বাঁকুড়া জেলা ক্রিকেট লিগের ম্যাচে পুরুষদের দলের মুখোমুখি মহিলাদের দল। নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন আগেই পাঁচ বছরের বান্ধবী জর্জি হজের সঙ্গে আংটিবদল করে খবরে উঠে এসেছেন ইংল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেটার ড্যানি ওয়াট। মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত মুখ ওয়াট পেশাদার ক্রিকেট খেলেছেন পুরুষদের সঙ্গে। আমাদের রাজ্যেও এমন অনেক মহিলা রয়েছেন, যাঁরা পুরুষদের বিরুদ্ধে নেমে পড়েন ২২ গজে। অভিনব এই ক্রিকেট ম্যাচ হল বাঁকুড়ায়।
বাঁকুড়ার পল্লবী মাহাত, নবনীতা চন্দ, মুক্তা রায়, বর্ষা দাস, খুশি খান্ডেলওয়ালরা এখনও তেমন পরিচিত নাম নন। তবে তাঁদের সাহসের অভাব নেই। ক্রিকেট মাঠে নামলে তাঁরা কম যান না কোনও পুরুষ ক্রিকেটারের থেকে। কম যে যান না তা প্রমাণ করতে অনুশীলন করেন পুরুষদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, দল বেঁধে নেমে পড়েন খেলতে। পুরুষদের দলের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সময় ক্লাব স্তরের ম্যাচে দু’এক জন মহিলা খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু জেলা ক্রিকেট লিগে প্রথম বার খেলতে নেমে পুরুষদের দলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মহিলাদের দল এমন কামাল দেখাবে, তা ভাবতে পারেননি সংগঠকরাও। বাঁকুড়ার তামলীবাঁধ ময়দানে সোমবার জেলা ক্রিকেট লিগের খেলায় শেষ পর্যন্ত পল্লবী, মুক্তা, খুশি, নবনীতারা হারলেও তাঁদের পারফরম্যান্স নজর কাড়ল।
লিগের বিভিন্ন ডিভিশন মিলিয়ে জেলার মোট ৪৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁকুড়ার এই ক্রিকেট লিগ ছিল পুরুষদের জন্য। এবারই প্রথম জেলা ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পেলেন মহিলারাও। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমতি পাওয়ার পর শুধু মহিলাদের নিয়েই ক্রিকেট দল তৈরি করেছে বাঁকুড়া নির্মলডাঙ্গা ক্লাব। লিগে দ্বিতীয় কোনও মহিলা দল না থাকায় জগদল্লা যুবক সংঘের পুরুষ দলের সঙ্গেই মহিলা দলকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাঁকুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
পিছিয়ে যাননি পল্লবী, নবনীতা, মুক্তা, বর্ষা, খুশিরা। টস জিতে নির্মলডাঙ্গা ক্লাবের মহিলারা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্ধারিত ২৫ ওভারে তাঁরা করেন ৮ উইকেটে ৫৩ রান। পল্লবীর ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। পুরুষদের বলে একাধিক চারও মেরেছেন তাঁরা। ব্যাটের পর বল হাতেও জগদল্লা যুবক সংঘের পুরুষ দলকে বেগ দেন পল্লবী, নবনীতা, মুক্তা, বর্ষা, খুশিরা। ৯.৫ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নিলেও তাদের ৫ উইকেট হারাতে হয়। মুক্তা ৫ ওভার বল করে ৩৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন।
সহ-অধিনায়ক খুশি জানিয়েছেন, “প্রথম বার জেলা স্তরে ক্রিকেট লিগ খেলার সুযোগ পেলাম। আমরা ভীষণ আনন্দিত। পুরুষদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার বিষয়টা আমাদের ভাবায়নি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মাঠে সেরাটা দেওয়ার। আমরা সেটা পেরেছি। আগামী দিনে ভুল শুধরে আরও ভাল খেলব।’’ মেয়েদের খেলায় খুশি কোচ সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন, “আমাদের সবাই ভাল খেলেছে। এই ধরনের আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে মেয়েদের উৎসাহ বাড়বে।” অন্য দিকে জয়ী দলের ক্রিকেটার তাপস শীট বলেছেন, “আমরা ভেবেছিলাম খেলাটা একপেশে হবে। কিন্তু মাঠে নেমে বুঝতে পারি মহিলারাও পিছিয়ে নেই। খেলাটা দারুণ উপভোগ করেছি।”
বাঁকুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সাব কমিটির সম্পাদক রুদ্র চৌধুরী বলেছেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এখন প্রচুর মহিলা ক্রিকেট খেলছেন। তাঁদের সুযোগ ও উৎসাহ দিতে জেলা ক্রিকেট লিগে এ বার মহিলা দলকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আমরা সফল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy