সংসার চালাতে পারছেন না কাম্বলি। ছবি: টুইটার।
নিজের রোজগার কিছু নেই। ভরসা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ৩০ হাজার টাকার মাসিক পেনশন। আয় বলতে এটুকুই। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই টাকায় সংসার চালাতে পারছেন না। একটা কাজ খুঁজছেন বিনোদ কাম্বলি।
২০১৯ সালে মুম্বই টি-টোয়েন্টি লিগে একটি দলের কোচ ছিলেন। তার পর আর কোনও কাজ পাননি। সম্পূর্ণ বেকার। কোভিড অতিমারির পর থেকে আর্থিক কষ্ট সঙ্গী প্রাক্তন ক্রিকেটারের। অনেক দিন ধরে একটা কাজ খুঁজছেন কাম্বলি। ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন, এমন কাজই তাঁর পছন্দ।
ক্রিকেট মহলে কাম্বলির আরও একটা পরিচিতি রয়েছে। তিনি সচিন তেন্ডুলকরের বাল্যবন্ধু। মুম্বইয়ের সারদাশ্রম স্কুল থেকে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব এগিয়েছিল ভারতীয় দলের সাজঘর পর্যন্ত। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে কখনও নির্দিষ্ট কোনও কাজ করেননি কাম্বলি। মুখ ফিরিয়ে থাকেননি সচিন। এক সময় প্রিয় বন্ধুকে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। নিজের তেন্ডুলকর মিডলসেক্স গ্লোবাল অ্যাকাডেমিতে তরুণ ক্রিকেটারদের মেন্টর হিসাবে নিয়োগ করেন কাম্বলিকে।
সচিনের অ্যাকাডেমি নবি মুম্বইয়ের নেরুলে। কাম্বলির বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এত দূরের অ্যাকাডেমিতে গিয়ে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল ৫০ বছরের প্রাক্তন ক্রিকেটারের। তাই সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তার পর থেকে নির্দিষ্ট কোনও আয় নেই তাঁর। কাম্বলি বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় উঠতে হত। ক্যাব নিয়ে পৌঁছতে হত ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে। আবার বিকালে বিকেসি মাঠে কোচিং করাতাম। এত ধকল নিতে পারছিলাম না।’’
এখন কী ভাবে চলে তাঁর সংসার? কাম্বলি বলেছেন, ‘‘আমি প্রাক্তন ক্রিকেটার। বোর্ডের পেনশনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। এটাই আমার একমাত্র আয়। তাতেই সংসার চালাতে হয়। বোর্ডের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’ অন্য কাজের চেষ্টা করেননি কেন? কাম্বলি বলেছেন, ‘‘মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব, এমন কোনও কাজ দিতে অনুরোধ করেছিলাম। আমাকে ক্রিকেট উন্নয়ন কমিটির সদস্য করা হয়। কিন্তু এই পদটা সাম্মানিক। নিজের সমস্যার কথা অনেক বার জানিয়েছি এমসিএ কর্তাদের। আমাকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বা অন্য অ্যাকাডেমিতে ব্যবহার করার কথা বলেছি। ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত অন্য কাজও হতে পারে, যা থেকে আয়ের সুযোগ থাকবে।’’ কাম্বলি আরও বলেছেন, ‘‘মুম্বই ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ক্রিকেটের জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করেছি। কিন্তু অবসর জীবন প্রায় ক্রিকেটহীন। কেউ সক্রিয় থাকতে চাইলে তার কাজ দরকার। এমসিএকে সেই অনুরোধই করেছিলাম। সভাপতি এবং সচিবের সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু তেমন আশ্বাস পাইনি।’’
আর্থিক দুরবস্থার কথা কি সচিন জানেন না? কাম্বলি বলেছেন, ‘‘সচিন আমার প্রিয় বন্ধু। ও সব জানে। আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি সচিনের কাছে কখনও কিছু চাই না। ওর কাছে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। সচিন আমাকে ওর অ্যাকাডেমিতে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। দূরত্বের সমস্যার জন্য নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’
কাম্বলি চান মুম্বইয়ের ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে। প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেছেন, ‘‘আমার কাজ চাই। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতে পারব, এমন কাজ চাইছি। মুম্বই ক্রিকেটের জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত। অমল মুজুমদার এখন মুম্বই দলের কোচ। প্রয়োজনে আমি যে কোনও সাহায্য করতে প্রস্তুত। অমলের সঙ্গে বহু দিন খেলেছি। আমাদের দলটা দারুণ ছিল। এখনকার দলটাকেও সে ভাবে খেলতে দেখতে চাই।’’
দেশের হয়ে ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি এক দিনের ম্যাচ খেলা কাম্বলির চোখ এখন মুম্বই দলের দিকে। কোচের চাকরি না হোক, সহকারী কোচ হতে পারলেও খুশি তিনি। আর্থিক সমস্যা মেটাতে সচিন নন কাম্বলি এখন তাকিয়ে অমলের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy