Advertisement
E-Paper

ছয় ম্যাচে পাঁচ শতরান, গড় ৬৬৪! নায়ারের ‘নিখুঁত টাইমিং’ চাপ বৃদ্ধি করল রোহিতের

প্রথম টেস্ট সিরিজ়ে অপরাজিত ৩০৩ রানের ইনিংস। নজর কেড়েও ভারতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন নায়ার। আট বছর পর নজির গড়ে তিনিই আবার আলোচনার কেন্দ্রে।

Picture of Karun Nayar

করুণ নায়ার। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৮
Share
Save

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চেন্নাই টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন করুণ নায়ার। আলোচনায় উঠে আসা ব্যাটার ধারাবাহিকতার অভাবে ভারতীয় দল থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আবার তিনি উঠে এলেন আলোচনায়। বিজয় হজারে ট্রফিতে তাঁর নজির গড়া পারফরম্যান্স উপেক্ষা করা কঠিন হবে জাতীয় নির্বাচকদের পক্ষে।

৩৩ বছরের ব্যাটার এ বারের বিজয় হজারে ট্রফিতে (৫০ ওভারের ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতা) পাঁচটি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। গত মরসুমে নারায়ণ জগদীশনও পাঁচটি শতরান করেছিলেন। বিজয় হজারে ট্রফির এক মরসুমে সব চেয়ে বেশি শতরানের নজির এখন যুগ্ম ভাবে জগদীশন এবং নায়ারের দখলে। শেষ ছ’টি ম্যাচে নায়ারের রান যথাক্রমে অপরাজিত ১১২, অপরাজিত ৪৪, অপরাজিত ১৬৩, অপরাজিত ১১১, ১১২ এবং অপরাজিত ১২২। সব মিলিয়ে সাতটি ম্যাচে তাঁর রান ৬৬৪, গড়ও ৬৬৪। মিজ়োরামের বিরুদ্ধে ব্যাট করেননি তিনি। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও হবে এক দিনের ক্রিকেট ফরম্যাটে। স্বভাবতই ভারতীয় দলে নায়ারের নাম থাকতে পারে।

ভারতের হয়ে ছ’টি টেস্ট এবং দু’টি এক দিনের ম্যাচ খেলা নায়ার এক সময় কর্নাটক দল থেকেও ছিটকে গিয়েছিলেন টানা ব্যর্থতার জেরে। পরে বিদর্ভের কর্তারা তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন। নতুন দলের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করে দলে জায়গা পাকা করেছেন। এখন তিনিই বিদর্ভের অধিনায়ক।

ভারতের হয়ে খেলার পরও একটা সময় ক্রিকেটজীবন এক রকম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল নায়ারের। তা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘একটা সময় ছ’সাত মাস কোনও ক্রিকেট খেলিনি। শুধু নেটে অনুশীলন করার জন্য প্রতি দিন তিন ঘণ্টার রাস্তা যেতাম। আর কোনও উপায় ছিল না। বিশেষ কোনও ধরনের ক্রিকেট নিয়ে ভাবার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। কঠোর পরিশ্রম করতাম। কর্নাটক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দলটার সঙ্গে আমার একটা আবেগের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সামনে তাকানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় দু’মাস সময় লেগেছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই সময় নিজেকে তৈরি করছিলাম। সুযোগ পেলে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। দল থেকে বাদ পড়ার জন্য কোনও অজুহাত দিতে চাই না। আমাকে ধারাবাহিক ভাবে রান করতে হত। ফর্মে ফেরার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতাম।’’

নায়ার এখন সেই পরিশ্রমের ফল পাচ্ছেন, যা তাঁকে আবার ভারতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। শেষ ছ’ম্যাচে পাঁচটি শতরান করা ব্যাটারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পাওয়া নির্ভর করবে অজিত আগরকরদের উপর। নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর নায়ার আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা ক্রিকেট খেলি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন নিয়ে। আমার লক্ষ্যও আলাদা নয়। আবার টেস্ট খেলতে চাই। নিজের দক্ষতার উপর আস্থা রয়েছে আমার। বিশ্বাস করি আবার টেস্ট খেলতে পারব।’’

প্রথম টেস্ট সিরিজ়ে ত্রিশতরান করা নায়ারের চোখ সেই লাল বলের ক্রিকেটে। সাদা বলের ক্রিকেটে নজির গড়েও তাঁর ভাবনায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নেই। ২০১৭ সালের মার্চের পর ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ হয়নি নায়ারের। দেশের হয়ে দু’টি এক দিনের ম্যাচে করেন ৭ এবং ৩৯ রান। ছ’টি টেস্টের সাতটি ইনিংসে তাঁর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ২৬। ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে ত্রিশতরান করেও জায়গা পাকা করতে পারেননি।

ধারাবাহিকতার অভাব নায়ারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দূরে সরিয়ে দিয়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও। তবু নিজেকে প্রমাণ করার অদম্য জেদ নিয়ে আবার ফিরে এসেছেন। নায়ার চাইছেন টেস্ট খেলতে। ভারতের পরের টেস্ট সিরিজ় আগামী জুন মাসে ইংল্যান্ডের মাটিতে। সাদা বলের ক্রিকেটে পারফর্ম করে কি লাল বলের ক্রিকেটের দলে সুযোগ পাবেন? আগামী পাঁচ মাস ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন? রঞ্জি ট্রফির বাকি ম্যাচগুলিতে বড় রানের ইনিংস খেলে দাবি জোরালো করতে পারবেন? বহু প্রশ্নের উত্তর মিললে হয়তো আট বছর পর দেশের জার্সি পরার সুযোগ পাবেন। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন নায়ার, যা আবার ভাইরাল হয়েছে। সেই পোস্টে নায়ার লিখেছিলেন, ‘‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।’’

সুযোগের প্রার্থনা করে হাতগুটিয়ে বসে থাকেননি। কপালের উপর ছেড়ে দেননি নিজের ভবিষ্যৎ। বরং ক্রিকেটকে আরও আঁকড়ে ধরে আগলে রেখেছেন। বাড়তি পরিশ্রম করেছেন। ব্যাট-বলের সখ্যতা বৃদ্ধি করেছেন। নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতে ঘর, শহর, রাজ্য ছেড়েছেন। সব করেছেন জাতীয় দলের জার্সি ফিরে পাওয়ার জন্য।

২০১৭ সালে ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ যে টেস্টটি খেলেছিলেন নায়ার, সেই ম্যাচে ভারতের প্রথম একাদশে ছিলেন না বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। গত ৫ জানুয়ারি শেষ হওয়া বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে রান পাননি বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। দু’জনেরই টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। রোহিতকে তো প্রথম একাদশেই চাইছেন না কোচ গৌতম গম্ভীর। পরের টেস্ট সিরিজ়ের ভারতীয় দলে বড় রদবদলের সম্ভাবনা থাকছেই। কারণ লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে খুশি নন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তারাও।

নায়ারের প্রার্থনা শুনে ক্রিকেট ঈশ্বর তাঁকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। রান এবং ধারাবাহিকতা দুই-ই ফিরে পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। ক্রিকেটে টাইমিংয়ের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। ব্যাটারদের ক্ষেত্রে তো বটেই। নায়ার কি রোহিতের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিলেন?

Karun Nair Vidarbha Rohit Sharma Vijay Hazare trophy test cricket

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।