প্রত্যয়ী: বৈচিত্র বাড়ানোর জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন বরুণ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভাবা হয়েছিল, বিস্ময়-স্পিনারের ঘূর্ণির সামনে মুখ থুবড়ে পড়বে বিপক্ষ। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ থেকেই ব্যর্থতা গ্রাস করে তাঁকে। একটিও উইকেট না পেয়ে প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করেন সিভি বরুণ। আইপিএলে সফল হওয়ার পরে যতটা বন্দিত হয়েছিলেন সমর্থকদের কাছে, তার দ্বিগুণ নিন্দিত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। তাঁকে নিয়ে কটূ মন্তব্যে ছেয়ে যায় গণমাধ্যম।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে মন খারাপ করে দেশে ফেরেন বরুণ। সেই সময় পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রী নেহা ও বন্ধুদের। বরুণের মনোবল ফেরাতে বাড়িতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানান স্ত্রী। তবুও আগের মতো হাসিখুশি হতে পারছিলেন না বরুণ। দেশের জার্সিতে ব্যর্থতার ছবি বারবার ফিরে আসছিল তাঁর ঘুমের মধ্যেও।
বরুণ ভাবতেই পারেননি, এ বারের নিলামে তাঁকে উঠতে হবে না। নিলামের দেড় মাস আগেই কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে আট কোটি টাকায় রেখে দেবে, কল্পনাও করতে পারেননি বিস্ময় স্পিনার। বুধবার সকালে আনন্দবাজারকে ফোনে বরুণ বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পরে কিছুই ভাল লাগত না। জীবনের প্রথম বড় প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে পারফর্ম করতে পারব না, এটা কখনওই মানতে পারিনি। ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরা। আজ যে নায়ক, কাল সে-ই হারের অন্যতম কারণ।’’ যোগ করেন, ‘‘পাকিস্তান ম্যাচের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম ওপেনিং জুটি অন্তত আমরা ভাঙতে পারব, তার পর থেকে চাপ সৃষ্টি করব। এখনও সেই হারের ক্ষত তরতাজা।’’ ব্যর্থতার পরে গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যে রকমের বিদ্রুপ করা হয়েছে, সেটাও মেনে নিতে পারেননি বরুণ। বলছিলেন, ‘‘সাধারণত গণমাধ্যমের মন্তব্যে নজর রাখি না। কিন্তু একজন ব্যর্থ হয়ে তাঁকে নিয়ে এতটাও বিদ্রুপ করা কি উচিত? আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও ভুল-ত্রুটি হতে পারে। গণমাধ্যমে আমাদের নিয়ে রসিকতা অনেকেই করেন। তাই বলে বিদ্রুপটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’কেকেআর যে তাঁকে দলে রাখতে চায়, তার ইঙ্গিত কয়েক দিন আগেই পেয়েছিলেন বরুণ। নাইট জার্সিতে ৩১ ম্যাচে ৩৬ উইকেটের মালিক বলছিলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই আমার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, কেকেআর এ বারও আমার উপরে ভরসা রাখছে। তখনও অবশ্য বলা হয়নি যে আমি থাকছি। বলা হয়েছিল, আমি টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে আছি।’’ আট কোটিতে নাইট সংসারে থাকা বরুণ এখন অনেকটাই স্বস্তিতে। তাঁর কথায়, ‘‘কেকেআর জার্সি পরেই এত দূর পৌঁছতে পেরেছি, ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলতে পেরেছি। নাইটদের হয়ে আরও এক বার খেলার সুযোগ পাব ভেবেই ভাল লাগছে। এ বার আইপিএল হতে পারে ভারতে। ইডেনে নাইট জার্সিতে খেলার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাই। রাসেল, নারাইনরা বলেছে, গ্যালারির একটি আসনও ফাঁকা থাকে না। ইডেন জুড়ে কেকেআর ধ্বনি শোনার
অপেক্ষায় রয়েছি।’’
সাত রকম বল করতে পারদর্শী বরুণ চান বৈচিত্র আরও বাড়াতে। তিনি জানেন, বেশ কয়েক রকমের ডেলিভারি করতে জানলেও বল সে ভাবে ঘোরাতে পারছেন না। আগামী বছরের আইপিএলের আগে তিনি চেষ্টা করবেন বল আরও বেশি ঘোরাতে। বললেন, ‘‘ব্যাটিং-সহায়ক পিচে ছোট ঘূর্ণি বোঝা যায় না। ব্যাটাররা বলের লাইন ধরে নিয়েই মেরে দিতে পারে। ঘূর্ণির মাত্রা বাড়াতে পারলেই তাদের পরাস্ত করা সম্ভব। সেটার উপরেই বেশি জোর দিচ্ছি।’’
তামিলনাড়ুর হয়ে এ বারের বিজয় হজারে ট্রফিতে খেলছেন না বরুণ। সেই সময়টা তিনি কাজে লাগাবেন নিজের প্রস্তুতিতে। কোভিডের জন্য আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর হবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে বরুণ প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চান না। যদি তাঁর কাছে আরও একটি সুযোগ আসে, সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করবেন। ‘‘দেশের মাটিতে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পাইনি। তবে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলে জায়গা পেলে আমাকে দেখে যেন মনে না হয় যে, মানিয়ে নিতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy