কপিলদের সঙ্গে লতা ফাইল ছবি
১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথম বার বিশ্বকাপ জেতে ভারত। গোটা দেশ যখন এই ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দে উদ্বেল, তখন অন্য সমস্যায় পড়েছিলেন বিসিসিআই-এর তৎকালীন সভাপতি তথা ইন্দিরা গাঁধীর মন্ত্রীসভার সদস্য এনকেপি সালভে।
তখনও ক্রিকেট খেলে সে ভাবে টাকা রোজগার করা যেত না। ভারতীয় ক্রিকেটের বাণিজ্যিকরণ শুরু হয়নি। জগমোহন ডালমিয়ার আসতে ঢের দেরি। কিন্তু এত সাফল্যের পরেও ক্রিকেটারদের হাতে ২০ পাউন্ডের বেশি তুলে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না বোর্ডের। অথচ, তারা চাইছিল ক্রিকেটারদের হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দিতে।
এ সময় সালভে শরণাপন্ন হন ভারতীয় ক্রিকেটের এনসাইক্লোপিডিয়া রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের। সমস্যার কথা তাঁর কাছে খুলে বলে সমাধান চান। ভারতীয় ক্রিকেটে ‘রাজ ভাই’ নামে পরিচিত দুঙ্গারপুরের সামনে তখন একটাই রাস্তা ছিল, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ক্রিকেটের অন্যতম সমর্থক লতা মঙ্গেশকরকে একটি কনসার্ট করতে রাজি করানো।
প্রস্তাব পাওয়া মাত্র লতা রাজি হয়ে যান। দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে লতার দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ঠাসা ভিড় ছিল। বোর্ডের হাতে যথেষ্ট টাকা উঠে আসে। এরপর প্রত্যেক ক্রিকেটারের হাতে এক লক্ষ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটার সুনীল ভালসন সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “তখনকার দিনে টাকার অঙ্ক খুবই কম ছিল। সফরের সময় দেওয়া টাকা এবং দৈনিক ভাতা এক মাস ধরে বাঁচিয়েও ৬০ হাজারের বেশি হচ্ছিল না।”
সুনীলের সংযোজন, “তখন কেউ কেউ আমাদের বলত, তোমাদের ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকা দিচ্ছি। সম্মানে আঘাত লাগত সে সব শুনে। এরপরেই লতাজি অনুষ্ঠান করেন। কী অসাধারণ ছিল সেই অনুষ্ঠান! ওঁকে সামনে থেকে দেখা সেরা অনুষ্ঠান ছিল সেটা।’
ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে সেই সময়ে লতা যে কাজ করেছিলেন, তাঁকে কখনও ভোলেনি বোর্ড বা দুঙ্গারপুর। তারপর থেকে ভারত যখনই দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলত, দু’টি টিকিট আলাদা করে রাখা থাকত লতার জন্য। ’৬০ থেকে ’৮০-র দশকে দেশের মাটিতে কোনও ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে লতা আসতেনই। ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরকে নিয়ে টেস্ট ম্যাচ দেখতে যেতেন। প্রচণ্ড ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও ’৭০-এর দশকে একটি ম্যাচও মিস করেননি তিনি। দুঙ্গারপুর এবং মুম্বইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার মাধব আপ্তের সঙ্গে বসতেন।
সেই সময়ে চেন্নাইয়ে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে লতার স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার ভিডিয়ো এখনও নেটমাধ্যমে রয়েছে। সুনীল গাওস্কর, দিলীপ বেঙ্গসরকর এবং সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল লতার। ক্রিকেট নিয়ে গভীর আলোচনাতেও অংশ নিতে তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy