তামিম ইকবাল। —ফাইল চিত্র।
৮২ দিন আগে হঠাৎ ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল। অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। যদিও সেই অবসরের মেয়াদ ছিল মাত্র ২৯ ঘণ্টার। তামিমকে ক্রিকেটে ফিরিয়ে এনেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে আদৌ তামিমকে ফিরিয়ে আনার কোনও প্রয়োজন ছিল কি?
২০২১ সালে তামিমকে বাংলাদেশের এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক করা হয়েছিল। দু’বছর পর বিশ্বকাপ থাকায় মনে করা হয়েছিল যে, সেই প্রতিযোগিতা মাথায় রেখেই তামিমকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে চলেছিল দল। কিন্তু বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর দেখা গেল ২৪৩টি এক দিনের ম্যাচ খেলা তামিম জায়গাই পেলেন না দলে। ৩৪ বছরের এই ব্যাটার দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তাঁকে বাদ দিয়ে দল ঘোষণা করায় সকলেই অবাক। যদিও তামিম নিজে দল ঘোষণার আগে বলেন, “আমি বিশ্বকাপের দলে থাকতে চাই না। পুরো সুস্থ নই। যদিও সেটা কারণ নয়। এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি কারণ, আমার জায়গায় যারা খেলছিল, তাদের প্রতি সুবিচার হবে না আমি দলে থাকলে। হঠাৎ করে এসে ওদের জায়গা নিয়ে নেওয়া আমার ঠিক নয়।”
৬ জুলাই ক্রিকেট থেকে হঠাৎ অবসর নিয়েছিলেন তামিম। ২৯ ঘণ্টা পর আবার অবসর থেকে ফিরে আসেন। সে দিন বলেছিলেন যে, দেড় মাসের জন্য ছুটি নিচ্ছেন। মনে করা হয়েছিল এশিয়া কাপে খেলবেন। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে তাঁর চোট সারেনি। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন। ফলে অবসর থেকে ফিরে আসার পর তামিম খেলেন মাত্র দু’টি ম্যাচ। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সেই দুই ম্যাচের একটিতে বৃষ্টির জন্য ব্যাট করতে নামেননি, অন্যটিতে করেন ৪৪ রান। ৫ জুলাই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার পর এই দু’টি মাত্র ম্যাচ খেলে তামিম বিশ্বকাপে যেতে চাননি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তা হলে তামিমকে ফেরানো হল কেন?
৬ জুলাই অবসর নেওয়ার সময় তামিম বলেছিলেন, “এটাই আমার শেষ। আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচই আমার শেষ ম্যাচ ছিল।’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘আমি হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। অবসরের পিছনে অনেক কারণ আছে। সে সব এখানে বলতে চাই না। পরিবারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। অনেক ভেবেছি। আমার মনে হয়েছে, এটাই অবসর নেওয়ার সঠিক সময়।” অবসরের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন তামিম। মাথা ঝুঁকিয়ে টুপির আড়ালে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পারছিলেন না। বলেছিলেন, ‘‘আমার অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন যে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই আমি। আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া সহজ নয়।’’
১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার হঠাৎ করে শেষ করে দিয়েছিলেন তামিম। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। হস্তক্ষেপ করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর অবসর প্রত্যাহার করেছিলেন তামিম। বলেছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী দুপুরে তাঁর বাড়িতে আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ওঁর সঙ্গে আমার অনেক ক্ষণ আলোচনা হয়েছে। উনি আমাকে খেলায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি অবসর তুলে নিচ্ছি। সবাইকে না বললেও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে না বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
তামিমকে নিয়ে যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবসরের নাটকের মাঝে জানা যায় তাঁর সঙ্গে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। তামিমের অবসরকে ‘নাটক’ বলেছিলেন পাপন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে তামিমের পাশেই ছিলেন তিনি। তামিমের অবসরের পর বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাপন বলেছিলেন, “যা নাটক শুরু হয়েছে, আর ভাল লাগে না। অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম। একটা সিরিজ চলছে। ওর এ রকম কোনও পরিকল্পনা থাকলে আলোচনা করতে অসুবিধা কোথায়? আমার সঙ্গে রোজই কথা হয়। কাউকে না জানিয়ে এ রকম কাজ করব, এই মানসিকতা থেকে ওরা কবে বার হবে! এটা করে ওদের কী লাভ হয় বুঝি না। তবে নিশ্চয়ই কোনও লাভ হয়। নইলে এমন করবে কেন? তুমি যদি অধিনায়কত্ব না-ই করতে চাও, এক বার আলোচনায় অন্তত বসো। কথা বলতে অসুবিধা কী! ও যদি অধিনায়কত্ব না করতে চাইত, তা হলে কি জোর করে খেলাতে পারতাম!”
তামিমের বিশ্বকাপে দলে না থাকার পিছনে কি বোর্ড প্রধানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও দায়ী? তামিমকে না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ নাফিস ইকবাল। তিনি বাংলাদেশের লজিসটিক্স (যাতায়াত, হোটেল এবং অন্যান্য ব্যবস্থা) ম্যানেজার, সম্পর্কে তামিমের দাদা। বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের খবর, তামিম দলে সুযোগ না পাওয়ায় পদত্যাগ করেছেন নাফিস। তামিম যদি চোটের কারণে খেলতে না পারতেন, তা হলে তাঁর দাদার এমন পদত্যাগের কারণ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তামিমকে কি তা হলে অন্য কোনও কারণে বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়নি? ২৪৩টি এক দিনের ম্যাচে ৮৩৫৭ রান করেছেন তামিম। ১৪টি শতরান রয়েছে তাঁর। এমন অভিজ্ঞ এক জন ক্রিকেটারকে কেন বাদ দেওয়া হল? আর যদি বিশ্বকাপেই খেলানো হবে না, তা হলে অবসর থেকে ফেরানো হল কেন? প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু উত্তর অজানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy