ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে নজর কেড়েছিলেন বরুণ চক্রবর্তী, যা তাঁকে এক দিনের ক্রিকেটে সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও কি সুযোগ পাবেন বরুণ? তা নিয়েই চলছে জল্পনা।
টি-টোয়েন্টি বনাম এক দিনের ক্রিকেট
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন বরুণ। সেই ম্যাচে ৫৪ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন তিনি। অভিষেক ম্যাচে বল হাতে তেমন নজর কাড়তে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাত্র চার ওভার বল করতে হয়। এক দিনের ক্রিকেটে ১০ ওভার বল করতে গিয়েই কি সমস্যায় পড়ছেন বরুণ? না কি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা করে নেবেন ৩৩ বছরের এই স্পিনার?
বুমরাহের জায়গায় বরুণ?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য প্রাথমিক দল বেছে নিয়েছে ভারত। সেই দলে বরুণকে রাখা হয়নি। তবে মূল দল ঘোষণার আগে পরিবর্তন করতেই পারে ভারত। সেখানে বরুণকে জায়গা করে দিতে হলে কাউকে বাদ দিতে হবে। যদি জসপ্রীত বুমরাহ খেলার জন্য তৈরি না হন, তা হলে একটি জায়গা ফাঁকা হবে। কিন্তু সেই জায়গায় এক জন পেসারকে না নিয়ে স্পিনার কি নেবে ভারত?
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কটকে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় বরুণের। কুলদীপ যাদবকে বিশ্রাম দিয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কোচ গৌতম গম্ভীরের। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে ভাল বল করা বরুণ এক দিনের ক্রিকেটে ভেলকি দেখাতে পারলেন না কেন? তামিলনাড়ুর হয়ে এক দিনের ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচে ৬০টি উইকেট আছে বরুণের। প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মতে, বরুণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে ভাবে বল করেছিলেন, এক দিনের ক্রিকেটে সেটা করেননি। মঞ্জরেকর বলেন, “মন্থর গতিতে বল করছিল বরুণ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ও কী ভাবে বল করে, সেটা দেখার কৌতূহল ছিল আমার। এটা বরুণের কাছে নতুন পরীক্ষা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটার ওর বিরুদ্ধে বড় শট খেলতে যায়। সেটার সুবিধা নেয় বরুণ। এক দিনের ক্রিকেটে সেটা সব সময় হবে না। বরুণ অফ স্টাম্পের বাইরে বল করছিল। গতিও কম ছিল। বিভিন্ন রকম জিনিস চেষ্টা করছিল বরুণ। ব্যাটারকে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করছিল। আমি চাইব ও টি-টোয়েন্টিতে যে ভাবে বল করে, সেটাই এক দিনের ক্রিকেটে করুক। জাডেজা যেমন করে।”
আরও পড়ুন:
১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ভারত যে প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে, সেখানে তিন জন পেসার রয়েছেন। মহম্মদ শামি এবং অর্শদীপ সিংহের সঙ্গে জসপ্রীত বুমরাহকে রাখা হয়েছে। যদিও বুমরাহ এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর রিহ্যাব চলছে। আদৌ তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। বুমরাহ খেলতে না পারলে সেই জায়গায় স্পিনার বরুণকে নিয়ে যেতে পারে ভারত? দলে রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং কুলদীপ যাদব রয়েছেন। চার জন স্পিনার দলে থাকার পরেও এক জন পেসারের বদলে বরুণকে নেবে ভারত? না কি কোনও এক জন স্পিনারকে বসিয়ে তাঁর জায়গায় বরুণকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাববে দল?
দুবাইয়ের গরম
বাংলার বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল। বাংলার প্রাক্তন পেসারের মতে, দুবাইয়ে যে সময় খেলা হবে, তখন অনেকটাই গরম পড়ে যাবে। সেই কথা মাথায় রেখে ভারত দু’জন পেসার নিয়ে যেতে পারে। আনন্দবাজার অনলাইনকে শিবশঙ্কর বললেন, “বরুণকে চাইলে ভারত নিয়ে যেতেই পারে। বুমরাহ যদি খেলতে না পারে তা হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়াই ভাল। সে ক্ষেত্রে ভারত দু’জন পেসার এবং দু’জন স্পিনার খেলাতে পারবে। সঙ্গে দু’জন অলরাউন্ডার থাকবে। তাতে দলের ব্যাটিং গভীরতা যেমন থাকবে, তেমনই বোলিংয়ে বৈচিত্রও থাকবে।”
এগিয়ে কুলদীপ
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার সুরেশ রায়না মনে করেন বরুণকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেওয়া উচিত হবে না। তিনি বলেন, “বরুণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বল করতেই অভ্যস্ত। কুলদীপের সেখানে বৈচিত্র বেশি। উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা বেশি। বড় প্রতিযোগিতায় কী ভাবে খেলতে হয় তা জানে কুলদীপ। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে বাবর আজ়মকে যে ভাবে আউট করেছিল, তা এখনও মনে আছে আমার। বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে কুলদীপের।” সেই কারণে কুলদীপের বদলে বরুণকে নিয়ে যাওয়ার বিরোধী রায়না।
বরুণকে নেওয়ার সমস্যা
বরুণকে দলে নিলে কয়েকটি সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়। ভারতের হয়ে খেলা প্রাক্তন স্পিনার বললেন, “বরুণ কিন্তু খুব ভাল ফিল্ডার নয়। মাঠে দাঁড়িয়ে ৫০ ওভার ফিল্ডিং করা খুব সহজ নয়। এখনকার ক্রিকেটে ফিল্ডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। একটা ক্যাচ ম্যাচের ফল বদলে দেয়। বরুণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভাল। কিন্তু একটা ম্যাচে চার ওভার বল করা আর ১০ ওভার বল করার মধ্যে তফাত আছে। বরুণকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নিলে এই দিকগুলো মাথায় রাখতে হবে ভারতকে।”
পরিকল্পনাতেই ছিলেন না বরুণ
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে খেলার আগে বরুণকে নিয়ে এক দিনের ক্রিকেটে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না ভারতের। কিন্তু পাঁচ ম্যাচে ১৪টি উইকেট নেওয়া সিরিজ় সেরা বরুণ যে ভাবে ইংরেজ ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলেন, তাতে এক দিনের ক্রিকেটের দরজা খুলে যায় তাঁর জন্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের দলে হঠাৎ করেই নেওয়া হয় বরুণকে। বুমরাহের চোট না সারায় সেই জায়গায় নেওয়া হয় তাঁকে। প্রথম ম্যাচে কুলদীপকে খেলানো হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে বসিয়ে খেলানো হয় বরুণকে। কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। তার পরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে বরুণকে সুযোগ দেওয়া হলে প্রশ্ন উঠতে পারে ক্রিকেটমহলে।