যশপ্রীত বুমরা। —ফাইল চিত্র।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যশপ্রীত বুমরা। রোহিত শর্মা অসুস্থ থাকায় এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি টেস্টে বুমরাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল। সেই ম্যাচে ভারত হেরেছিল। এ বার প্রথম ম্যাচে জিতেছে ভারত। মাত্র একটি ম্যাচের অভিজ্ঞতা থাকলেও বুমরাকে সাবলীল ভাবেই নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, ক্রিকেটে বোলারদের অধিনায়কত্ব করতে প্রায় দেখাই যায় না। অনিল কুম্বলের পরে ভারতকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হল বোলার-অধিনায়ক পেতে। যুগ যুগ ধরে কেন বোলার-অধিনায়কের সংখ্যা প্রায় হাতেগোনা, কারণ খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।
ক্রিকেটকে বলা হয় ব্যাটারদের খেলা। যত দিন যাচ্ছে, তাদের জন্যই সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ ওঠে। এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে শুরু থেকে দু’টি নতুন বলে খেলা হওয়ায় বোলারদের ক্ষমতা আরও কমে গিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই অধিনায়ক হিসাবে বোলারদের পিছিয়ে রাখার একটা প্রবণতা চলে আসছে। যদিও সুযোগ পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে ভাঙা দলকে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন কোর্টনি ওয়ালস, অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজ় জেতান প্যাট কামিন্স। তবুও বছরের পর বছর ধরে অধিনায়ক হিসাবে দলের সেরা ব্যাটারের দিকেই নজর যায় নির্বাচকদের। বোলারদের প্রতি এমন মনোভাবের কারণ কী?
প্রচলিত মত, পেসার মানেই তিনি প্রচণ্ড গতিতে বল করবেন। ভাবার কোনও ক্ষমতা নেই তাঁর। গায়ের জোরে বল করাই তাঁর একমাত্র কাজ। তাই তেমন এক জনকে দলের দায়িত্ব দেওয়ার কথা সাধারণত ভাবা হয় না। হয়তো একই দলে পড়ে অধিনায়ক হওয়ার দৌড় থেকে বাদ পড়ে যান স্পিনাররাও। বাংলার প্রাক্তন পেসার শিবশঙ্কর পাল এটা মানতে চাইলেন না। তিনি মনে করেন, অধিনায়ক হিসাবে বোলারেরাই বেশি সফল হতে পারেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “বোলারদের অনেক বেশি পরিকল্পনা করতে হয়। কী করে এক জন ব্যাটারকে আউট করা যাবে, সেটা নিয়ে তাকে ভাবতে হয়। এক জন ব্যাটার কী ভাবছে সেটা বুঝতে হয়। অধিনায়কও তো সেটাই করে। অনেক বোলার কিন্তু অধিনায়ক হিসাবে সফলও হয়েছে। কিন্তু একটা ধারণা হয়ে রয়েছে যে বোলারেরা অধিনায়ক হিসাবে ভাল নয়। সেই কারণেই মনে হয় বোলারদের অধিনায়ক করা হয় না।”
একটা দলকে নেতৃত্ব দিতে হলে এক জন ক্রিকেটারের মধ্যে কিছু বাড়তি গুণ থাকা প্রয়োজন। তাঁর মধ্যে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োজন। মাঠে কী হতে পারে তার আগাম আন্দাজ পাওয়া প্রয়োজন। দলের ভরসার পাত্র হতে হবে তাঁকে। দলের সকলের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে, না হলে দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে সেরাটা বার করে আনা যায় না। এই গুণ যদি কোনও বোলারের মধ্যে থাকে, তা হলে কেন তাঁকে অধিনায়ক করা হবে না? বাংলার এক প্রাক্তন পেসার (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক) বললেন, “পেসারদের বুদ্ধি কম বলে মনে করা হয়। তারা আসবে, গায়ের জোরে বল করবে, চলে যাবে। বুদ্ধি নাকি সব সময় ব্যাটারদেরই থাকে। অনূর্ধ্ব-১৩ দল থেকেই অধিনায়ক বাছার প্রচলিত ধরন হচ্ছে, দলের সেরা ব্যাটারকে অধিনায়ক করে দাও। সহকারী অধিনায়ক করা হয় দ্বিতীয় সেরা ব্যাটারকে। ফলে কোনও বোলার অধিনায়ক হিসাবে তৈরিই হয় না। আমার মতে যদি ব্যাটার অধিনায়ক হয়, তাহলে সহ-অধিনায়ক এক জন বোলারের হওয়া উচিত।”
অন্য মতও রয়েছে। অধিনায়ক মানেই তাঁর কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব। এমন অবস্থায় কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি নিজে বাড়তি ওভার বল করে ফেলতে পারেন বলে মনে করছেন বাংলার রঞ্জিজয়ী দলের স্পিনার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি মনে করেন ব্যাটার অধিনায়ক হলে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। ভারতের হয়ে খেলা শরদিন্দু বললেন, “বোলার অধিনায়ক হলে দুটো জিনিস হতে পারে। হয় সে বোলার খুব বেশি ওভার বল করে না, নয়তো অনেক বেশি ওভার বল করে ফেলে। এক জন ব্যাটার অধিনায়ক হলে এই ‘সুযোগ’ তার নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে অনেক বোলার-অধিনায়ক আছেন যাঁরা সফল হয়েছেন। ভারতে বিষেণ সিংহ বেদী, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ওয়ালশ, পাকিস্তানের ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস যথেষ্ট সফল অধিনায়ক ছিলেন।”
নিউ জ়িল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরি, ইংল্যান্ডের বব উইলিস, ভারতে অনিল কুম্বলেও দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যার আধিক্যে ব্যাটারেরাই এগিয়ে। অলরাউন্ডার কপিল দেব, ইমরান খানের মতো অধিনায়কদের বোলারের তালিকায় রাখা উচিত হবে না। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বাংলার সেই পেসার বললেন, “কত বোলার আছেন, যাঁদের অধিনায়ক হিসাবে ভাবাই হয়নি। পরবর্তী সময়ে তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, সুযোগ দিলে তাঁরাও দলকে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। আইপিএলে জাহির খানকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল। শেন ওয়ার্ন রাজস্থান রয়্যালসকে ট্রফি জিতিয়েছিলেন অধিনায়ক হিসাবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এক জন বোলার কোচ হলেই তাঁকে সাধারণত বোলিং কোচ করে দেওয়া হয়। অথচ, এক জন পেসার প্রধান কোচ হলে দলকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, তার সেরা উদাহরণ আশিস নেহরা। গুজরাত টাইটান্স সম্পূর্ণ নতুন একটা দল। তাদের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করে দিলেন নেহরা। এই বছর রানার্স হয়েছে গুজরাত। আশা করি ভবিষ্যতে বোলার অধিনায়ক আরও বেশি দেখতে পাব।”
কামিন্স, বুমরার মতো বোলার-অধিনায়ক আগামী দিনে আরও বেশি দেখা যেতে পারে। কিন্তু ক্রিকেট শুধু ব্যাটারদের খেলা, এই ধারণা আগে ভাঙা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy