রোহিত শর্মা (বাঁ দিকে) ও বিরাট কোহলি। এ বার কি অবসরের সময় এসেছে তাঁদের? —ফাইল চিত্র।
পার্থের দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান বাদ দিলে চলতি সিরিজ়ে রান নেই বিরাট কোহলির। বাকি পাঁচটি ইনিংসে ৭, ১১, ৩, ৩৬ ও ৫ রান করেছেন তিনি। রোহিত শর্মার অবস্থা আরও খারাপ। চলতি সিরিজ়ে মাত্র এক বারই দুই অঙ্কে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি। পাঁচটি ইনিংসে করেছেন ৩, ৬, ১০, ৩ ও ৯ রান। ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার দলের বোঝা হয়ে উঠছেন। তবে কি এ বার টেস্ট ক্রিকেট থেকেও অবসরের সময় এসেছে তাঁদের?
রোহিতের লজ্জার নজির
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খুব দুর্বল দেখাচ্ছে রোহিতকে। তাঁর রক্ষণ বলে যেন কিছুই নেই। সামনের পায়ে খেলার সময় ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে অনেক তফাত থাকছে। তার সুবিধা নিচ্ছেন পেসারেরা। বলের কাছে না গিয়ে শট খেলায় নিয়ন্ত্রণ থাকছে না রোহিতের। কামিন্সের বলে ছ’বার আউট হয়েছেন রোহিত। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বলে কোনও অধিনায়ক হিসাবে সবচেয়ে বেশি বার আউট হয়েছেন রোহিত।
১২ মাসে বদলে গিয়েছে রোহিতের ব্যাটিং
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে ২৫টি ইনিংসে পেসারদের বিরুদ্ধে মাত্র ২৯৬ রান করেছেন রোহিত। তিনি খেলেছেন ৪৬৭টি বল। আউট হয়েছেন ১৬ বার। গড় ১৮.৫০। প্রতি বার আউট হওয়ার আগে মাত্র ২৯টি বল খেলেছেন রোহিত। ক্রিকেটে বলা হয়, যে বোলার গুড লেংথে বেশি বল করতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে রান করা কঠিন। ব্যাটিং ক্রিজ় থেকে ৬-৮ মিটারের এলাকাকে বলা হয় গুড লেংথ। সেখানে বল করলে যেমন সামনের পায়ে সহজে খেলা যায় না, তেমনই পিছনের পায়ে খেলতেও সমস্যা হয়। এই গুড লেংথেই সমস্যায় পড়েছেন রোহিত।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ২৭জন ব্যাটার পেসারদের বিরুদ্ধে গুড লেংথে হাজারের বেশি বল খেলেছেন। তাঁদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার দিমুখ করুণারত্নে (৬০.৮৮) ও নিউ জ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনের (৫৩.৬৬) পরে সবচেয়ে ভাল গড় রোহিতের (৫৩.১৬)। এই সময়ে বিশ্বের সেরা সাত ব্যাটার গুড লেংথে প্রতি বার আউট হওয়ার আগে ৬৫টি বল খেলেছেন। সেখানে রোহিত প্রতি বার আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ১৩২টি বল। সেটাই গত ১২ মাসে কমে হয়েছে ৩০টি বল।
ভুল শট খেলার প্রবণতা বেড়েছে রোহিতের
রোহিতের পতনের একটা বড় কারণ তাঁর ভুল শট খেলার প্রবণতা। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা সাত ব্যাটার পেসারদের বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ ভুল শট খেলেছেন। সেখানে রোহিত খেলেছেন ১৯.৩ শতাংশ। শেষ ১২ মাসে গোটা বিশ্ব জুড়েই ব্যাটারদের ভুল শট খেলার প্রবণতা বেড়েছে। ১৭ শতাংশ থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২০.৮ শতাংশ। কিন্তু বাকিদের তুলনায় রোহিতের ভুল শট খেলার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে। ১৯.৩ শতাংশ থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২৮.৮ শতাংশ। মেলবোর্নের দুই ইনিংসেই ভুল শট খেলে আউট হয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
ব্যাটিং ফর্ম প্রভাব ফেলেছে রোহিতের নেতৃত্বেও
ক্রিকেটে বলা হয়, যে অধিনায়ক নিজে ভাল খেলছেন, তিনি নেতৃত্বও ভাল দেবেন। যেমনটা দেখা যাচ্ছে প্যাট কামিন্সের ক্ষেত্রে। তিনি রান করছেন। উইকেট নিচ্ছেন। তার ফলে অধিনায়কত্বও ভাল হচ্ছে। বোলিং থেকে ফিল্ডিং পরিবর্তনে সেটা দেখা যাচ্ছে। রোহিতের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো হচ্ছে। তাঁর খারাপ ফর্মের প্রভাব পড়েছে নেতৃত্বেও। চলতি সিরিজ়ে তাঁর অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সব সিদ্ধান্ত ভারতের হারের বড় কারণ।
রোহিতকে খেলানোর খেসারত দিচ্ছেন রাহুল, শুভমন
রোহিতকে খেলানোর জন্য অপর দুই ব্যাটার সমস্যায় পড়েছেন। প্রথম তিনটি টেস্টে ভারতের হয়ে ওপেন করেন লোকেশ রাহুল। ভাল খেলছিলেন তিনি। কিন্তু মেলবোর্নে রোহিতকে ওপেন করানোর জন্য রাহুলকে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছে। এটি রাহুলের পছন্দের জায়গা নয়। ফলে মেলবোর্নে রান পাননি রাহুল। তিন নম্বরে নিজের জায়গা পাকা করার পরেও এই টেস্টে বসতে হয়েছে শুভমন গিলকে। তারও খেসারত দিতে হয়েছে ভারতকে। অধিনায়ক বলেই কি এখনও প্রথম একাদশে খেলছেন রোহিত? এমনটাই প্রশ্ন তুলছেন ইরফান পাঠানের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার। তাঁর মতে, অধিনায়ক না থাকলে হয়তো প্রথম একাদশে জায়গা পেতেন না রোহিত।
অফ স্টাম্পের দুর্বলতা কমেনি কোহলির
কোহলিরও অফ স্টাম্পের দুর্বলতা কমেনি। ১০ বছর আগে ইংল্যান্ড সফরে জেমস অ্যান্ডারসনের বলে বার বার খোঁচা মেরে আউট হতেন। তার পরে নিজের খেলার ধরন বদলান কোহলি। ব্যাটিং স্টান্সে বদল আনেন। কিন্তু সেই দুর্বলতা আবার ফিরেছে। গত পাঁচ বছর ধরে তাঁর টেস্ট গড় ২৮। কোহলির মতো ব্যাটারের কাছ থেকে এই ফর্ম আশা করা যায় না।
রোগ জানলেও ওষুধ নেই কোহলির কাছে
অফ স্টাম্পের বাইরের বলে যে তাঁর সমস্যা হচ্ছে, সেটা কোহলি জানেন। মেলবোর্নে নামার আগে তিনি নিজেই সেই কথা জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ, রোগ জানেন কোহলি। কিন্তু সেই রোগ সারানোর ওষুধ নেই তাঁর কাছে। সুনীল গাওস্কর পরামর্শ দিয়েছিলেন, সিডনিতে সচিন তেন্ডুলকরের ২৪১ রানের ইনিংস থেকে শিক্ষা নিতে। সে বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বার বার আউট হচ্ছিলেন সচিন। তাই তিনি ঠিক করেছিলেন, সিডনিতে একটিও কভার ড্রাইভ মারবেন না। নিজের পছন্দের শট বাদ দিয়েছিলেন। গোটা ইনিংসে একটিও কভার ড্রাইভ মারেননি সচিন। তার পরেও ২৪১ রান করেছিলেন। সেটা কেন করতে পারছেন না কোহলি?
লোভ সামলাতে ব্যর্থ কোহলি
কোহলির পছন্দের শট কভার ড্রাইভ। এই শট খেলে প্রচুর রান করেছেন তিনি। সেই শটই এখন তাঁর আউট হওয়ার কারণ। যে কোনও বোলার তাঁর বিরুদ্ধে একটাই পরিকল্পনা করছেন। টানা অফ স্টাম্পের বাইরে বল করছেন সকলে। কোহলি উইকেট দিয়ে ফিরছেন। চলতি সিরিজ়ে ছ’টি ইনিংসে অফ স্টাম্পের বাইরের বলেই আউট হয়েছেন কোহলি। প্রত্যেক বার পিছনে খোঁচা মেরে। মেলবোর্নে দুই ইনিংসে শুরুতে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়লেও একটা সময় পরে লোভ সামলাতে পারছেন না তিনি। সেখানেই সমস্যা হচ্ছে কোহলির।
সত্যিই কি এ বার অবসরের সময় রোহিত, কোহলির
গত কয়েক বছরে টেস্টে ভারতীয় দলের খেলা দেখলে বোঝা যাবে, কোহলি বা রোহিতের উপর দলের নির্ভরতা অনেক কমেছে। শেষ পর্যন্ত পরিসংখ্যান কথা বলে। রান না করলে বা উইকেট না নিতে পারলে প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া কঠিন। ভারতীয় দলে এখন বিকল্প কম নেই। রোহিত না থাকলে ওপেনে রয়েছেন রাহুল। মিডল অর্ডারে সরফরাজ় খান, দেবদত্ত পাড়িক্কলেরা কোহলির জায়গা নিতে পারেন। এই সিরিজ়ই রোহিতের শেষ সিরিজ় বলে মনে করছেন ভারতের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। তাঁর কথায়, “রোহিতের বিষয়ে এ বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। ওর পা নড়ছে না। বল দেরিতে খেলছে। আমার মনে হয় এটাই ওর শেষ সিরিজ়।” তবে কোহলি এখনও তিন-চার বছর খেলতে পারেন বলে মনে করছেন শাস্ত্রী।
যত দিন যাচ্ছে, চাপ বাড়ছে ভারতের দুই সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটারেরা উপর। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে ব্যাটিং ফর্ম খারাপ থাকার কারণেই মাঠে কোহলি বার বার বিতর্কে জড়়াচ্ছেন। পাশাপাশি রোহিতের সমালোচনা হচ্ছে। এই চাপ দুই ক্রিকেটার কত দিন সামলাতে পারেন সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। পরের টেস্টে সিডনিতে জিততে পারলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকবে ভারতের। নইলে সিডনির পর আগামী বছরের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় ভারতের। অর্থাৎ, মাঝে অনেকটা সময় বাকি। রোহিত, কোহলির বয়স আরও খানিকটা বাড়বে। তবে কি এই সিরিজ়ের পরেই অবসর নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানাবেন রোহিত, কোহলি? সে দিকেই নজর ক্রিকেটপ্রেমীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy