কমল সিংহ। ছবি: ফেসবুক
তাঁর রক্তে ক্রিকেট। সেই রক্তেই বাসা বেঁধেছিল মারণ রোগ ক্যানসার।
উত্তরাখণ্ডের বাঁহাতি ব্যাটার কমল সিংহের লড়াই ছিল জীবনের সঙ্গে। স্বপ্নের ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে সেই লড়াইয়ে জয় পেয়েছেন কমল।
২০১৪ সাল। কমলের বয়স তখন ১৩। ঘন ঘন অসুস্থ হচ্ছিলেন কমল। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার। কমলের রক্তে দ্রুত কমছিল প্লেটলেটের সংখ্যা। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, কমল স্টেজ ‘টু’ রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত।
ছেলেকে নিয়ে তখন দিশাহারা অবস্থা তাঁর। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ভাল চিকিৎসার জন্য ৭০০ কিলোমিটার দূরে নয়ডায় নিয়ে যান ছেলেকে। প্রাক্তন সেনা কর্মীর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ছেলেকে সুস্থ করা।
বাঁচতে চেয়েছিলেন কমলও। ক্রিকেটের জন্য। নিজের রাজ্য, দেশের হয়ে খেলার জন্য। তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে ক্যানসার। জিতেছেন কমল। জিতেছে তাঁর স্বপ্ন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরাখণ্ডের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই শতরান করেন। মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেই শতরানের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ২১ বছরের তরুণকে। এখনও পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের হয়ে পাঁচটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ এবং ন’টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন কমল। ২০২০-২১ মরসুমে বিজয় হজারে ট্রফিতে তিনিই ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান শিকারি।
ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথ কতটা কঠিন ছিল, তা নিজেই জানিয়েছেন কমল। এক সাক্ষাৎকারে উত্তরাখণ্ডের ব্যাটার বলেছেন, ‘‘আমার প্লেটলেটের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছিল। বাবা ভাল চিকিৎসার জন্য দিল্লির কাছে এক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই বয়সে বুঝতাম না আমার অসুখের ভয়াবহতা। মনে করতাম আর পাঁচটা অসুখের মতোই কিছু একটা হয়েছে। সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে যাব।’’
কী ভাবে হারালেন ক্যানসারকে? কমল বলেছেন, ‘‘শুধু ভাবতাম, কবে সুস্থ হব। মাঠে ক্রিকেট খেলতে যাব। ক্রিকেট খেলার জন্য ছটফট করতাম। ভাবতাম ছ’মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাব। কিন্তু লড়াইটা কতটা কঠিন বুঝতে পারতাম না। বলতে পারেন ক্রিকেটের জন্যই সুস্থ হতে পেরেছি। কারণ, ক্রিকেট খেলেই লড়াই করার জেদ তৈরি হয়েছিল আমার মধ্যে। সেই জেদেই ক্যানসারকে হারিয়েছি। ক্রিকেট খেলার ইচ্ছের কাছেই হেরেছে ক্যানসার।’’
কমল এখন উত্তরাখণ্ড দলের নিয়মিত সদস্য। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, ভবিষ্যতে কী করব। কী আছে আমার সামনে। ভাবতাম শুধু ক্রিকেট খেলার মতো সুস্থ হতে পারলেই হবে। কত তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারব, সারাক্ষণ সেই চিন্তা করতাম। নিজের অসুস্থতা নিয়ে খুব বেশি ভাবতাম না।’’
এখন সম্পূর্ণ সুস্থ কমল চান জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে সাফল্য। রাজ্যের হয়ে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে তাঁর। আগামী লক্ষ্য দেশের হয়ে খেলা। ক্যানসারকে হারিয়ে ২২গজে ফেরা কমল আত্মবিশ্বাসী। লড়াই কঠিন হলেও জয় ছাড়া অন্য ভাবনা নেই মনে। ক্যানসার তাঁর রক্তে লড়াইয়ের বীজ বুনে দিয়েছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy