখনই দলের উইকেট প্রয়োজন হয়েছে, আমাকে বল দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মুম্বই দলে আমার সময়টা বেশ ভাল কেটেছে। পুরো দল একে অপরকে সাহায্য করে। সকলের সমর্থনের জন্যই এত উইকেট পেয়েছি।”
আইপিএলে ভাল খেললে জাতীয় নির্বাচকদের নজরেও তাড়াতাড়ি আসা যায়। বাংলার সাইকাও সেই সুযোগ পেতে পারেন। আগামী দিনে ভারতের জার্সিতেও বল হাতে দেখা যেতে পারে তাঁকে। যদিও তাঁর কোচ শিবসাগর জানিয়েছেন যে, বেশি দূরের চিন্তা করেন না সাইকা। পরের ম্যাচ, পরের বলটুকু নিয়েই ভাবেন। সে দিকেই নজর দেন বাংলার সাইকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy