সাফল্য পেতে মানসিকতার বদল চান নুরুল। ছবি: টুইটার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এশিয়া কাপেও সব ম্যাচ হেরেছে শাকিব আল হাসানের দল। টানা ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কেমন হতে পারে দলের পারফরম্যান্স? তা নিয়ে মুখ খুলেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি হিসাবে নিউজ়িল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ় খেলছে বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতার তৃতীয় দল পাকিস্তান। এই প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নুরুল। যদিও শাকিব দলের সঙ্গে যোগ দিলে তিনিই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাবেন। তা নিয়ে আক্ষেপ নেই নুরুলের। বরং তাঁর মতে শাকিব নেতৃত্ব দিলেই বেশি ভাল। বাংলাদেশ ক্রিকেটে নুরুল বরাবরই ‘টিম ম্যান’ হিসাবে পরিচিত। দলই তাঁর কাছে প্রথম।
চলতি বছর কয়েকটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নুরুল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, ব্যর্থতার মূল কারণ মানসিকতার সমস্যা। সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার জন্য যা অত্যন্ত জরুরি। নুরুলের মতে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সাফল্য নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। ভয় পান। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে এই মানসিকতা। যা ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। নুরুল বলেছেন, ‘‘আমরা নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলি না। নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলি না। ব্যর্থতার ভয় কাজ করে আমাদের মধ্যে। যদি বলি আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই, তার মানে আমাদের বিশ্বকাপ জিততেই হবে তেমন নয়। কিন্তু আমরা নিজেদের লক্ষ্যের কথা বার বার বললে পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে। আমরা হয়তো তখন দলে থাকব না। কিন্তু আমাদের তৈরি করে যাওয়া বিশ্বাস ওদের সঙ্গে থাকবে।’’
আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন নুরুল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চললে হবে না। আমাদের নতুন সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। ভাল খেলতে না পারলে সমালোচনার জন্য তৈরি থাকতে হবে। তবু আমাদের সাফল্য নিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার। নিজেদের বিশ্বাস করা দরকার। আমাদের তিন-চার জন সেরা ছন্দে থাকলেই বাংলাদেশ ভাল ফল করতে পারে।’’
নেতৃত্ব নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত নন নুরুল। এ নিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না এটা দারুণ উচ্ছ্বাসের কিছু। যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনের একটা বিষয় অবশ্য থাকে। চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। যদিও সেটা নিয়ে বেশি ভাবতে পছন্দ করি না। আবেগ দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা হয় না। নিজের হাতে মোকাবিলা করতে হয়। সামনে যেমন চ্যালেঞ্জই আসুক, উপভোগ করতে চাই।’’
নুরুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আসার সময় বেশ আবেগপ্রবণ ছিলেন। এখন অনেক পরিণত তিনি। শট মারার সময় কেমন দেখতে লাগছে তা নিয়ে এখন আর ভাবেন না। শটের ফলাফলই এখন তাঁর কাছে আসল। নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও বিশেষ মাথা ঘামান না। নুরুল বলেছেন, ‘‘যদি একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেই সব সময় ব্যাট করার কথা ভাবি, তা হলে সেটা দলের জন্য ভাল না-ও হতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী নমনীয় থাকা, পরিবর্তন করা জরুরি। এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া দরকার। আমি ২০০ শতাংশ বিশ্বাস করি, এটা দলগত খেলা। অন্য রকম ভাবলে ভাল ফল সম্ভব নয়।’’ বেশি রান করার থেকে কার্যকর ব্যাটিং চান নুরুল। রান যাই হোক, সেটা দলের জয়ে অবদান রাখতে পারছে কি না সেটাই আসল। রান করলাম অথচ দল হারল, তাতে লাভ হয় না। ধরুন একটা ছয় মারলাম, তার পর তিনটে বলে রান করতে পারলাম না। তাতে কি রান বেশি হয়? বরং একটা চার মারলাম, তার পরের তিনটে বলে এক বা দু’রান করে হল তাতেই লাভ বেশি দলের। শুধু বড় শট মারলেই জেতা যায় না। ফিল্ডিংয়ের ফাঁক খুঁজে নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে রান করতে পারলে অনেক বেশি কার্যকরী হয়। নিজেদের শক্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সে ভাবে খেলা দরকার।’’
নুরুলের বক্তব্য, প্রতিপক্ষের বোলাররা সবসময় ব্যাটারের দুর্বল জায়গাতেই বল করতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। কোনও বোলারই চায় না ব্যাটাররা তাকে চার-ছয় মারুক। এ নিয়ে বলেছেন, ‘‘ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে হয়। বড় শট মারতে না পারলেও স্কোর বোর্ড সচল রাখা দরকার। এখনই নিজের ব্যাটিংয়ে কোনও পরিবর্তন করতে চাই না। কঠোর পরিশ্রম করছি। নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। যাতে দল আরও বেশি উপকৃত হয় আমার থেকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy