ঘুরবে: বাইশ গজের পাশে আলোচনায় কোচ দ্রাবিড়, রাঠৌররা। ছবি পিটিআই।
প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হয়েছিল তাদের দ্বৈরথ দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হচ্ছে সেই চেনা দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে। কিন্তু সাদাম্পটনের যে পিচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-নিউজ়িল্যান্ড, তার সঙ্গে কানপুরের গ্রিন পার্কের কোনও মিলই নেই। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কানপুরে শুরু ভারত বনাম নিউজ়িল্যান্ড টেস্টের পিচ কী রকম হতে চলেছে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট মহলে। টেস্ট শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে খোঁজখবর নেওয়ার পরে গ্রিনপার্কের পিচ নিয়ে একটা ধারণা তৈরি করা যাচ্ছে।
কানপুরের এই পিচ তৈরি হয় কালো মাটি দিয়ে। যা নিয়ে আসা হয় স্থানীয় গ্রামের পুকুর থেকে। এই কালো মাটির বিশেষত্ব হল, শুরুর দিকে যথেষ্ট আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জল না দেওয়া হলেই শুকিয়ে গিয়ে ফেটে যায়। আর উইকেটের সেই ফাটল কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে যান স্পিনাররা।
তা হলে কি পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দেওয়া হচ্ছে কানপুরের বাইশ গজে? গ্রিন পার্কের পিচ-প্রস্তুতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক জনের মন্তব্য, ‘‘বোর্ডের নির্দেশিকায় আছে ৪০ লিটার জল অন্তত দিতেই হবে পিচে, যদি বৃষ্টি না হয়। তার পরে প্রয়োজন মতো বাড়াতে হবে জলের পরিমাণ।’’ কিন্তু এখানে কী হচ্ছে? জবাব এল, ‘‘৪০ লিটারের বেশি জল কোনও ভাবেই দেওয়া হবে না। কারণ আমাদের ঘূর্ণি উইকেট দরকার। জল না পড়লে নীচের দিকে মাটি ফাটতে শুরু করবে। ওপর থেকে উইকেট দেখে শুরুতে সেটা বোঝা যাবে না। কিন্তু ম্যাচ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ফাটল বাড়বে।’’
বোঝা না গেলেও পিচ কী রকম আচরণ করতে পারে, তার ইঙ্গিত দুই শিবিরেই আছে। ভারতের অনুশীলনে দেখা গিয়েছে নতুন বল হাতে অনুশীলন করছেন অফস্পিনার আর অশ্বিন। প্রয়োজনে এই অফস্পিনারকে বোলিং শুরু করতে দেখলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। এমনকি নেটে অফস্পিন করলেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজেই! আর নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভারতে টেস্ট মানেই স্পিন সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আমরা সে ভাবেই নিজেদের তৈরি করছি।’’
তা হলে কি টেস্টের প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরতে শুরু করবে? এ দিন কানপুরে পিচ প্রস্তুতকারক শিব কুমার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘পিচ ব্যাটারদেরও সাহায্য করবে। দ্বিতীয় দিন থেকে স্পিন করতে পারে।’’ গ্রিন পার্ককে হাতের তালুর মতো যিনি চেনেন, সেই কুলদীপ যাদবের কোচ কপিল পাণ্ডে কানপুর থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘পিচের যা অবস্থা, তাতে মনে হয় প্রথম দিনের শেষ দিক থেকেই বল ঘুরতে থাকবে। ম্যাচ সাড়ে তিন দিনে শেষ হয়ে গেলে আমি অবাক হব না।’’ তবে তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, প্রথম দু’ঘণ্টায় পেসাররা সাহায্য পেতে পারেন। কপিল পাণ্ডের কথায়, ‘‘কালো মাটির পিচ হওয়ায় শুরুর দিকে আর্দ্র থাকবে। গ্রিন পার্ক আবার গঙ্গার পাশে। তাই হাওয়াও দেবে। সব মিলিয়ে প্রথম দু’ঘণ্টা সুইং বোলাররা সাহায্য পাবে।’’ এই পিচে দু’দলই যদি তিন স্পিনারে খেলতে নামে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পাঁচ বছর আগে, এই গ্রিন পার্কেই অফস্পিনার অশ্বিন এবং বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজার বোলিংয়ের সামনে শেষ হয়ে গিয়েছিল নিউজ়িল্যান্ড। এ বার দলে আছেন ইংল্যান্ড সিরিজ়ে ২৭ উইকেট নেওয়া বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর পটেলও। এই তিনমূর্তির আক্রমণের মুখে পড়তে হতে পারে কেন উইলিয়ামসনদের।
উল্টো দিকে, ধারে-ভারে নিউজ়িল্যান্ডের স্পিনাররা অনেকটাই পিছিয়ে ভারতীয়দের থেকে। বাঁ-হাতি স্পিনার অজাজ় পটেল খেলেছেন মাত্র ন’টি টেস্ট। উইকেট ২৬টি। অন্য দিকে অফস্পিনার উইলিয়াম সমারভিলের টেস্ট সংখ্যা চার। উইকেট ১৫টি। যেখানে অশ্বিন-জাডেজার মিলিত টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৬৪০!
তবে এই অনভিজ্ঞ স্পিন জুটির উপরেই ভরসা রাখছেন উইলিয়ামসন। বলেছেন, ‘‘অজাজ় এবং উইল আমাদের বোলিং আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে ভারতীয় পিচে।’’ তৃতীয় স্পিনার খেললে সুযোগ পাবেন অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র। তবে কালো মাটির পিচে বাউন্সটাও থাকে। তাতে স্পিনারদের সঙ্গে কিছুটা সাহায্য পেতে পারেন পেসাররাও। তাই স্পিন-শক্তির সঙ্গে আরও একটা অস্ত্র কাজে লাগাতে চায় নিউজ়িল্যান্ড। রিভার্স সুইং। উইলিয়ামসনের কথায়, ‘‘এখানে মনে হয় রিভার্স সুইং পাওয়া যাবে। সব কিছুই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’’
মাত্র কয়েক মাস আগে এই ভারতকে হারিয়েই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতেছিল নিউজ়িল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের সেই সুখস্মৃতি দুঃস্বপ্নে বদলে দিতে পারেন কি না ভারতীয় স্পিনাররা, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy